ধানমন্ডির ৩২ নম্বর, পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আগুন
০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম
ছাত্র জনতার আন্দোলনেরমুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দেয়া আগুন ও ভাংচুরের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪০ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত শতাধিক। অপরদিকে উত্তরা পূর্ব থানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১০ জন। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডির কার্যালয় ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর একাধিক থানাসহ শতাধিক স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, ইমাজেন্সি মর্গে ৪০টি লাশ রয়েছে। যাদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া উত্তরায় আরো ১০জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া গুলশানের বনানীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বাড়ি এবং সাবেক অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামাল টাওয়ার ভবনে আগুন দিয়েছে জনতা। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকার আওয়ামীলীগের কার্যলয়, বঙ্গবন্ধু যাদুঘরসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার বাসভবন ও কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন আন্দোলনর সাধারণ মানুষ। ভোটবিহীন ক্ষমতা দখল করে রাখা সরকারের অনৈতিক নির্দেশ পালন করে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করায় একাধিক থানাও ঘেরাও করে তারা।
গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এর আগেই বেলা ৩টার দিকে রাজধানীতে ধানমন্ডির ৩/এ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এর পর পরই বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। একদিকে সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিলো, অপরদিকে বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দেয়। শুধু তাই-না, আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাশের গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় একই সময় ঢাকার বিজয় সরণিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। শত শত মানুষকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে দেখা যায়। এরপরই ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেনে বিক্ষুব্ধ জনতা। কামালের বাড়ির ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েন। ভেতরে তারা ভাঙচুরও করেন। পরে কিছু কিছু মালামালে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
এছাড়াও শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরে উত্তেজিত জনতা রাজধানীর বাড্ডা থানায় আক্রমণ করে। জনরোষ থেকে বাঁচতে একের পর এক গুলি ছুড়ে পুলিশ। হামলা ও গুলির ঘটনায় কয়েকজনের হতাহত হন। বিকেল ৩টার শুরু হওয়া সংঘর্ষ বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। পুলিশ গুলি ছুড়লে ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় অবস্থিত বাড্ডা থানার চতুর্দিক থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও আন্দোলনকারীরা ঘিরে রাখেন। এতে থানায় অবরুদ্ধ হন পুলিশ সদস্যরা তারা ওসির নেতৃত্বে গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। আন্দোলনকারীরাও বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে মুহুর্মুহু ইটপাটকেল ছুড়ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, বাড্ডা থানার পুলিশ এতদিন স্থানীয় এলাকাবাসীকে খুবই অত্যাচার নির্যাতন করেছে। এখন সরকার ক্ষমতা ছাড়লেও তারা মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করছে না, বরং মানুষকে গুলি করে।
এদিকে যাত্রাবাড়ি থানারও ছিলো একই চিত্র। যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর একের পর এক নির্যাতন চালায়। গণ গ্রেফতার, মিছিলে লাঠিপেটা গুলিসহ গণ গ্রেফতার চালিয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত ছিলেন সেখানকার স্থানীয় মানুষ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষোভরতরা থানা ঘেরাও করে। পুলিশ ভেতর থেকে গুলি চালায়। এতে কয়েকজন হতাহত হয়। এছাড়াও আদাবর থানা, খিলক্ষেত থানা, পোস্তগোলা, উত্তরা, মিরপুর, তেজগাঁওসহ অনেক স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সোমবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দেয়াল টপকে পালাচ্ছেন। এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। তবে পুলিশ সদর দপ্তরে এই মুহূর্তে ছিলেন না আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন। এছাড়াও আ’লীগ সরকারকে সমর্থনকারী বিভিন্ন মিডিয়ায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিকেলে বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোনের একাত্তর টিভির কার্যালয় এবং হাতিরঝিলে মাইটিভির স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়া ডিবিসি নিউজ, এটিএন বাংলা ও সময় টেলিভিশনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, ছাত্র জনতার আন্দোলনেরমুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়। তারা সবাই আনন্দ মিছিল করে পায়ে হেটে শাহবাগের দিকে রওনা হন। একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, রায়েরবাগ এলাকার হাজার হাজার জনতা মিছিল নিয়ে সড়ক অতিক্রম করছিলেন। এর আগে সকালে তারা শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধারমুখে পড়েন। এসময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। দুপুরের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এরই মধ্যে দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর দেশ ত্যাগের খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা আবারো রাস্তায় নেমে আসেন। হাজার হাজার জনতা রাস্তায় জড়ো হন। অনেকে আবার শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতার একদল যাত্রাবাড়ী থানা ঘেরাও করে। তারা প্রথমে থানার সামনে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়। সন্ধ্যার পরে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। এতে প্রায় দুই শত লোক গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেয়ার পর এবং পথে ১০ জন নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও বাড়িতে হামলা হয়। ভবনটির বিভিন্ন তলায় ও রুমে ভাংচুর করা হয়েছে। পরে পুরো ভবনে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবনের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও ভাংচুর করা হয়েছে। আশপাশের ভবনেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিল। পরে পরিস্থিতি বুঝে তারা বেরিয়ে যান। দুপুর ৩টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা হয়। আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাংচুর চালায়। তারা নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত উঠে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। অন্যদিকে, বেলা আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির ৩/এ সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা হয়। এসময় সেখানে দলটির কোনও নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না। তবে কার্যালয়টির তিনজন কর্মচারী থাকলেও হামলার কয়েক মিনিট আগে বেরিয়ে যান।
রাজধানীর ধানমন্ডির সুধা সদনেও আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। জানাগেছে, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুধা সদনে ভাংচুর করা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে আগুনও দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে যে যার মতো নিয়ে চলে যান।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। সূত্র জানায়, ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েছেন। ভাংচুর শেষে ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে চলে যান। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে পড়েন সাধারণ জনতা। এসময় তাদের প্রধান বিচারপতির ব্যবহৃত আসবাবপত্র যে যার মত নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইউএনও কাবেরী, উপজেলা প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
বাংলাদেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মিঠুন চক্রবর্তী
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জমি দখল করে ছাদ ঢালাই
গুচ্ছ নয়, সঠিক সময়েই হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা - জবি শিক্ষক সমিতি
২৯ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
সোমবার বিপিএলের মিউজিক ফেস্ট, গাইবেন রাহাত ফাতেহ আলী খান
নকলায় শহীদ জিয়াউর রহমান স্মৃতি সংঘের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
রাবিতে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার হিসাব না দেওয়ার অভিযোগ, সাময়িক অব্যাহতি
রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত
স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন
মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