লাল রঙে প্রতিবাদ
৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহতদের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে সরকারের সেই শোক ঘোষণাকে ‘শহীদদের রক্তের সাথে তামাশা’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বরং এর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিনে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, শহীদদের স্বীকৃতি না দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছে! সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন? যাদের শহীদ হওয়াকে আপনারা স্বীকৃতি দিচ্ছেন না; উল্টো তাদের সহযোদ্ধাদের গুম, ও গণগ্রেপ্তার করছেন! আপনারা যদি সত্যিই শোকগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমেই যারা এই শহীদদের রক্তের জন্য দায়ী তাদের বিচার করুন। শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেককে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনুন। তাহলেই আমরা বুঝব আপনারা আসলেই শোকাগ্রস্ত; শহীদদের রক্তের প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধাবোধ আছে। তার আগে এসব মায়াকান্না দেখাবেন না।
মাসুদ আরো বলেন, আপনারা শহীদদের পরিবারকে হেনস্তা করছেন, তাদের সহযোদ্ধাদের হেনস্তা করছেন, তাদের সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন; আবার আপনারা শহীদদের প্রতি মায়াকান্না দেখাচ্ছেন! আমরা সরকারের এই ঘৃণ্য কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করছি।
তাদের সেই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকেই সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে লাল রঙের ছবি যুক্ত কিংবা চোখে ও মুখে লাল কাপড় বাঁধা ছবি যুক্ত করে সরকার ঘোষিত শোক পালনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসিফ নজরুল, কামরুল হাসান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, কাজলী সেহরীন ইসলাম, সাইফুল আলম চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জামিল খান প্রমুখের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম দেখা গেছে। লেখকদের মধ্যে জাকির তালুকদার, চঞ্চল আশরাফ, মাহবুব মোর্শেদ, সালাহউদ্দিন শুভ্রসহ অনেকেই রয়েছেন এই দলে।
শিক্ষকদের মধ্যে সাইফুল আলম চৌধুরী লিখেছেন, এত মানুষের মৃত্যুর পরও কেন মানুষ কালোকে বেছে না নিয়ে লালকে বেছে নিল? আপনাদের ধ্বংসযজ্ঞ, ষড়যন্ত্র, তৃতীয় শক্তি, পানি ছিটানো, গুজব রোধ, নিরাপত্তা হেফাজত- এসব তত্ত্ব আর ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে এটা যে কত বড় শক্ত প্রতিবাদ, সেটা আপনাদের মতো বড় বড় ন্যারেটিভের জন্মদাতা ও প্রচারকের বোঝার ক্ষমতা নেই। কালো যেখানে শোকের প্রতীক, লাল সেখানে বিপ্লব আর ভালোবাসার রং। লাল শৌর্যবীর্য আর সাহসিকতার প্রতীক।’
আরও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীও ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম জুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ফেসবুক পেজে লাল ফ্রেম দেখা গেছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও তাঁদের প্রোফাইলে লাল ফ্রেম সাঁটিয়েছেন।
মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি: সারাদেশে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সকল আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশের শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও সকল নাগরিককে আমাদের কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আমাদের দাবী আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অভিভাবকদের মৌন অবস্থানে পুলিশের বাধা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ‘মৌন অবস্থান’ কর্মসূচি করতে গিয়েছিলেন একদল অভিভাবক। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে তাঁরা কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বাগান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিভাবকেরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন। বিক্ষুব্ধ এই অভিভাবকেরা আগামী শনিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
অভিভাবকদের এই কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের (শিশির) আহ্বায়ক রাখাল রাহা ও বাংলাদেশ সচেতন অভিভাবক সমাজের আহ্বায়ক আবু মুসলিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা মেডিকেলের সামনে অভিভাবকদের এই কর্মসূচির খবর পেয়ে সকাল থেকেই হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য। শিশিরের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা মেডিকেলের বাগান ফটকের সামনে গেলে পুলিশের শ’ খানেক সদস্য এসে আমাদের বাধা দেন। ১০ মিনিটের জন্য দাঁড়ানোর কথা বললেও তাঁরা দাঁড়াতে দেননি। তাঁরা প্রায় আমাদের গায়ের ওপর এসে পড়েন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলি। পুলিশের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তাঁদের অসহযোগিতায় আমরা কর্মসূচি করতে পারিনি।’
রাখাল রাহা আরও বলেন, ‘আমরা বাধা উপেক্ষা করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাই। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডসহ বেশ কিছু ওয়ার্ড পরিদর্শন করি। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা ৮০ শতাংশ আহত ব্যক্তিই বুলেটে বিদ্ধ। তাঁদের মা-বাবা করুণ অবস্থার কথা জানালেন। পরে হাসপাতালের আবাসিক সার্জনের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। আগামী শনিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি করা হবে বলে জানান রাখাল রাহা। তিনি বলেন, এই কর্মসূচি আর মৌন হবে না। এটি হবে সরব অবস্থান কর্মসূচি।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করার জায়গা নয়। এতে রোগীদের দুর্ভোগ হতে পারে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অন্য কোথাও গিয়ে মানববন্ধন করতে বলেছেন।’
জাবিতে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের মৌন মিছিল: কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন ‹বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন›র ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে যান। সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান তারা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। এ আন্দোলনটি ছাত্র সমাজের আন্দোলন। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহীদদের তথা যাদের জন্য শোক ঘোষণা করেছে তাদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত, সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্র সমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার ও নয় দফা দাবিতে মুখে-চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারি মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। একাত্তরের কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।›
ফার্মেসি বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে-সব রাজনীতিবিদ স্পষ্টভাবে একটি বার্তা বুঝে নিন, সংখ্যা কোনো বিষয় নয় যখন একটি শিশুর লাশ পড়ে যায়, তখন সব সচেতন মানুষ একত্রিত হয়ে যায়। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন, আমাদেরকেও বাঁচান।›
