জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও কাজ হোক আখেরাতমুখী
১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
মুমিন জীবনের ছোট থেকে ছোট যে কোনো মহৎ কাজ যেন হয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে প্রতিদান লাভের আশায়। একজন মুমিন জীবনের যে মুহূর্তগুলো নামায, রোযা ও হজ্বের মতো খালেস ইবাদতে, অর্থ উপার্জনের মতো প্রয়োজনীয় কাজে, পানাহার, ঘুম ইত্যাদি যেকোনো প্রয়োজন পূরণে এবং শারীরিক ব্যায়ামের মতো ক্ষেত্রে ব্যয় করে, তাতে যদি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিয়ত ও সুন্নাহ অনুসরণ করা হয়, তা আখেরাতের কাজ ও সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয়।
পক্ষান্তরে, খালেস ইবাদতেও যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য না হয়ে লৌকিকতা কিংবা দুনিয়ার মোহের মিশ্রণ ঘটে, তখন খালেস ইবাদতেও কোনো নেকী লাভ হয় না; বরং রিয়া বা লৌকিকতার গুনাহ হয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : নিয়তের ওপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোনো নারীকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করবে, সেই হিজরত তার নিয়ত অনুসারেই হবে, যে নিয়তে সে হিজরত করেছে। (সুনানে আবু দাউদ : ২২০১)।
একজন মুমিন পরিবারের প্রধান হিসেবে যে ব্যয়ভার বহন করে থাকে সেটাও হতে পারে সওয়াব হাসিলের মাধ্যম। এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তুমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করে যা কিছুই খরচ করো এর বিনিময় লাভ করবে। এমনকি তুমি যে লোকমাটি স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তার জন্যও। (সহীহ মুসলিম : ১৬২৮)।
মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত আখেরাতমুখী ও সওয়াব হাসিলের মাধ্যম হওয়ার ব্যাপারে এই হাদিসটি অত্যন্ত পরিষ্কার। একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ধনী সাহাবীদের মতোই ইবাদত করি। কিন্তু ধনী সাহাবীরা দানও করে, যা আমাদের মতো অস্বচ্ছলদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে তারা আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াব লাভ করছে।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীকে বললেন, আল্লাহ তাআলা কি তোমাদেরকে সদকা করার মতো কিছুই দান করেননি? তিনি তো প্রতিবার তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার বলায়, প্রতিবার আলহামদু লিল্লাহ বলায়, সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে নিষেধে এবং সহবাসেও সদকাসম সওয়াব দান করেন। (সহীহ মুসলিম : ১০০৬)।
ইসলামে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রতিটি অঙ্গন আখেরাতমুখী। রাষ্ট্রচিন্তা, সামাজিকতা, অর্থবিত্ত উপার্জন, স্বভাবসিদ্ধ যাবতীয় কর্ম, মোটকথা মানব জীবনের সমগ্র বিষয় আখেরাতমুখী। এমনকি মুমিনের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যাধিও হতে পারে সওয়াব হাসিলের মাধ্যম। শুধু প্রয়োজন মানসিকতা, সহীহ নিয়ত, চিন্তা ও কর্মের পদ্ধতিগত পরিবর্তন।
সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের বিষয়টি চমৎকার। তাঁর প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য এই ব্যাপার নেই। যদি আনন্দ পেয়ে কৃতজ্ঞ হয়, এটা তাঁর জন্য কল্যাণকর। আর যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধৈর্য ধরে এটাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম : ২৯৯৯)। বিপদ, দুঃখ ও দুর্দশার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা ও যাচাই করেন যে, তাঁর কোন্ বান্দা সবচেয়ে ভালোভাবে তাঁর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ফলে বিপদ ও দুঃখ-দুর্দশায় আক্রান্ত হওয়ার পর অধৈর্য ও হতাশাগ্রস্ত হওয়া, আল্লাহ তাআলাকে ভুলে যাওয়া এবং ‘এটা হলে এটা হত’ এমন অনর্থক প্রলাপ ও চিন্তা-ভাবনা উচিত নয়।
সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে : আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনো) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনো) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনো) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, ‘আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হেদায়েতের ওপর। (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : কোনো মুসলিম বিপদে আক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার আদিষ্ট দুআ : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি ওয়া রাজিউন’। (আমরা তো আল্লাহর, আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।) পাঠ করে এবং সাথে এই দুআ পাঠ করে : ‘ইয়া আল্লাহ, আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দান করুন এবং আমাকে এরচেয়ে উত্তম বিকল্প দান করুন।’ তখন আল্লাহ তাকে এরচেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন। (সহীহ মুসলিম : ৯১৮)।
মুমিনের প্রতিটি কাজকে এভাবে আল্লাহমুখী ও উভয় জাহানে অর্থবহ করার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি কাজ স্বভাবসিদ্ধ, শরীয়ত মোতাবেক এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহসম্মত হওয়া। প্রতিটি কাজের পূর্বে নিয়ত পরিশুদ্ধ করা এবং নির্ধারিত মা’সূর দুআ পাঠ করা। প্রতিটি মুহূর্ত যেন হয় আল্লাহ তাআলার যিকির, ভয় ও তাকওয়ায় পরিপূর্ণ। সকাল ও সন্ধ্যায় জীবনের এমন সকল মুহূর্ত ও কাজই নিয়ত ও উপলব্ধির বিশুদ্ধতার মাধ্যমে নেক আমল হতে পারে। মোটকথা, মুমিনের জীবনে দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝে বিভাজন নেই; বরং মুমিনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার জন্য, আখেরাতের জন্য।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