কোটা ইস্যুতে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই -ওবায়দুল কাদের
১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য আমাদের সংবিধানের, সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী।
সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনা সরকারি আলোকেই হবে।’ তবে কি সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ গতকাল শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সম্প্রতি এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। এর পর গত ১লা জুন থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বুধবার সকাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। আজ নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সারা দেশে কয়েক জায়গায় সংঘাত হয়। এ দিকে কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করা হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়, যাতে বলা আছে, সব কোটাই থাকতে হবে। তবে সরকার চাইলে হার পরিবর্তন করতে পারবে।
গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা- পবিত্র সংবিধানের আলোকেই কেবলমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। সেখানে আরো বলা হয়েছে, মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক অসাম্যঞ্জস্য নিরোধের জন্য নাগরিকদের মধ্যে সুষম বন্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে দুজন মাত্র। ৫০টি জেলায় নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি। সংবিধানের উল্লেখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সরকারি চাকরিসহ সকল ক্ষেত্র সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, সে জন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে কোটা সবচেয়ে কম দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা তালিকায় নিয়োগ প্রায় ৭০ শতাংশের মত। ৩৩, ৩৪, ৩৫ এই তিনটি বিসিএসে ৭২ শতাংশ প্রার্থীকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেখানে কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদগুলোতে মেধাতালিকা থেকে নেয়া হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে যেখানে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হচ্ছে, সেখানে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
কোটা বিরোধিতায় অশুভ শক্তি নেমেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে একটি কুচক্রি মহল রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়, তখন এই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত অশুভ শক্তি কোটার উপর ভর করেছিল এবং সড়কের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রুপ দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। তখন এই অশুভ শক্তির হাতে আমাদের ধানমন্ডি পার্টি অফিসও আক্রন্ত হয়েছে।’
এ দিকে পেনশন নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা দূর হয়েছে। এ স্কিমের আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই যুক্ত হবেন ২০২৫ সালের ১ জুলাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের বিষয়ে যে তথ্য ছিল, সেটা সঠিক নয়। তাদের তিনটা দাবির মধ্যে এটাও একটা দাবি। সবার মতো তারাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে পেনশন স্কিমে যোগ দেবেন, বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলো নিয়ে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আকতারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাঁপা, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় গাজার ফিলিস্তিনিরা, নিহত ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই
এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার