ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১
সেনা-বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যেসব এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনী বাধা দেয়নি সেখানে সংঘাত হয়নি

ফের উত্তাল দেশ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ এএম

রাতে কারফিউ চলছে। দিনে কারফিউ কয়েক ঘণ্টা শিথিল করে অফিস-আদালত-ব্যাংক-বীমা-মার্কেট খেলা রেখে এবং সীমিত পর্যায়ে ইন্টারনেট খুলে দিলেও রাজধানীতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় সেনা ক্যাম্প- বাঙ্কার, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনীর টহল এবং বিজিবির যুদ্ধংদেহী উপস্থিতি এবং রাতে ‘ব্লক রেইড’ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন গ্রেফতারকৃতদের আদালতে তুলে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ স্বজনদের দেখতে আদালতে ভিড় করছে।

হাসপাতালে চিকিৎসারতদের মধ্যে থেকে প্রতিদিন দু’একজনের মৃত্যুর খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এর মধ্যেই আইন শৃংখলা বাহিনীর জুলুম নির্যাতন, গ্রেফতার অভিযানের নামে বাসাবাড়িতে গিয়ে ভয়াবহ তাণ্ডব এবং ডিবিতে আটক করে শিক্ষার্থীদের বিবৃতি আদায়ের ঘটনা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নতুন করে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের কঠোর টহলের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা ফের রাজপথে নেমেছে। রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকা এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, সিলেট, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক অবরোধ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। অনেক জায়গায় আইন শৃংখলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কাঁদুনে গ্যাস, টিয়ারসেল নিক্ষেপে অনেকে আহত হয়েছেন এবং গ্রেফতারও করা হয়েছে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে। ইনকিলাবের প্রতিনিধিরা জানান, গতকালের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যে সব জেলায় বাধা দেয়া হয়নি; সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে। তবে আইন শৃংখলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ যেখানে বাধা দিয়েছে সেখানেই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই সায়েন্স ল্যাব, প্রেসক্লাব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেট, যাত্রাবাড়ি, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর-১০, মিরপুরের ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হেলিকপ্টারের টহলও দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন।

সড়কে সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে, বিজিবির গাড়ি প্রতিনিয়ত চলাচল করছে, র‌্যাব, পুলিশের শত শত সদস্য কঠোর বেষ্টনি গড়ে তুলেছে সড়কে; কিছুই তোয়াক্কা করছেন না শিক্ষার্থীরা। পুলিশের গুলিতে ২১২ শিক্ষার্থীর হত্যার বিচার, হত্যার নির্দেশ উস্কানিদাতা মন্ত্রী ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গ্রেফতারসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ ঠেকাতে গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং ব্যাপক ধরপাড়ক করে আইন শৃংখলা বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের লাঠিয়াল বাহিনীও বরিশালে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেছে। এতে করে পরিস্থিতি ফের বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও দেশের সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। এমন কি মাননীয় হাইকোর্ট এ ঘটনা নিয়ে কঠোর মন্তব্য করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর জাতির সঙ্গে ‘মশকরা করা হচ্ছে’ মন্তব্য করেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, পুলিশের গুলিতে নিহত এতোগুলো লাশের সঙ্গে বেঈমানি করবে না ছাত্রসমাজ। শুধু কোটার দাবি নয়, শিক্ষার্থীদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উস্কানি দেয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ডিবিতে ধরে নিয়ে ছাত্রনেতাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বত্রই এ নিয়ে প্রতিবাদ চলছে। শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার মঙ্গলবার ‘শোক দিবস’ পালনের ঘোষণা দিলেও দেশের বিশিষ্টজনেরা গতকাল ‘জাতীয় তদন্ত কমিশন’ গঠন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গতকাল ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করেছে। শিক্ষার্থীরা রাজধানীর পল্টন, সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি, উত্তরা ও মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। আইন শৃংখলা বাহিনী রাজধানীর ইসিবি চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। পল্টন, সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি ও মিরপুরে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় অনেককে আটক করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয় পুলিশ এবং কয়েকজনকে আটক করে। দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভকারীরা গলির ভেতরে থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিল। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে পল্টন মোড়ে আট থেকে দশজন আন্দোলনকারীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। ছাত্র হত্যার বিচার ও আটকৃতদের মুক্তির দাবিতে নানা সেøাগান দিতেও দেখা যায়। এ সময় পল্টন মোড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিন সকাল থেকেই সাঁজোয়াযানসহ প্রেস ক্লাবের সামনে কড়া অবস্থান নেয় পুলিশ। বর্তমানে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সহ-সমন্বয়কারীসহ চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। রাজধানীর মিরপুর ১০ ও ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা সেøাগান দেন ‘বৈষম্যের ঠাঁই নাই আমার সোনার বাংলায়’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা! মেধা মেধা’ ‘স্বৈরাচার হাসিনা নিপাত যাক নিপাত যাক’, এ মুহুর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’ শ্লোগানও দেয়। বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার ওসি মুন্সি সাব্বির। সায়েন্সল্যাব থেকে কয়েকজনকে আটক এছাড়া ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে ১০ জনকে আটকের কথা জানিয়েছেন নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম।