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দর্শন বিভাগের প্রফেসর রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর আদিল মুহাম্মদ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের প্রফেসর মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার এবং শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক। গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে মানববন্ধন করেন তারা।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজ উদ্যোগে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই কর্মসূচি আয়োজন করেছেন। কর্মসূচিতে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের সব বিভাগের প্রায় ৫০ জন শিক্ষক অংশ নেন। তাদের হাতে ‘নিরস্ত্র ছাত্র হত্যার বিচার চাই’, ‘দমন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা’, ‘নিরস্ত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে’, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে’ ও ‘শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষক’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর নোভা আহমেদ বলেন, আমরা আজ আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য দাঁড়িয়েছি। তারা আহত হচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমরা জানাতে চাই যে আমরা তাদের পাশে আছি। আমরাও তাদের অভিভাবক। আমাদের ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা করে। তাদের প্রয়োজনের সময় পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারফিউ চলুক বা না চলুক, ছাত্রদের পথে ঘাটে ধরা হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম ভয়ভীতি দেখানো চলতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আমরা এসবের অবসান চাই।
স্থাপত্য বিভাগের প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেছেন, একজন শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের দায়িত্ব শুধু ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না, শুধুমাত্র তাকে চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা না। বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক বিবেচনাবোধসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও বটে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক কর্তব্য।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মুশাররাত শর্মি হোসেন বলেন, আমরা একটি নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনের নিশ্চয়তা চাই, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে অ্যাকাডেমিক কাজ করতে পারে। ক্যাম্পাসের সামনে থেকে প্রিজনভ্যানে করে যদি শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে কীভাবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সাহস পাবে?
আইন বিভাগের শিক্ষক সাকিব রহমান বলেছেন, আন্দোলন করা প্রত্যেক নাগরিকের একটি সাংবিধানিক অধিকার এবং এই অধিকার আদায়ে রাষ্ট্র বাধা দিতে পারে না। কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওপর হয়রানি-নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের পাশে আছেন ও থাকবেন বলেও জানান তারা।
প্রতিবাদী গানের মিছিলেন পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি: ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা। মিছিল গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে যাওয়ার সময় আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির পর জিরো পয়েন্টের গোলাপ শাহ মাজার রোডে বসে পড়েন মিছিলকারীরা। সেখানে থেকেই প্রতিবাদী গান গাইতে থাকেন তারা। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে অবস্থানের পর সড়ক ছাড়েন ৩১টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে এর আগে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদ ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ২ আগস্ট শুক্রবার শোক মিছিল করার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদী গানের মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের এই অহিংস কর্মসূচিতে পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে বাধা দেয়। আমরা আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারে শোক মিছিল করব। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এখনই পদত্যাগ না করলে ছাত্র-জনতা আপনাদের ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাবে। সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন এই সংস্কৃতিকর্মী।
রাবির শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ: রাবি প্রতিনিধি জানান, শোক প্রকাশের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে বেঁধে প্রতিবাদ র্যালি ও সংহতি সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে র্যালি বের করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হোন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের রক্তে আজ রঞ্জিত। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ জনতার উপর যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে সরকার তা সবাই দেখেছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ড শুধু শিক্ষকদের নয়, সারা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ফলে সরকার ঘোষিত শোককে প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে বেঁধে আমরা প্রতিবাদ করছি। আশা করছি সরকার জনগণের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। ছাত্রদের আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝে অতিদ্রুতই সারাদেশে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যাল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিবে।
নিন্দা জানিয়ে চবি ৫৮ শিক্ষকের বিবৃতি
চবি সংবাদদাতা জানান, দেশজুড়ে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের নিন্দা ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৩০ বিভাগের ৫৮ শিক্ষক। গতকাল সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক পরিচয়ে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিগত বেশ কিছু দিন ধরে দেশে চরম অরাজকতা চলছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত ২০০ জনের অধিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে।
পাশাপাশি বর্তমানে আন্দোলন দমানোর লক্ষ্যে দমনপীড়ণমূলক হয়রানি, মামলা ও গণগ্রেফতার জারি রয়েছে। দমনপীড়নের এই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত তিনজন ছাত্র আল মাশনূন, দ্বিতীয় বর্ষ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ; সায়হাম মাহমুদ, নাট্যকলা বিভাগ ও রমজান শেখ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউ, ১ম বর্ষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এদের ছাড়াও আরো কিছু শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে। এসব ঘটনা অন্ত্যন্ত অযৌক্তিক ও উদ্বেগজনক।
খুলনায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
খুলনা ব্যুরো জানায়, সারা দেশে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরের শিববাড়ি মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। জানা যায়, ৯ দফা দাবিতে শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন খুলনার শিক্ষার্থীরা। ওই ঘোষণার পর শিববাড়ি মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল সকাল থেকেই শিববাড়ি মোড় ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একটি বড় মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শিববাড়ি মোড়ে আসেন। সেখানে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে তারা ওই মোড়ের চারটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কেএমপির চারটি থানায় চারটি নাশকতার মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৪০০ জনকে। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১০৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
