গণহত্যা আড়াল করতেই জামায়াত নিষিদ্ধের ইস্যু -মির্জা ফখরুল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত গণহত্যাকে আড়াল করতে সরকার জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি সামনে আনছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার একটার পর একটা ইস্যু তৈরি করে এবং সেই ইস্যু তৈরি করে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়টি এখন আরেকটা প্রজেক্ট। এটি ইস্যু পরিবর্তনের অপকৌশল। এর মাধ্যমে সরকার আবারও বাকশাল কায়েম করতে চায়। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ করতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি, আদর্শ হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বাম রাজনীতি যারা করতেন মির্জা গোলাম হাফিজ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ থেকে শুরু করে তারা সবাই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর সেখানে থেকে যখন উইথ ড্র করা হলো তখন তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, এই ধরণের ঘটনা (নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত) যারা স্বৈরাচারি, ডিকট্রেটরস, যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক থাকে না তারা এই ধরনের বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেনো এতো দিন নেয়নি? আজকে এখন নিচ্ছে কেনো? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা ওরা বলবে, আমরা যে কথাগুলো বলছি তার বিপক্ষে তারা অনেক কথা বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা খুব পরিস্কার করে বলি যে, আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে, যারা যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে কার রাজনীতি সে গ্রহন করবে, কার রাজনীতি সে গ্রহন করবে না। এখন এখানে দরকার একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। আজকে যে এতো ক্রাইসিস এর মূলে হচ্ছে- এদেশে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নেই। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার না হলে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না। জনগণের প্রতিনিধি দরকার এবং জনগণের কাছে যাদের দায়-দায়িত্ব, জবাবদিহিতা থাকবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা কোনো নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। তারা সবসময় কৌশল করে যেভাবে ডিবি অফিসে ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে বলানো হচ্ছে সেই একইভাবে কৌশল করে তারা বিভিন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের হত্যার দায় নিয়ে সরকারকে বিদায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি জানি গত কয়েকদিনের ঘটনায় ছাত্র ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তাদের বাড়িতে আত্বীয়-স্বজন কেউ খেতে পারছে না। তাদের চোখের সামনে ছেলে চলে গেছে, তাদের ভবিষ্যত চলে গেছে, তাদের সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিসটা সেটা চলে গেছে। চার বছরের বাচ্চা, ছয় বছরের বাচ্চাটা, এর উত্তর কি? রাষ্ট্রের কি উত্তর? রাষ্ট্রের জবাবটা কি? কেনো তার প্রাণ গেলো? কি উত্তর দেবে সে? দায়িত্ব তো তার। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব তার। একথা বললে তো চলবে না যে, আমরা কি করতে পারি, বিভিন্নভাবে ঘটে গেছে, এই কথা বললে চলবে না। তুমি এই পরিস্থিতি তৈরি করেছো, এই দায় তোমার, এই দায় অবশ্যই তোমাদের নিতে হবে। দায় স্বীকার করে তাদের চলে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সমাধান। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই শেষ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যেতে হবে, তাদেরকে একটা নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের বড় পৃষ্ঠপোষক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে ঘটনাবলী ঘটে গেছে, মানুষের প্রাণ গেছে এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমার লিখিত বক্তব্যে আপনি দেখবেন আমি এটাকে গণহত্যা বলা আছে। আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের তদন্তে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না। এসময় সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি সংগঠনের হামলার ঘটনা নিন্দা জানান তিনি এবং গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি করেন।

কোটা বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের সমস্ত আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের একটা আহ্বান, এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে যাবে। আর জনগণের যে আন্দোলন এই সরকারের চলে যাওয়া, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারকে চলে যেতে হবে। একই সঙ্গে এই মুহুর্তে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ডিবির খাবার ‘নাটক’ এর বিষয়ে মির্জা ফখরুল সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেয়া হয়েছিলো। আপনারা দেখেছেন, একটা খাবার নাটক করা হয়েছে, ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা খাবার নাটক তৈরি করা হয়েছে। ডিবি অফিসে একটা নামই হয়ে গেছে ভাতের হোটেল হিসেবে। এগুলো কখন, কোন সময়ে হয়? একধরণের ভ্যানক্রাসি সেই প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারের ওপরে এসে পড়ে। ডিবি সরকারেরে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধুমাত্র যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে তাদেরকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা এবং এই সমস্ত নাটক তৈরি করা। নিশ্চয়ই না। ডিবির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, টার্মস অব্ রেফারেন্স আছে তাদের কাজের এবং সেগুলো তাদের পালন করতে হয়।

তিনি বলেন, এখানে এই ধরনের নাটক, তামাশা তৈরি করে তারা গোটা জাতিকে ছোট করেছে, একটা মস্করা সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের মন্তব্যেও বলা হয়েছে এটা জাতির সাথে মস্তকরা করা হয়েছে। এটা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, ছাত্রদের নেতৃত্বকে হেয়প্রতিপন্ন ও মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য এই ধরনের একটা অসৎ উপায় তারা সংঘটিত করেছে।

একটা অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখানে (সরকার) আওয়ামী লীগ খুঁজে পাইনা। এটা মূলত এখন পুরোপুরিভাবে একটা অদৃশ্য শক্তি এ দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে, সেই শক্তির একটা সরকার। সমস্ত বাহিনীর প্রধানরা যে ভাষায় প্রকাশ্যে কথা বলেন, তাতে মনে হয় না যে, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশে রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যে, এদেশের প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো সরকার নেই। এখানে যে সরকারটা আছে সেটা হচ্ছে যারা এদেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দেশে একটা অরাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করছে তাদেরই সরকার এটা পরিচালনা করছে।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা

'ব্লু অরিজিন' রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন,শুভকামনা  জানালেন ইলন মাস্ক

'ব্লু অরিজিন' রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন,শুভকামনা জানালেন ইলন মাস্ক

কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু

কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু

ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট

ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল

বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত

বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত

‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !

‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !

মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০

মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

সাতক্ষীরা  সীমান্তে  চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