উত্তরা সংবাদদাতা জানান, উত্তরাজুড়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি দেখা যায়। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেধা তালিকায় কোটা সংস্কার দাবিতে কয়েক জন শিক্ষার্থী বিএনএস সেন্টার স্কয়ার ভবনের গলি দিয়ে মূল সড়কে এসে তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে শ্লোগান উঠালে পুলিশ ও ছাত্রলীগের লোকজন এসে তাদেরকে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সরেজমিনে দেখা যায়, কারফিউ শিথিলের মধ্যে ও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিমানবন্দর মহাসড়ক আজমপুর ও উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এসময় তারা আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের উপর ও নিচের সড়কে দীর্ঘ সময় কঠোর অবস্থান ছিলেন। উত্তরা খালপাড় এলাকা, জমজম টাওয়ার, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা, হাউজ বিল্ডিং, বিএনএস সেন্টার, আজমপুর, রাজলক্ষি ও বিমানবন্দর এলাকায় মহাসড়কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ, আনসার সদস্য ও র‌্যাব বাহিনী মিলে উত্তরাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে।

চট্টগ্রামের জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিক্ষোভ বের করেন। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ শুরু হলে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যসে শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। তবে বিকেলে শিক্ষার্থীরা ফের চেরাগী পাহাড় মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা এ কে আরাফাতের নেতৃত্ব অর্ধশত ছাত্রলীগ কর্মী, রড, পাইপ, লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীদের বেধড়ক পিটুনিতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেনা, বিজিবি, পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য পাশেই অবস্থান করেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশের গুলিতে নিহতদের হত্যাকারিদের বিচারের দাবিসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে মহুয়াতলায় জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে দিয়ে ঘুরে পুনরায় শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়।ময়মনসিংহে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘটিত ‘গণহত্যার বিচার, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি’র প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হয়। নগরের গাঙ্গীনারপার মোড়সংলগ্ন শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে কর্মসূচির জায়গা নির্ধারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেল। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নামতে দেয়নি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। সেনা, বিজিবি, শত শত পুলিশ বগুড়া শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের রাস্তায় নামতে দেয়নি।

চট্টগ্রামে সাউন্ড গ্রেনেড টিয়ারসেল বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মীদের সাথে গতকাল সোমবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংর্ঘষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় তিন পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে। নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানেগ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে। এছাড়া নগরীর জামাল খান প্রেস ক্লাব, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, ষোলশহর এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘গুম, খুন ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে› দাবি করে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এসময় টিয়ারসেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। সাউন্ড গ্রেনেড মারতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্য রক্তাক্ত আহত হন। পুলিশের লাঠি পেটায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সমাবেশের আগে-পরে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

এর আগে এক ভিডিও বার্তায় বিকেল ৩টায় নগরীর জামালখানে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। ওই ঘোষণার পর সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে নগরীর কাজির দেউড়ি, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, জামালখানসহ বিভিন্ন মোড়ে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ অবস্থান নেয়। একই সময়ে নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। দুপুরের পর জামালখান ও আশপাশের এলাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দখলে চলে যায়। তবে শেষ মুহূর্তে সমাবেশের স্থান বদলে জামাল খানের অদূরে চেরাগী মোড় করা হয়। সেখানেও সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের অবস্থান বাড়ানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের মধ্যেও মোড়ে মোড়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ক্যাডার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা, তল্লাশি অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা একজন, দুজন করে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তারা অভিযোগ করে পুলিশ প্রতিটি সড়ক মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের দেখলেই দেহ তল্লাশি করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। একসাথে তিনজনের বেশি দেখলে তাদের লাঠিপেটা করেছে। প্রেস ক্লাবের সামনে এক কিশোরকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। এরপরও অলিগলিসহ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী সমাবেশে জড়ো হন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্রী। শুরুতে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে আন্দোলনকারীরা এরই মধ্যে চেরাগি মোড়ে পাশের সড়কে বসে স্লোগান দিতে শুরু করেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে তারা সেখানে অবস্থান নেন। এসময় তারা ‘আমার ভাই মরলো কেন-খুনি সরকার জবাব চাই, খুনি তোরা শোনরে শোন-খুনের বদলা নেব খুন, প্রতি ফোটা রক্তের-বদলা নিয়ে ছাড়ব’ স্লোগান দেয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুুলিশ সমাবেশ পন্ড করতে লাঠি পেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।

বিকেল চারটার পরে পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনতরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মোজাফফর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। সমাবেশের আগে ও পরে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যান।

শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ঠেকাতে নগরীর ষোলশহর থেকে মুরাদপুর এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সড়কে কোন কিশোর যুবককে দেখলেই তাদের ধরে জেরা করে পুুলিশ। তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। ফলে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী জড়ো হননি।

বগুড়ায় ছাত্রদের দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। ছাত্ররা গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা স্টেশন রোডে বগুড়া প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। এরপর তারা শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর ছাত্ররা সরকারি আজিজুল হক কলেজ, কলেজ বটতলা, বাংলা স্কুলের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়। এভাবেই দিনভর এক রকম চোর পুলিশ খেলার মাধ্যমে দিনটি শেষ হয়। পুলিশ সাতমাথা এলাকা থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই ছাত্রীর সাথে থাকা ব্যাগে একটি লাঠি পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ। এদিকে, বগুড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাকিরুল ইসলাম জাকিরকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় কর্মসূচি পালনের সময় তাকে আটক করা হয়। তার আটকের খবরে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহে পুলিশ বেষ্টনীতে আন্দোলনের ঘোষণা
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই নগরীতে কঠোর অবস্থানে ছিল র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। এ কারণে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে না পারলেও পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর গাঙ্গিনাপাড় ট্রাফিক মোড়ে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ঘিরে থাকতে দেখা গেছে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের।
সমাবেশে আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, ৯ দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে। ঢাকা থেকে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে আমরা তা যথাযথভাবে পালন করব। এতে যত বাঁধাই আসুক, শত বাঁধা উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে থাকবে। আমাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ সংলগ্ন যেস্থানটিতে আমাদের ভাই রোদোয়ান হোসেন সাগর নিহত হয়েছেন, আমরা ওই স্থানটিকে ‘শহীদ সাগর চত্বর’ ঘোষণার দাবি করছি।

সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. আশিকুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, রাকিবসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের দ্রুত সরে যেতে বললে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। এর আগে নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বর এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি এবং এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সমাবেশের খবরে আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচির সমাপ্তি করে শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ
জাবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে ‘জোরপূর্বক’ আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করাসহ চারদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিকাল চারটায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উপর নৃশংস অত্যাচারের বিচার করা, শিক্ষার্থীদের হত্যার পেছনে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেফতার বন্ধ করা।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হয়, ফিলিস্তিনের গণহত্যা চালানো হয়েছে, বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালিয়েছে। ডিবি পুলিশ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সমন্বয়কদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধ ঘোষণা করিয়েছে, আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা চাই, আগে সকল সমন্বয়কদের মুক্তি দেওয়া হোক, তারপর সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আরেক সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা একটি যৌক্তিক, ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার করা হোক। মেধাবীদের অধিকার নিশ্চিত করা হোক। একটি সাম্য ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। এ আন্দোলন সরকার বা কোন দলের বিরুদ্ধে ছিলো না। কিন্তু পরে আমাদের উপর ছাত্রলীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। যার নির্দেশে এগুলো হয়েছে সেই স্বৈরাচারী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।’

