শিক্ষার্থীদের এক দফা
০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবি ধাপে ধাপে এক দফায় এসে গেছে। আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে সরকার পতনের একদফার অসহযোগ আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অসহযোগ আন্দোলনের ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জনসমুদ্রে সর্বস্তরের মানুষকে রাজপথে নেমে আসা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত এবং আড়াইশোর বেশি ছাত্র-জনতা শহীদ হন, আহত হন কয়েক হাজার। এর মধ্যে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামিয়ে, বিজিবি-র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও বিরোধী দলের নেতাকে গ্রেফতার করে। দেশ-বিদেশে প্রতিবাদ এবং প্রাণহানি বন্ধের দাবিতে বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে পড়ে গোটা জাতি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরীক হতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পী, আইনজীবী, ডাক্তার, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, রিক্সা শ্রমিকসহ সর্বস্তরের শ্রমজীবী-পেশাজীবীরা। রাজধানী ঢাকার রাজপথ হয়ে পড়ে জনসমুদ্র। সারাদেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে হাজার হাজার ছাত্রজনতা রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন। আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড, হেলিকপ্টারের গুলির পরও পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন ’৬৯ এ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়; ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ১০ অক্টোবর জেহাদের মৃত্যুর পর সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে এলে ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ঘটে; বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজধানী ঢাকার রাজপথে যেন সেই দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। একই দৃশ্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে দেখা যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা যেন ভেঙ্গে পড়েছে। আন্দোলনে সামিল হতে সর্বস্তরের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা রাস্তায় নেমে এসেছেন। মহানগরীর সড়কের যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মানুষের স্রোতে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে পড়ে জনসমুদ্র। রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা, উত্তরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, সাইন্সল্যাব, বসুন্ধরা, শান্তিনগর, শাহবাগ সবখানে জনস্রোত, মানুষ আর মানুষ। সবশ্রেণি পেশার মানুষ রাজপথে নেমে গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে।
পুলিশের গুলিতে আড়াইশ’র বেশি শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ শহীদের পর গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। তিনি বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’ জবাবে শিক্ষার্থীরা সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সরকার পতনের এক দফার দাবি ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি জানিয়ে আজ রোববার থেকে বর্তমান সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনের আরেক অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ জানান, ‘আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই’। ইতোমধ্যেই সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন মেনে নিয়ে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমই বাতিল ঘোষণা করে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ। পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ যে সব জেলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে সেখানে পাল্টা হামলায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যে সব জায়গায় আইন শৃংখলা বাহিনী নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আইন শৃংখলা বাহিনীকেও বর্তমান সরকারের অন্যায় আদেশ-নির্দেশ না মেনে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শহীদ মিনারে এক দফার অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের এক দফা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং এই সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির বিচার। আমরা জেলের তালা ভেঙে আমাদের ভাইদের আনব। যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে এতে দেশের সর্বস্তরের জনতাকে যোগ দিতে হবে। এক দফা তথা সরকার পতনের আন্দোলনে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সম্মিলিত মোর্চা গঠন করব। আমরা আমাদের দেশের রূপরেখা ঘোষণা করব। রোববার থেকে সর্বত্র অসহযোগ আন্দোলন হবে। এই সমন্বয়ক বলেন, স্বৈরাচার সরকার যদি আন্দোলনের মুখে যদি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কারফিউ জারি হয় আমরা মেনে নেব না। এখন ছাত্র-জনতার এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন পালন করবেন। সরকার যদি জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, এটা জনগণ মানবে না। আইন শৃংখলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি অস্ত্র চালান তাহলে প্রতিরোধ হবে। আমরা সব গণহত্যার বিচার করব বাংলার মাটিতে।
এ সময় সরকার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘যেহেতু, বর্তমান সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে; নারী-শিশু-ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক কেউ এই গণহত্যা থেকে রেহাই পাননি; যেহেতু, সরকার এই হত্যাযজ্ঞের বিচার করার পরিবর্তে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে; যেহেতু, সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মরণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড সংঘটন করেছে; যেহেতু, ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-মজুরসহ আপামর জনগণ মনে করছে এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ বিচার এবং তদন্ত সম্ভব নয়; সেহেতু, আমরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবী ঘোষণা করছি, একই সাথে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’
অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে ছাত্র-জনতার প্রতি ১৫ নির্দেশনা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের জরুরি ১৫টি নির্দেশনা গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে প্রকাশ করা হয়।
জরুরী নির্দেশনাগুলো হলো-১। নাগরিকদের কেউ কোন ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না; ২। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোন ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না; ৩। সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন; ৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোন ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না; ৬। সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন; ৭। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দিবেন না! কোন ধরনের পণ্য খালাস করবেন না; ৮। দেশের কোন কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না; ৯। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না; ১০। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে; ১১। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোন ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধুমাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে; ১২। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সকল অফশোর ট্রান্জেকশন বন্ধ থাকবে; ১৩। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে; ১৪। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না; ১৫। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপনী-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন- ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১-১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে!
