গুলিতে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আমরা লজ্জিত -হাইকোর্ট
৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা ও কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানি আজ (বুধবার) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের ডিভিশন বেঞ্চ এ মুলতবি করেন। সে অনুযায়ী আজ পরবর্তী শুনানির পর আদেশ দানের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল শুনানিতে রিটের পক্ষের কৌঁসুলি অনীক আর হক কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ বছরের শিশু রিয়ার মৃত্যুর নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
এ সময় আদালত বলেন, এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক। তখন ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, নিঃসন্দেহে (দুঃখজনক)। একটা জীবন যখন চলে যায়, তখন কোনো পক্ষ থাকে না। আর এটি একটি ছয় বছরের শিশুর মৃত্যু।
আদালত বলেন, আমার কোর্টে ইমোশনাল বিষয় অ্যাড্রেস করবেন না। এই মৃত্যুর ঘটনায় আমরা খুব লজ্জিত।
রিটের আইনি বিষয় তুলে ধরে অনিক আর হক বলেন, পুলিশকে যদি গুলি চালাতেই হয়, তবে পা লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে। রাতে ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে কেবল সরাসরি গুলি করতে পারবে।
আদালত বলেন, আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিৎ নয়-যাতে জাতির ক্ষতি হয়।
অনীক আর হক বলেন, জাতির ক্ষতি বলতে শুধুমাত্র কিছু ভবন, স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি বোঝালে হবে না। জীবনের ক্ষতিও জাতির ক্ষতি। আগে বিক্ষোভ দমন বা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গরম পানি, টিয়ার শেল ব্যবহার করতো।
আদালত তখন বলেন, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তার আগে মাইকিং করে সতর্ক করতে হবে। আমরা কেউই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি না। পুলিশ কখন আর্মি কল করতে পারে, সেটিও আইনে বলা আছে। পুলিশকে যে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তার ছবি খুব একটা প্রচারে আসেনি।
রিটের পক্ষে শুনানিতে ব্যারিস্টারা সারা হোসেন ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের বিষয়ে বলেন, ছয় সমন্বয়ককে যে হেফাজতে রাখা হয়েছে, এটা তো স্বীকৃত। আইন বহির্ভূতভাবে কাউকে এভাবে হেফাজতে রাখার সুযোগ নেই। আইনি ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় না। সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে যে, তাদের (ছয় সমন্বয়ক) আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে পারছেন। কিন্তু তারা (ছয় সমন্বয়ক) কার সঙ্গে দেখা করতে চান বা চান না, সেটি জানার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ চলছে।
আদালত বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আটকাতে হবে। হয় সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিতে হবে, নয়তো আদালতে তুলতে হবে।
গতকাল সরকারপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। শুনানিতে তিনি ছয় সমন্বয়কের জীবন ঝুঁকিতে থাকা ও হুমকির কথা তুলে ধরেন। আর এ কারণেই ডিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তখন আদালত বলেন, তাদের যে মেরে ফেলবে, এই কথাটা তাদেরই বলতে হবে। সে তো আশ্রয় চায়নি।
রিটকারীদের রিটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। তিনি বলেন, রিট আবেদনকারীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য আদালতে এসেছেন। তারা একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। এখানে যারা এসেছেন (রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী) তারা সবাই এই কমিশনের সদস্য। তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। গণতদন্ত কমিশনের (আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম.এ. মতিন) চেয়ারম্যান রিটকারীর (অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন দীপ্ত) একজনের বাবা।
জাতিসংঘের একটি সনদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। ওই সনদ অনুসারে অনুপেক্ষিত ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীরা গুলি চালাতে পারবে। কোনটা অনুপেক্ষিত পরিস্থিতি, সে সিদ্ধান্তও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই নিতে হবে। এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, আমরা আদালতের ভেতরে আছি। আইনের মধ্য থেকে কথা বলবো। এমন কিছু বলবো না যাতে কেবল মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়।
তখন আদালত তখন বলেন, বিষয়টি সব পক্ষেরই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এখন দেশে যে অবস্থা, সে পরিস্থিতিতে ছয় সমন্বয়ককে পুলিশ আটকে রাখতে পারে কি না?
জবাবে সরকারি আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরসেদ বলেন, এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাকে কীভাবে রাখবে, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।
তিনি বলেন, কোটা নিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেখানে সর্বোচ্চ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। আদালত আশা প্রকাশ করেছেন, যে তদন্ত কমিশন সরকার গঠন করেছে, সেই কমিশন প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তা সত্ত্বেও তারা (রিট আবেদনকারী পক্ষকে উদ্দেশ্য করে) গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছেন।
সভা-সমাবেশের অধিকার নিয়ে এই আইন কর্মকর্তা বলেন, আইনি বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে সভা-সমাবেশের অধিকার দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে বল প্রয়োগ করেছে, তার কোনো প্রমাণ তাদের (রিট আবেদনকারীদের) কাছে নেই।
রিটের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন শুনানি করবেন-মর্মে জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোরসেদ। আদালত তখন বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
প্রসঙ্গত: দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি লাইভ রাউন্ড (তাজা গুলি) ব্যবহার না করার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৯ জুলাই রিট করেন করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মানসুর আল মতিন দীপ্ত এবং অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রিটে কথিত নিরাপত্তার নামে ডিবি হেফাজতে নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দ্রুত মুক্তির নির্দেশনাও চান দুই আবেদনকারী।
আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিচালক, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তাজা গুলির ব্যবহার কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত ঘোষণা করা হবে না এবং তাজা গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, জানতে বিবাদীদের প্রতি রুল জারির আর্জি জানান। একই সঙ্গে কথিত নিরাপত্তার নামে হেফাজতে নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দ্রুত মুক্তি দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-এ এই মর্মেও রুল চাওয়া হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সিলেটে কোরআন খতম ও দোয়া
অধ্যক্ষ হয়ে ভাগ্য বদলে যায় অনুতোষ কুমারের
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামা হবে : কর্নেল অলি
ভুল এমনি এমনি হয় না, এর পেছনে কারো না কারো হাত থাকে : ইসি
সিলেটকে উড়িয়ে জয়ের ধারায় চট্টগ্রাম
ঈশ্বরগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সচিবালয়ের পথে জবির অনশনকারী শিক্ষার্থীরা
হাজীগঞ্জে ছেলের ঘুষিতে বাবার মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা: চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা
নরকিয়া ও এনগিডিকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ. আফ্রিকা দল
বান্দরবানে দূর্বৃত্তের গুলিতে মার্মা নারী আহত
‘বিতর্ক ওঠায়’ পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল
পুলিশকে নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে : পুলিশ সুপার
কুয়াকাটায় জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৩
বাংলাদেশে থেকে ওরা পালিয়েছে- আল্লামা তারেক মনোয়ার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সমস্যা সমাধানে কঠোর পদক্ষেপ চাই
"স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ: আপামর জনতার ত্যাগের ফসল"
পূর্ব ইউক্রেনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চলে সারের বাফার গুদাম করা প্রয়োজন মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
তাইম ও হৃদয় হত্যাকাণ্ডে দুই পুলিশ সদস্যকে ২০ জানুয়ারি ট্রাইবুনালে হাজিরের নির্দেশ