বিশ^বিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘এই স্বৈরাচারী সরকার তার লেজুড়বৃত্তিক ক্যাডার ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে প্রতিহত করতে চেয়েছে। এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। যে দেশে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের রামদা’র সামনে দাঁড়িয়ে, পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে পারে সে দেশে স্বৈরাচারী কোন শাসক টিকতে পারে না।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। তারা হলেন- বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, বাংলা বিভাগের প্রফেসর শামীমা সুলতানা, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামাল উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব প্রমুখ।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ
রাবি সংবাদদাতা জানান, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত হওয়া এবং ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি রেখে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম ও ড মো. সাইফুল ইসলাম একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে অংশ নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক মেহেদী হাসান সজীব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিযয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে,ছাত্রসমাজের দাবিসমূহের প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সাথে তামাশা করেছে। আমরা এতোদিন চুপ ছিলাম এখন আর নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, এতো বিরূপ পরিস্থিতিতে এতো রক্ত ও অনেক শহীদের মধ্যেও তোমরা যে সাহস ও সচেতন হয়ে দাঁড়িয়েছ এটাই শহীদদের আত্মার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শহীদদের সেই স্বপ্ন, একটি মানবিক বাংলাদেশ কায়েম করতে হবে। সেই স্বপ্নকে আমাদের সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তোমাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। একটি সুস্থ ও সভ্য সমাজে এ ধরনের দাবিগুলো জানাতে হয় না, এমনি পূরণ হয়ে যায়। আজকে এই বিনা ভোটের সরকার দেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন আমাদেরকে আজ ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র-শিক্ষকদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা এর দ্রুত অবসান চাই।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে বিক্ষোভ
সিলেট ব্যুরো জানায়, দেশব্যাপী গুম-গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ছাত্র-জনতা হত্যা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে মিথ্যা বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধান ফটকের সামনে এসে মিলিত হয় সমাবেশে।

এদিকে সমাবেশে শাবিপ্রবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে মিথ্যা বিবৃতি পাঠ করিয়ে এই স্বৈরাচার সরকার আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত আমাদের একজন ভাইও বেঁচে থাকবে ততদিন এই স্বৈরাচার সরকারের কোন ছলচাতুরী কাজে আসবে না। তিনি আরো বলেন, যারা আবু সাঈদ ভাইকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই রদ্রসহ সকল সহযোদ্ধা ভাইদের যারা গণহারে হত্যা করেছে তাদেরকে আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা খুনির কাছে খুনের বিচার চাই না। খুনির কাছে খুনের বিচার চাওয়ার জন্য আসি নাই। জহির রায়হানের আরেক ফাল্গুনে বলা হয়েছে, ‹কারাগার বড় করুন, আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হব। আমরা বলে দিতে চাই সারা বাংলাদেশ কারাগার বানিয়ে ফেলো।› যদি আমাদের নয় দফা দাবি সরকার মেনে না নেয় শিক্ষার্থীরা একদফা দাবি দিতে বাধ্য হবে। একদফা দাবি দিলে আর পালানোর সুযোগ পাবেন না। বিক্ষোভ সমাবেশে সিলেটের মুরারারিচাদ কলেজের শিক্ষার্থী তাঞ্জিনা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন গন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। শ্রমজীবী থেকে ৪বছরের শিশু পর্যন্ত এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। যতদিন প্রত্যেকটি হত্যার হিসাব দেওয়া না হবে আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী ওই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমন্বয়কদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, দমন-নিপীড়ন বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে ওই কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা তিনটার আগে থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভিক্টোরিয়া কলেজ সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে। প্রায় পনের মিনিটের ওই সমাবেশে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরে বক্তারা। এদিকে কোটবাড়ি জাদুঘর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেøাগানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগুতে থাকলে এ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে যায়।

