ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
চট্টগ্রামে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

‘কারফিউ চলের, ওঠানামা ২০ টাকা’!

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত টেম্পো ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু চালকের ঘোষণা, ‘কারফিউ চলের, ওঠানামা ২০ টাকা, আর বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা।’ এক লাফে দশ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তার সাফ জবাব, ‘পোষালে যান, না হয় গাড়ি থেকে নেমে যান।’ কয়েক জন যাত্রী প্রতিবাদ করলেও গাড়ি থেকে নামেননি, কারণ কারফিউ শুরু হয়ে গেছে তাদের দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে। ইপিজেড-বিমানবন্দর রুটের ওই টেম্পোর মতো চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটেই চলছে ভাড়া নৈরাজ্য।
অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে নানা অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহন চালক ও সহকারীরা। সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য চলছে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাসে। কোন কোন রুটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সকালে অফিস শুরু এবং বিকেলে অফিস শেষে কারফিউ শুরুতে যাত্রীদের জিম্মী করে তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে স্বল্প এবং সীমিত আয়ের লোকজন।
নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতিতে মানুষ এখন দিশেহারা। সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রব্যমূল্যের আগুনে রীতিমত ঘি ঢেলে দিয়েছে। দুবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা। তার উপর গণপরিবহনে গলা কাটা ভাড়া সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। রাস্তায় এমন নৈরাজ্য চলছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। বিক্ষুব্ধ অথচ অসহায় মানুষ কিছুক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করে নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন। আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পথে পথে ভাড়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা কাটাকাটি, ঝগড়া লেগেই আছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সরকারের নিষ্ঠুরতম অভিযানে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও চরম অচলাবস্থা বিরাজ করে। কারফিউ জারির পর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে। চালু হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব শিল্প কারখানা। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেডসহ এই অঞ্চলের কল কারখানা সচল হতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি রফতানি পণ্য পরিবহন ডেলিভারি চলছে। সীমিত সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করে লোকজনকে কাজে আসা যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে, আবার কারফিউ শুরুর আগে ফিরতে হচ্ছে। এতে নগরীর গণপরিবহনের উপর চাপ বেড়ে গেছে। এমনিতেই মহানগরীতে পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। তার উপর অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে আগের সিডিউল এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় পরিবহন সঙ্কট বেড়ে গেছে। তাছাড়া রাস্তায় সেনা টহল থাকায় ভয়ে অনেকে ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। তাতে সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে।
এই সুযোগে পরিবহন শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর লোক সংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড ছাড়াও ছোট বড় অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে এখানে। লাখ লাখ শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করেন। দেশের প্রধান বাণিজ্য নগরী ও বন্দর নগরী হওয়ার কারণে আমদানি রফতানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের সংখ্যাও কম নয়। কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে এই নগরীতে আসে। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ মূলত গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেই অনুপাতে পরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। রাস্তায় চলাচলকারী বেশির ভাগ যানবাহনের নেই ফিটনেস সনদ। লক্কর ঝক্কর যানবাহন তার উপর অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতেই ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু করে পরিবহন চালক ও শ্রমিকেরা। চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য চরমে উঠেছে। নগরীতে শত শত বেটারি চালিত রিকশা ঢুকে পড়েছে। কারফিউ চলাকালে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে তখনো লোকজন রাস্তায় থাকে। তখন গন্তব্যে যেতে এসব দ্রুত গতির এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়তে হচ্ছে। নগরীর অলিগলিতে চলতে গিয়ে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। #


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
আরও

আরও পড়ুন

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি