ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
রিমান্ড শেষে কারাগারে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর নাশকতার ৬৭ মামলা সুলতান সালাউদ্দিনসহ ২০৭ জন কারাগারে

আমার ছেলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে পুলিশ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে -কোর্ট চত্বরে মমতাজ বেগম

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

আমার ছেলে তুষারের বয়স ২১ হবে। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। তাকে রাত ৩টায় ডেমরা থানার পুলিশ এসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি জানি না আমার ছেলে কি করছে। গত কয়েকদিনের আন্দোলনেও যায়নি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আদালত চত্ত্বরে তুষারের মা মমতাজ বেগম ছেলেকে দেখার জন্য ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চত্বরের অপেক্ষা করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শুক্রবার ১২টার দিকে আদালতে ছেলের জন্য এসেছি। সে গাড়ি থেকে আমাকে দেখেই মা মা বলে চিৎকার করছিল। গতকাল আদালত চত্বরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড়। কারও মা-বাবা, কারও ভাই কারও বোন কিংবা অন্যান্য আত্বীয়রা অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।

অন্যদিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল আদালতে হাজির করলে ঢাকা মহানগর হাকিম শাকিল আহমেদ এ আদেশ দেন। গত ১৮ জুলাই ঢাকার সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাঈদ মিয়া নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করলে ঢাকা মহানগর হাকিম শাকিল আহমেদ এ আদেশ দেন।
ফরোয়ার্ডিং প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে নুর ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনও করেন ডিবির পরিদর্শক। তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী এই ঘটনার সঙ্গে তার মক্কেল জড়িত নয় বলে তার পক্ষে জামিন আবেদন জমা দেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করে নুরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর গত ২১ জুলাই ঢাকার আরেকটি আদালত নুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আটকদের সিএমএম আদালতে নেয়া হলে গতকাল শুক্রবার আদালত চত্ত্বরে ভিড় করেন আটকদের স্বজনরা। এসময় আটক ব্যক্তিদের নির্দোষ দাবি করে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা।

সরেজমিন ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বর ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড়। কারও মা-বাবা, কারও ভাই কারও বোন কিংবা অন্যান্য আত্বীয়রা অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।
রাজধানীর কাজলা সামাদ নগরের বাসিন্দা মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় দিকে তুলে নিয়ে যায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। মনির হোসেনের স্ত্রী ছালমা বলেন, বৃহস্পতিবার আমার স্বামী দোকান বন্ধ করে বাসায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে বাসায় ঢুকে যায়। এরপর কিছু না বলেই হ্যান্ডকাফ পরাতে গেলে আমি জিজ্ঞেস করি, কেন আমার স্বামীকে গ্রেফতার করবেন? কী অপরাধ? এরপর হ্যান্ডকাফ দিয়ে আমার হাতে পুলিশ আঘাত করে। এসময় আমার ছোট্ট ছেলে এসে বাধা দিলে তাকে টেনে সরিয়ে দিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। এসময় তারা আমাদের বাসার নিচের সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।

এসময় সঙ্গে থাকা আটক মনির হোসেনের মা জানান, ছেলেকে দেখতে এসেছি। এই আন্দোলনে সে কখনো রাস্তায় বের হয়নি। এক সময় বিএনপি সমর্থন করত। এখন সে কোনো দল করে না।

গ্রেফতার হওয়া দ্যা মিরর এশিয়া নিউজের সাংবাদিক সাঈদ খানের স্ত্রী সানজিদা ইতি বলেন, আমার স্বামীকে নিউজ করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেট্টোরেলে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক নিউজতো করবেই। আমার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছে। এছাড়াও আন্দোলনে তার পায়ে ইট পড়ায় কয়েকদিন ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি। আমি কখনো আদালতে আসিনি। আমার অসুস্থ ছেলেটা বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে অস্থির। আপনারা প্লিজ আমার ছেলের জন্য তার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

নাশকতার ৬৭ মামলা সুলতান সালাউদ্দিনসহ ২০৭ জন কারাগারে: নাশকতার বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২০৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শুক্রবার বিকেলে এ আদেশ দেন। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নাশকতার ৬৭টি মামলায় ২০৭ জনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। প্রত্যেক আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত