নিজেদের রাজাকার বলতে শিক্ষার্থীদের লজ্জা হয় না?
১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম
কোটা বাতিল আন্দোলনকে সমর্থন জানানো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী কীভাবে দেশে অত্যাচার চালিয়েছে তা তারা জানে না। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাবোধ হয়নি।’ গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কর্াালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’ এবং ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর প্রথমবার সরকার গঠনের পর থেকেই লক্ষ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশে^ স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ’৭৫ এই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যে মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হয়ে যায় তাকে আবার স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনা। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আর দেশকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে সেখানে আমার খুব দুঃখ লাগে গতকাল রোববার যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।’ তিনি বলেন, ‘তারা কী জানে ’৭১ সালের ২৫ মার্চ কি ঘটেছিল সেখানে। সেখানে ৩শ’ মেয়েকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দোসররা। ৪০ জন মেয়েকে পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। তারা সেখানে কী অবস্থায় ছিল? অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল তাদের কাপড় পড়তে দেওয়া হতো না। একটা পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো।’
শেখ হাসিনা মুক্তিযদ্ধে নারীদের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বসে থাকতো না। তারাও কিন্তু কাজ করতো। পিরোজপুরে এক মেয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর রান্নার কাজ করতো এবং রাতে নদী সাঁতরে পার হয়ে চিতলমারী গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে হানাদারদের খবর পৌঁছে দিত। ধরা পড়ার পরে দু’টো গাড়ির সঙ্গে তাঁর দুই পা বেঁধে টেনে হিঁচড়ে খন্ড বিখন্ড করে ফেলা হয়। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয়না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এখানে কেউ শান্তি কমিটিতে ছিল কিন্তু অনেকে মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা (পাকিস্তানী হানাদাররা) তৈরি করেছিল তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদেরকে দিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো অত্যাচার, লুটপাট এবং গণহত্যা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাদের দ্বারা যারা নির্যাতিত তারা ন্যায় বিচার পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ ঘর-বাড়ি পরিবার-পরিজন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রণক্ষেত্রে চলে গেছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর যারা ঐ বাহিনীতে ছিল (রাজাকার-আলবদর-আলশামস) এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটাতো ভুলে গেলে চলবে না। তিনি বলেন, আমাদের সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে এবং সেটা যে বাস্তবতা তার প্রমাণ ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর এবং পরে আরো প্রায় ৯ বছর তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করি এবং আমরা ভুক্তভোগীরা যখন ক্ষমতায় এসেছি মাত্র ১৫ বছরে আজ বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিশে^ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দরদটুকু থাকতে হবে। যাই হোক এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদের আলোকে আমরা সেবামুখি জনপ্রসাশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারই গ্রহণ করে। কারণ, প্রশাসনের ওপর থেকে নিম্ন স্তর পর্যন্ত যদি একটা জবাবদিহিতা না থাকে, কীভাবে কার্য সম্পাদন বাস্তবায়ন হবে সে সম্পর্কে যদি ব্যবস্থা না নেই তাহলে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই দ্বিতীয়বার সরকারের আসার পর এই পদ্ধতি নেই এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চালু করি। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ১১তম বারের মত ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আপনারা যারা স্বাক্ষর করলেন সে সকল সচিব আবার নিজের মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেগুলোর সাথেও আপনাদের ও এই চুক্তি সম্পাদন করে প্রত্যেকের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি-না নিশ্চই সে ব্যাপারেও আপনাদের নজর রাখতে হবে। আর সেটা আপনারা করবেন বলে আমি আশাকরি। তিনি বলেন, ‘স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে একেবারে নিচের দিক পর্যন্ত আপনাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, আমাদের ওপর দিকটা ভাল আছে কিন্তু নিচের দিকে কিছু কিছু সমস্যা হয়। কাজেই সেগুলো যাতে না হয় সবার মাঝে সেই চেতনা গড়ে তুলতে হবে।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারো কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যেখানেই কোন অনিয়ম দেখা দেবে তার বিরুদ্ধে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছি। আর এই দুর্নীতি ধরতে গলে আমাদের সরকারের ওপর দায়টা চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমি এটা বিশ^াস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকই করে কিন্তু তার বদনাম হয় খুব বেশি।
প্রধান বলেন, ‘যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের কী বদনাম হবে না হবে সেটা আমি পাত্তা দিই না। কিন্তু আমি এই সাজাকে আরো শুদ্ধ করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ যাতে সৃষ্টি হয় সেই ব্যবস্থাই নিতে চাই। কোন মতেই আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সব উদ্যেগ গ্রহণ করলে দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং মানুষের উপকার হবে সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহবান জানান। পাশাপাশি অপচয় রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং কৃচ্ছতা সাধনেরও আহবান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজেদের আত্মবিশ^াস ও বিবেক, বিবেচনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সকলকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি চক্রান্ত করে কেউ যেন খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সে দিকে সজাগ থাকার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ সম্পাদনকৃত এপিএ একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিএ বাস্তবায়নে সাফল্য প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরুপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পুরস্কৃত করেন। সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ শীর্ষ স্থান লাভ করে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রবর্তিত শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২৩-২৪ লাভ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি : দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ
আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ
আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে
পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক
ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব
সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির
মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার
টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান
অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন
সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স
বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
আখাউড়া কালন্দি খালে বইবে জলধারা
টঙ্গীতে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেফতার ১৩
৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
আল-শারা ও শেখ মোহাম্মদের ঐতিহাসিক টেলি-আলোচনা