নোয়াখালীতে সড়ক অবরোধ
নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, সমন্বয়কদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, দমন নিপীড়ন বন্ধ, কারফিউ প্রত্যাহার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এবং সারাদেশে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার’সহ বিভিন্ন দাবিতে নোয়াখালীতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার চৌমুহনী-মাইজদী আঞ্চলিক মহাসড়কের ‘নোয়াখালী জিলা স্কুল’ এর সামনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ ’সহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং অভিভাবক বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা সারাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিহতদের স্মরণ করেন। পরে এসব হত্যায় যাদের জড়িত তাদের চিহিৃত করে সষ্ঠু বিচারের দাবি করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থানের কারণে দু›পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। একই সাথে ঢাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নোয়াখালী পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রিজভীর হত্যার বিচার দাবি করেছেন।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রথম থেকেই বিভিন্ন খাতে নিতে একটি মহল চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়। সাদা পোষাকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় ও নগরীর নথুল্লাবাদে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা। এসময় বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় যুবক আন্দোলনরত ছাত্রদের ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসে। তবে সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্যম্পাসের বাইরে বরিশালÑভোলা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা/বরগুনা মহাসড়কে পুলিশ অবস্থান করছিল।

এদিকে গতকাল দুপুরের আগে নগরীর নথুল্লাবাদে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়ও কিছু ছাত্র-ছাত্রী বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রায় অধাঘণ্টা পরে বুঝিয়ে নিরাপদে ফেরত পাঠান হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। এ ঘটনায় কোনো গ্রেফতার নেই বলে মহানগর পুলিশ জানিয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর

ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ

ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ

কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি

কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি

কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল

কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল

রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিষিদ্ধ সংগঠন  সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে

নিষিদ্ধ সংগঠন  সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে

কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

ট্রাম্পের শপথের আগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার

ট্রাম্পের শপথের আগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার

টেকনাফের কৃতিসন্তান সাইফুল্লাহকে পুলিশের এআইজি পদে পদায়ন

টেকনাফের কৃতিসন্তান সাইফুল্লাহকে পুলিশের এআইজি পদে পদায়ন

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেল ফরিদপুরের চার আলেম

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেল ফরিদপুরের চার আলেম

টিকটক কিনছেন না মাস্ক, জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা

টিকটক কিনছেন না মাস্ক, জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা

সাতক্ষীরায় নববধূকে নির্যাতন করে হত্যা! স্বামী আটক

সাতক্ষীরায় নববধূকে নির্যাতন করে হত্যা! স্বামী আটক

ফরিদপুরে চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় বাড়ির কেয়ারটেকারকে হত্যা : গ্রেপ্তার ৩

ফরিদপুরে চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় বাড়ির কেয়ারটেকারকে হত্যা : গ্রেপ্তার ৩

হাজীগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

হাজীগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

৪৩ বছর বয়সে ক্রিকেটে ফিরছেন অ্যান্ডারসন

৪৩ বছর বয়সে ক্রিকেটে ফিরছেন অ্যান্ডারসন

ইসরায়েলে হুথি গোষ্ঠীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১১ জন আহত

ইসরায়েলে হুথি গোষ্ঠীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১১ জন আহত

সিংগাইরে ট্রাক ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-১

সিংগাইরে ট্রাক ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-১

মুজিবনগরে ১৮ টি স্বর্ণের বারসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

মুজিবনগরে ১৮ টি স্বর্ণের বারসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

শেরপুর সীমান্তে অপরাধপ্রবণতা বন্ধে বিজিবির জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত

শেরপুর সীমান্তে অপরাধপ্রবণতা বন্ধে বিজিবির জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত

জ্যাক স্মিথের প্রতিবেদনে ট্রাম্পের ২০২০ নির্বাচনে কারচুপির প্রচেষ্টা প্রকাশ

জ্যাক স্মিথের প্রতিবেদনে ট্রাম্পের ২০২০ নির্বাচনে কারচুপির প্রচেষ্টা প্রকাশ