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতোই শিক্ষার্থীরা রাজধানীর আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর-১০ ও সায়েন্সল্যাব, শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করছেন। সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা। বাড্ডা, রামপুরার আফতাবনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে জড়ো হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউআইটিএস ও সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থান রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত হয়। এ সময় রামপুরা ও বাড্ডা থানার শতাধিক পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে দুপুরের দিকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, রায়ের বাগ, সাইনবোর্ড পর্যন্ত শত শত শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
বগুড়ায় এযাবৎকালের বড় বিক্ষোভ অংশ নেন অভিভাবকরা
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই নারী অভিভাবক ও নারী শিক্ষার্থী। আকাশ জুড়ে মেঘ। শহর ফাঁকা। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভ তেমন হবে না এমন ধারণা ছিল পুলিশের মধ্যেও। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনাকে উড়িয়ে এযাবৎকালের বড় বিক্ষোভ হয়েছে বগুড়ায়। গতকাল বিকেল ঠিক তিনটার দিকে শহরের মূল কেন্দ্র সাতমাথায় বিভিন্ন সড়ক দিয়ে মিছিল সহকারে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে গত শুক্রবার ও শনিবারের ছাত্র মিছিলে হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদাসীনতায় গভীর ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
যশোরে মানুষের ঢল
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্র-ছাত্রীসহ মানুষের ঢল নামে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টা থেকে যশোর শহরের পালবাড়ি মোড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সমবেত হতে থাকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ বিক্ষোভে শত শত অভিভাবক, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেন। শনিবার বেলা ১১টা থেকে যশোর শহরের পালবাড়ি মোড়ে জড়ো হয় যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার ও মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রধান ফটকে এসে মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ মহাসড়ক দিয়ে শেখপাড়া বাজার হয়ে আবার একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। পরে সমাবেশ শেষে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
ইবির ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর, এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে কর্মসূচির শেষ দিকে আন্দোলনকারীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয় ভেঙে দেয় বলে জানা গেছে। কার্যালয় গুড়িয়ে দিয়ে ভিতরে থাকা টিভি, চেয়ার এসব ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও ইবির দেশরত্ম শেখ হাসিনা হলের নাম ফলকের পাশে স্বৈরাচার লিখে দেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
জাবি সংবাদদাতা জানান, জাবিতে গতকাল শনিবার দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার বাহনগুলো অবরোধের আওতামুক্ত ছিল। পরে দুপুর দুইটায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। তখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ কর্মসূচিতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিওনসহ সকল শিক্ষার্থীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি এবং নয় দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়া দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল বরিশাল
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দুই ঘণ্টব্যাপী অবস্থান সহ বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা নগরীর সি এন্ড বি রোড ধরে নবগ্রাম রোড-চৌমহনীতে এসে কিছু সময় অবস্থান সহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেখানে বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল করে তোলে শিক্ষার্থীরা। অবরোধের সময় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহন সহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
ময়মনসিংহে আন্দোলনের মাঠে কওমি ছাত্র-শিক্ষক
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে আন্দোলনরত কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমেছে কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কওমি ছাত্র-শিক্ষকরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় খানকায়ে হুসাইয়িনা মাদানিয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহবুবুল্লাহ কাসেমি, মাওলানা কামরুল ইসলাম, শায়েখ আব্দুল মুমিন, মুফতি ইসমাইল মানসুর, মুহাদ্দিস আব্দুল আলীম, শরিফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নুর উদ্দিন সরকার প্রমুখ ।
মিছিল-সেøাগানে কুষ্টিয়া বিক্ষোভ
বিশেষ সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবক, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এ সময় মিছিল-শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে কুষ্টিয়া শহর।
চাঁদপুরে শিক্ষার্থী-জনতার ঢেউ বাধ ভেঙেছে
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, ছাত্র আন্দোলনে চাঁদপুরে শিক্ষার্থী-জনতার ঢেউ ভেঙেছে। নিশংস হত্যা এবং নির্বিচারে পুলিশের গুলির প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে সর্বস্তরের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা অংশগ্রহণ করেন।
বেলা ১১ টা থেকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময়ে শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রীদের ঘিরে রাখার চেষ্টা করেন। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত বিভিন্ন সড়কে হয়েছে প্রতিবাদ।
লক্ষ্মীপুরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, শনিবার চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝুমুর ইলিশ চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক অবস্থানে ছিল। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী লাঠি হাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
রংপুরে মিছিলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণ
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।
চাষাড়া চত্বরসহ বঙ্গবন্ধু সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে চাষাঢ়ায় জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা। পরে, তারা ২ নম্বর রেল গেটের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মন্ডলপাড়া পুল হয়ে আবারো চাষাঢ়া এসে জড়ো হয়।
এদিকে চাষাঢ়া পুরোটাই ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে যান চলাচল অনেকটাই থমকে গেছে। অনেকে তাই বিকল্প বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে শহরমুখী সকল যান চলাচল।
বরগুনায় মিছিলে শিক্ষার্থী-জনতার ঢল
বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনা জেলা শহরের টাউন হল চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। বরগুনায় মিছিলে শিক্ষার্থী ও জনতার ঢল নামে। এ সময় শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দেন। বরগুনা সরকারি কলেজ রোড থেকে গতকাল ১০টার দিকে মুশলধারের বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবককে যোগ দিতে দেখা গেছে। এসময় মিছিল-শ্লোগানে উত্তাল হয় বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বর।
বৃষ্টিতে ভিজে পাবনায় হাজারও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পাবনা জেলা ও চাটমোহর সংবাদদাতা জানান, পাবনায় ঝুমবৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ করেন হাজারও শিক্ষার্থী। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের আব্দুল হামিদ রোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই বিক্ষোভ মিছিলে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
ঝালকাঠিতে শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। শনিবার বিকেলে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ১ দফা দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। এসময় সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
জয়পুরহাটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে শহরের নতুনহাট এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের জিরো পয়েন্ট পাচুরমোড়ে ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক যানবাহন উল্টো পথে ফিরে গেছে।
বিক্ষোভের শহর ছিলো কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্ররা। বেলা বারোটায় কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরদয়াল কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বিক্ষোভের শহরে রূপ নেয় পুরো শহর।
রাজবাড়ীতে মিছিল শেষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-নাগরিক। মিছিলের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া করে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বড়পুর মোড় থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক সহ বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীর্ঘক্ষণ ধরে পান্না চত্বরে আসে।
নরসিংদীতে কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা
নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা জানান, খণ্ড খণ্ড মিছিল আকারে নরসিংদী ভেলানগর জেলখানার মোড়ে সমবেত হয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনরকম তৎপরতা দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা রাস্তায় গাছ ফেলিয়ে আগুন ধরে বেরিগেট দিয়ে রাখে।
পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় জজ কোর্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে শতশত গাড়ি আটকে পড়ে।
সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আজহারুল ইসলাম জুয়েল, শিক্ষক নেতা রবিউল ইসলাম, আইনজীবি হাবীব আল আমিন ফেরদৌস, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী সরকার হায়দার প্রমুখ।
পটুয়াখালী-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীতে শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়কে অধাঘণ্টা ব্যাপী বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ পটুয়াখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় কিছু সময়ের জন্য ঢাকা পটুয়াখালী মহাসড়ক যান চলাচল বন্ধ থাকে।
সিংগাইরে বিক্ষোভ
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম শাহাদৎ আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। শিক্ষার্থীরা চারিগ্রাম চৌরাস্তা থেকে মিছিলটি বের করে স্থানীয় সড়ক প্রদক্ষিণ করে চারিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এসে শেষ হয়।
ধামরাইয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে ভুয়া ভুয়া সেøাগান
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেও শ্লোগান দেয় তারা। পুলিশ থানা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতি দেখে ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দেয় বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীরা। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢুলিভিটা এলাকায় সড়কের মাঝখানে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে।
পটুয়াখালীতে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি করে বিক্ষোভ
দুমকী (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল ১০টায় লেবুখালিস্থ শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এসময় তারা ৯ দফা দাবিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রী পরিষদের পদত্যাগ দাবি করে। এছাড়াও সরকার পদত্যাগ করে সেনাবাহিনী সরকারের দাবি তুলে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
দিরাইয়ে ছাত্র-জনতার মিছিল
দিরাই (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে গতকাল দুপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে দিরাই পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় হাতে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন শ্লোগানের প্লাকার্ড শোভা পায়। মিছিলে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র ও জনতার অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। শান্তিপূর্ণ এ মিছিলটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে শেষ হয়েছে।
মিছিল আর সেøাগানে মুখরিত হিলি
হিলি (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দিনাজপুরের হিলি হাকিমপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল ৪ টায় হিলি স্থলবন্দরের প্রাণ কেন্দ্র চার মাথায় জড়ো হয় তারা। শ্লোগানের শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারমাথা এলাকা।
কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবরোধের চার ঘন্টা পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কোটা সংস্কার ও নয় দফা দাবিতে উপজেলার চন্দ্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। হাজারো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শনিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ থাকে।
সিংগাইরে শিক্ষার্থীদের মিছিল
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না এ শ্লোগানকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম শাহাদৎ আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা চারিগ্রাম চৌরাস্তা থেকে মিছিলটি বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চারিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শেষ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ
ব্রাহ্মণবাড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে জড়ো হওয়ার হতে থাকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা মহাসড়কের অবস্থান নেয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কুট্টা পাড়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্বরোড় মোড়সহ আশপাশ এলাকা প্রদিক্ষণ করে।
পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশ ও ডিবি সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেন। তবে আন্দোলন চলাকালে কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ। গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ প্রেসিডিয়াম সদস্য সুফি আহমদ শাহ মুর্শেদ।
লালপুরে বিক্ষোভ মিছিল
লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, লালপুরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল ৩টার দিকে উপজেলার বিলমাড়িয়া বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়। বিলমাড়িয়া বাজার থেকে মিছিল নিয়ে লালপুরের দিকে অগ্রসর হয়ে মোমিনপুর ঝাপরা-বটতলায় এসে শেষ হয় বিক্ষোভ মিছিল ।
মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ
পদ্মাসেতু উত্তর, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি, উদীচী শিল্পীগোষ্টী ও প্রগতি লেখক সংঘের আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বেলা পৌনে একটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকার-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেইট এলাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় শিক্ষার্থীরা নানা শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।
সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শতশত শিক্ষার্থী শহরের খুলনা রোড মোড়ে উপস্থিত হন। পরে একসাথে বিশাল মিছিল নিয়ে জজ কোর্টের সামনে দিয়ে নিউমার্কেট চত্বর হয়ে পুনরায় খুলনা রোড মোড়ে হাজির হন। একইসাথে আজকে অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা