কুড়িগ্রাম টাঙ্গাইলে বন্যার পানি কমছে
১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। ক্ষেতের মাচান থাকলেও নেই সবুজ গাছ। পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে পাট, পটল, আমন বীজতলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। দ্বিতীয় দফায় দীর্ঘ স্থানীয় বন্যায় জেলার ৯ উপজেলায় শুধুমাত্র কৃষিতেই ক্ষতি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলার ৯ উপজেলায় শুধুমাত্র কৃষিতে ৮ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। অপরদিকে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে গ্রামাঞ্চলের কাঁচা পাকা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করছে মানুষজন। এসব গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক ও ঘর বাড়ির ক্ষতি নিরুপণে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট দফতর। কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের গারুহারা এলাকার কৃষক কোবাদ আলী বলেন, আমার এক বিঘা জমির পটলের আবাদ শেষ। এখনো বাড়ির চারিদিকে পানি। আমন বীজতলা করতে পারছি না। আমন আবাদও মনে হয় করা হবে না।
একই এলাকার কৃষক আব্বাস বলেন, বানের পানিতে এখনো সব জমি তলিয়ে। বীজতলা করার সময় শেষের দিকে। এবার আমাদের এলাকার কৃষক কেমন করে আবাদ করবে চিন্তায় বাঁচে না সবাই। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় কৃষি সেক্টরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করছি। এছাড়াও কৃষকরা যেন আমন আবাদ ভালোভাবে করতে পারে পরামর্শ দিচ্ছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ পর ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদ নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বন্যার কোন পূর্বাভাস নেই।
টাঙ্গাইলে নদীর পানি কমলেও বানবাসিরা রয়েছে দুর্ভোগে : টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বানবাভিরা রয়েছে দুর্ভোগে। গতকাল সোমবার টাঙ্গাইল জেলার সব নদীর পানি কমেছে। ফলে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো ঝিনাই ও ধলেশ^রী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। জেলার গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার ও বাসাইল উপজেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের অর্ধশত স্থানে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলী জমি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এদিকে চরাঞ্চলে বানভাসি মানুষরা বেশি দুর্ভোগে আছে। তারা, গবাদিপশু গরু-ছাগল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলায় এখনো ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছেন। বন্যার কারণে জেলার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের ৭২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার পরিবারের ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছেন। ইতোমধ্যেই পানিবন্দি মানুষের মাঝে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে আটশত মেট্রিক টন চাল, ১৫ লাখ টাকা নগদ টাকা, শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
হরিরামপুরে ফের নদী ভাঙন : উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির তীব্র স্রোত আর কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পদ্মানদী টুইটম্বর হয়ে নদী তীরবর্তী উপচে পানি প্রবেশ করেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে নদীর তীর উপচে পানির তীব্র স্রোতে আবার দেখা দিয়েছে পদ্মার ভাঙন। উপজেলা হারুকান্দী এলাকায় প্রবল স্রোতে নদী তীরবর্তীতে একদিনেই লালন সাঁইজির ভক্তদের মিলনমেলার গুরুকুল আশ্রমের ঘরসহ দুইটি বসতভিটা, ঘর ও আসবাবপত্র পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। গত রোববার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হারুকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন। জানা যায়, উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে পদ্মার তীরবর্তীতে অবস্থিত লালন সাঁইজির ভক্তদের মিলনমেলার আশ্রয়স্থল গুরুকুল আশ্রমের ঘরসহ বসতভিটার অর্ধাংশ ও একই গ্রামের মো. চুন্নু মিয়া এবং মো. নান্নু মিয়ার বসতবাড়ির অর্ধাংশসহ দুইটি ছাপরা ঘর ও আসবাবপত্র পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরসহ আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হারুকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন। তিনি ইনকিলাবকে জানান, গুরুকুল আশ্রমের ঘরসহ আরও দুই বাড়ি ও ঘর বিলীন হয়ে যায়। আমি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদফতরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং লিখিতভাবেও আবেদন করব। যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করা যায়।
গতকাল সকালে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান। তিনি ইনকিলাবকে জানান, আমি ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে নদীর পাড় পানির নীচে অবস্থান করছে বিধায় এসময় জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করলে তা কার্যকর হবে না। কাজ করার উপযোগী হলেই আমরা আপদকালীন জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করব।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ
আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ
আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে
পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক
ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব
সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির
মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার
টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান
অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন
সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স
বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
আখাউড়া কালন্দি খালে বইবে জলধারা
টঙ্গীতে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেফতার ১৩
৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
আল-শারা ও শেখ মোহাম্মদের ঐতিহাসিক টেলি-আলোচনা