টাঙ্গাইলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাঁধা
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে হামলায় আহত ও নিহতদের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মুখে ও মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে পূর্ব ঘোষিত টাঙ্গাইল শহরের রেজিষ্ট্রি পাড়া এলাকায় শাহীন স্কুলের সামনে থেকে বৈসম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই মিছিল বের করে। পরে মিছিলটি বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পৌছালে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
জানা যায়, বৈসম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা গতকাল সকল শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের মুখে এবং চোখে লাল কাপড় বেধে ছবি তুলে সেটি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া আহ্বান জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাথায় ও মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল বের করে।
হবিগঞ্জে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখান
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে হবিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় শহরের বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বিকেজিসি স্কুল) এর সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় হবিগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চোখে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ সমাবেশ অংশগ্রহণ করে। সামবেশে শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা ও “ আমার ছাওয়াক মারলু ক্যানে”সহ বিভিন্ন ধরণের সেøাগান সম্বলিত প্লেকার্ড নিয়ে হাটু গেড়ে প্রতিবাদ করে। তারা জানায়, বিনা উস্কানীতে শতশত শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুষ্টিয়ায় ছাত্রদের বিক্ষোভ
বিশেষ সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়ায় গত সোমবার দুপুরের পর হঠাৎ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির গাড়ির মহড়াও চলে এ সময়। তাদের সঙ্গে থাকেন ম্যাজিস্ট্রেট। বিকেলে চলে মোড়ে মোড়ে তল্লাশি। কাউকে সন্দেহ হলেই আটক করে নেওয়া হয় থানায়। এভাবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। তাদের অধিকাংশই ছাত্র। আটকদের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন। আর এতেই কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। সোমবার বিকেল তিনটার দিকে শহরের চৌড়হাস মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মসূচি পালনের জন্য কুষ্টিয়া ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পোস্ট দেখা যায়। কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল আলীম জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে কর্মসূচি পালন
কিশোরগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জে লাল কাপড় বেঁধে সড়কে কর্মসূচী পালন করেছে। গতকাল বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে শহরের পুরানথানায় অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলকারীরা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে সড়কে বসে অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন এবং বিভিন্ন দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্র্থীদের ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াট, ছাত্রলীগ, যুবলীগের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ ও খুনীদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবী জানাচ্ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এদিকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বিক্ষোভের সময় পুলিশ শহরের ইসলামিয়া সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশ নিরাপদ অবস্থান করায় কোন সংজ্ঞাত বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের সমন্বয়ক ইকরাম বলেন, ছাত্র সমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের দাবী মেনে নেয়ার আহবান জানাচ্ছি। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
পঞ্চগড়ে পুলিশের বাঁধা
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা, নির্যাতন ও হামলার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বীর নেতৃত্বে সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি মহাসড়কের পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন এলাকায় গেলে,আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে দুজন পরে দুইজনসহ চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।তবে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার রায় জানান, শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে কোন নাশকতায় সংশ্লিষ্টতা না পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সমাবেশে জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা কেউ কোন রাজনৈতিক দলের না ছাত্ররা সবাই ভাই ভাই, সাধারণ শিক্ষার্থী। দেশের জন্য জাতীর জন্য ছাত্ররা বহুবার রক্ত দিয়েছে। প্রশাসনের ভাইদের বলবো ছাত্ররা কোন অপরাধ করে নাই, যে তাদেরকে হত্যা, আটক, নির্যাতন করা হচ্ছে। আগামীতে সকল কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে এ শিক্ষার্থী।
কেশবপুরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত
কেশবপুর (যশোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কেশবপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী লাল ব্যানার ও লাল ফিতা মাথাই বেধে বিক্ষোভ মিছিল করে শহরের প্রধান সড়কে বসে পড়েন। এসময় সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন মোংলা এবং ভোমরা বন্দরের যোগাযোগ থমকে যায়। ঘণ্টা খানিক পর অবস্থান উঠিয়ে নিলে যান চলাচল আবার সাভাবিক হয়ে যায়। এর আগে কেশবপুর পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি পথ সভার মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিবাদ মিছিল
জাবি সংবাদদাতা জানান, মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মৌন মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদেও স্মরণে নির্মাণাধীন ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। ৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. ডশবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দর্শন বিভাগের প্রফেসর রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর আদিল মুহাম্মদ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের প্রফেসর মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা
কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু
ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল
বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত
‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !
মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে
কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন
ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?
রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের
টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল
লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু
কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা
সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ
"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট