অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত, ভাঙছে মাদারীপুর রাজবাড়ী শরীয়তপুর
১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
ফরিদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মায় তীব্র ভাঙন, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ। দেখার কেউ আছে কিনা এ প্রশ্ন পদ্মাপাড়ের ভুক্তভোগীদের। ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ধলারমোড়ের কাছে পালডাডাঙ্গীতে পদ্মা তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে একরাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন দশ-বারোটি বসতবাড়ি ধসে গেছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধ তীব্র ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। যে কোনো সময় ভেঙে নদীতে চলে যাবে।
এদিকে শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন এসব বসতিরা ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকের টয়লেট ও রান্নাঘর ভাঙনে বিলীন হওয়ায় তারা নিত্যকর্মও সারতে পারছেন না। বাড়িতে রান্নাবান্না করতে না পারায় এসব পরিবার সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে স্থানীয়রা ওই ‘বালুখেকোদের’ ব্যবহৃত এক্সকেভেটর তথা ভেকু আটকে রাখেন সড়কে।
তারা এভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নদীতে বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে গিয়ে দেখা যায়, শহর রক্ষা বাঁধের সামনেই পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। আর সেখানে সরকারি বালুমহল না থাকলেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে গড়ে তোলা হয়েছে বালুর বিশাল মজুদ। উড়ছে লাখ লাখ টাকা। কেউ হচ্ছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। কেউ বাড়িঘর পথের ফকির।
স্থানীয়রা ইনকিলাবকে জানান, প্রথমে ভেকু দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালু তুলে বালুর ঢিবিতে মজুদ করা হয়। এরপর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছিলো। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভেকু দিয়ে ওই বালু ট্রাকে করে বিক্রির সময় শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় পানির ঘূর্ণি স্রোতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে মাঝরাত হতে ভোর হওয়ার আগেই আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগমের ঘরবাড়ি নদীর পানিতে ধসে যায়। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশকিছু গাছপালাও পানিতে ধসে গেছে। পালডাঙ্গী মামুনের দোকানের কাছে ভাঙন একেবারে শহর রক্ষা বাঁধ পর্যন্ত চলে এসেছে।
ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মো. হাসান মাস্টার ইনকিলাবকে বলেন, ৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় আজম ওরপে (মুরগীর ব্যবসায়ী আজম) নামে এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে। শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো হুমকি দিচ্ছেন তারা।
আফজাল শেখ ইনকিলাবকে বলেন, রাতের বেলায় ভেকু দিয়ে লেয়ার ধরে বালু তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য আমাদের ঘর-দুয়ার সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে। পায়খানা-প্রস্রাব করবো সেই কায়দাও নাই। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে।
মজনু শিকদার ইনকিলাবকে বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে দেড়শ’ ফুট জায়গা সরকারের। আমরা প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার এখানে বাড়িঘর তুলে বসবাস করি। এই সরকারি জায়গায় পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালু তুলে নিয়েছে। এ কারণে এভাবে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির ইনকিলাবকে বলেন, অনেকদিন ধরে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দিই, তারপর দুই তিনদিন হয়তো বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। তবে এইবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ধরে গেছে। আর মাত্র চার-পাঁচ ফুট ভাঙলেই শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। আর সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
অপরদিকে, এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ফরিদপুর সদর থানার ডিক্রিচর ১ ও ২ ওয়ার্ডে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া সদর থানার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭ নং ওয়ার্ডে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ৫নং ঘাট এলাকায় এবং মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চড়জানাজাত, কাঁঠাল বাড়িয়া, সন্যাসীরচর, বাঁশাকান্দি, বন্ধর খোলা, ভাঙন চলছে। মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর, মহিষেরচড়, মাদ্রা, গুনশি এলাকায়ও ভাঙন চলছে। এদিকে মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর, সেলিমপুর, কালিনগর, মোল্লারহাট এলাকাতে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। অপরদিকে, শরীয়তপুরের জাজিরা নড়িয়া উপজেলার মেঘনার তীব্র ভাঙন বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু