ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না
১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম
মাহে মহররমের শিক্ষা হলো অন্যায়-দুরাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায় ও আদর্শিক সংগ্রাম পরিচালনা করায় শিক্ষা এবং জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের অকুতোভয় লড়াইয়ের সাহস সঞ্চার করার শিক্ষা। এ শিক্ষাই মুমিন-মুসলমানদেরকে জিহাদের পথ দেখায়। আরবি জিহাদ শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে ‘জাহদুন’ ও ‘জুহুদুন’। এর আভিধানিক অর্থ হলো সর্বাত্মক চেষ্টা করা ও চূড়ান্তভাবে আন্দোলন ও সংগ্রাম করা। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ইসলামবিরোধী সকল শ্রেণির প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে জান-মাল, বুদ্ধি-জ্ঞান, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং শক্তি-সামর্থ্য উৎসর্গ করে সর্বাত্মক ও চূড়ান্ত সংগ্রাম করার নামই হলো জিহাদ। এতদপ্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : “তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় বা ভারী অবস্থায় এবং জিহাদ কর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” [সূরা আত তাওবাহ : আয়াত ৪১]। এ আয়াতে কারীমায় তাগিদ দেয়া হয়েছে যে, জিহাদে বের হবার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তোমাদেরকে আদেশ করবেন তখন সর্বাবস্থায় তা তোমাদের জন্য ফরয সাব্যস্ত হবে। আর এ আদেশ পালনের জন্য জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা তোমাদের জন্য বসে থাকা থেকে উত্তম। কেননা, এ জিহাদেই রয়েছে তোমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার কাছে উঁচু মর্যাদা পেতে পারবে। [তাফসীরে সা’দী] আর তোমাদের এ কল্যাণ হবে দুনিয়া ও আখেরাতব্যাপী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে বের হবে, সে যদি কেবলমাত্র আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর বাণীতে ঈমানের কারণেই বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জিম্মাদারী গ্রহণ করলেন অথবা সে যে গনীমাতের মাল গ্রহণ করেছে তাসহ তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাবেন।” [সহীহ বুখারী : ৭৪৫৭]। তাছাড়া এ আয়াতে অলসতার দরুন জিহাদ থেকে বিরত রয়েছে এমন লোকদের একটি ওযরকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে যে, এ ওযর গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা যে শক্তি-সামর্থ্য তাদেরকে দান করেছেন তা তারা আল্লাহর রাস্তায় সাধ্যমতো ব্যয় করেনি। তাই তাদের অসমর্থ থাকার ওযর গ্রহণযোগ্য নয়। [তাফসীরে কুরতুবী]
বস্তুতঃ এ আয়াতে অলস ও নিষ্ক্রিয় লোকদের ব্যাধি ও তার প্রতিকার উল্লেখ করে সর্বশেষ ফায়সালা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা জিহাদে বের না হলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য জাতির উত্থান ঘটাবেন। আর দ্বীনের আমল হতে বিরত থেকে তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা, আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে শক্তিমান। তাফসীরকার কাতাদাহ বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে সকল আলস্য, নিষ্ক্রিয়তা ও সকল প্রকার অপরাধ এবং গোনাহের মূলে রয়েছে দুনিয়াপ্রীতি ও আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা। সে জন্য আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হয়েছে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে যমীনে ঝুঁকে পড়। তোমরা কী আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ? আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের ভোগের উপকরণ তো নগণ্য।” [সূরা আত্্ তাওবাহ : আয়াত ৩৮]। হাদিস শরীফে এসেছে : “বৃদ্ধ মানুষের মনও দুটি ব্যাপারে যুবক থেকে যায়, এর একটি হচ্ছে দুনিয়াপ্রীতি এবং অপরটি হচ্ছে বেশি বেশি আশা-আকাক্সক্ষা।” [সহীহ বুখারী : ৬৪২০]। অলসতার রোগ নির্ণয়ের পর তার প্রতিকার উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ আখেরাতের তুলনায় অতি নগণ্য। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হচ্ছে যেমন তোমাদের কেউ তার আঙুলকে সমুদ্রের মধ্যে ডুবায়, সুতরাং সে দেখুক, সে আঙুল কি নিয়ে আসে? আর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর শাহাদাত আঙুলীর দিকে ইঙ্গিত করলেন।” [সহীহ মুসলিম : ২৮৫৮]। অন্য হাদিসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার এক উঁচু স্থান দিয়ে বাজারে প্রবেশ করলেন। বাজার লোকে লোকারণ্য। তিনি একটা কান কাটা মৃত ছাগলের পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি সেটার কানের বাকি অংশে ধরলেন। তারপর বললেন, কে এটিকে এক দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করতে রাজি আছ? লোকেরা বলল, আমরা কেউ এটিকে কোনো কিছুর বিনিময়ে গ্রহণ করব না। আর আমরা এটাকে নিয়ে কি করব? তিনি বললেন, তোমরা কি চাও যে, এটা তোমাদের হোক? তারা বলল, যদি জীবিতও থাকত, তারপরও সেটা দোষযুক্ত ছিল। কেননা, এটার কান নেই। তদুপরি সেটা মৃত। তখন তিনি বললেন : “আল্লাহর শপথ করে বলছি, দুনিয়া আল্লাহর কাছে এর চেয়েও বেশি মূল্যহীন।” [সহীহ মুসলিম : ২৯৫৭]। সারকথা হলো, আখেরাতের স্থায়ী জীবনের চিন্তা-ভাবনাই মানুষের করা উচিত। বস্তুতঃ আখেরাতের চিন্তাই সকল রোগের একমাত্র প্রতিকার এবং অপরাধ দমনের সার্থক উপায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ
আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ
আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে
পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক
ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব
সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির
মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার
টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান
অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন
সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স
বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
আখাউড়া কালন্দি খালে বইবে জলধারা
টঙ্গীতে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেফতার ১৩
৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
আল-শারা ও শেখ মোহাম্মদের ঐতিহাসিক টেলি-আলোচনা