পালিয়েছেন হাসিনা
০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম
২২ জুলাই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ ঘোষণার ১০ দিনের মাথায় গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা। অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের গণঅভ্যুত্থান দেখেছে জাতি। ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের ৩৪ বছর পর জাতি ফের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন দেখলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণআন্দোলন রূপ নেয়ায় ‘মাদার অফ মাফিয়া’ ও ‘দুর্নীতির রানি’ খ্যাত শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গেছেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আইয়ূব খান এবং ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলেও বিদেশে পালিয়ে যাননি। তারা দেশেই থেকেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে জনরোষের মুখে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। প্রথমে কোলকাতা যেতে চাইলে মমতা ব্যানার্জী আগ্রহ না দেখালে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা যান। সেখান থেকে নয়াদিল্লি যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ডলার ভর্তি কয়েকটি ট্রাঙ্ক নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। এ সময় তিনি দেশবাসীর জন্য তার একটি বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু গণভবনের বাইরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-জনতা যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে আশঙ্কায় বক্তব্য রেকর্ড করতে পারেননি। শেখ হাসিনার পালানোর পর পাল্টে যায় দেশের দৃশ্যপট। স্বৈরাচারী জগদ্দল পাথর যে মানুষের মাথা থেকে নেমে গেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়ের হাটবাজারগুলোতে মিষ্টির দোকানের মিষ্টি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির রানি হাসিনা পালিয়েছেন খবর ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং দলবাজ আমলা ও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধর ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। শুধু তাই নয়, লাখো জনতা বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় অপকর্মের সহযোগী মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের কথা চিন্তা করেননি। ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-পুলিশকে ব্যবহার করে ‘পাতানো’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যাদের চারপাশে রেখে দীর্ঘ ১৬ বছর নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, জুলুম-নির্যাতন করেছেন, জনগণের ওপর স্ট্রীম রোলার চালিয়েছেন, সহযোগীদের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারে সহায়তা করেছেন, দেশ ছাড়ার সময় তাদের কারোরই ভবিষ্যৎ ‘পরিণতি’র কথা চিন্তা করেননি। এমনকি ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি পালিয়ে গেলেন। তার পুত্র বিতর্কিত সজিব ওয়াজেদ জয় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘মা আর জীবনে রাজনীতি করবেন না’।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে দেশবাসীকে পাক হানাদার বাহিনীর বন্দুকের মুখে ফেলে রেখে শেখ মুজিবুর রহমান যেমন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থান করে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেফতার হয়ে নিজেকে নিরাপদ করেন; অনেকটা সে রকমই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জ্বলন্ত আগুনের মুখে ফেলে পালিয়ে গেলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করেন শেখ হাসিনা। কারফিউ জারি করে দলের গুণ্ডাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে হত্যা করেন। কিন্তু ছাত্রদের সঙ্গে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এলে বিপাকে পড়ে যান। শিক্ষার্থীদের সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে বেলা আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা রয়েছেন।
ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ৩৬ মিনিটে ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে নামে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান। এই এয়ারবেসটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। বিমান বাহিনীর ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড এয়ারবেসটির দেখভাল করে থাকে। একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি মালবাহী (কার্গো) বিমানে শেখ হাসিনা গাজিয়াবাদে নামেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা এবং কয়েক জন অফিসার। জল্পনা ছিল যে, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে শেখ হাসিনার বিমান। কিন্তু পরে জানা যায়, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে রাজধানী লাগোয়া গাজিয়াবাদের বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, সোমবার রাতেই তিনি লন্ডনের উড়াল ধরতে পারেন। তার পরে জানা যায়, যুক্তরাজ্য তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
শেখ হাসিনা পালানোর পর গতকাল দুপুরে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়েন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণভবনের ভেতরে ঢুকে তারা শেখ হাসিনার স্মৃতি খুঁজতে থাকেন। গণভবনের মাঠে তাঁদের হাত উঁচু করে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তারা সেøাগান দিচ্ছেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁদের অনেককে গণভবনে শেখ হাসিনার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। অনেকে আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। কারো মাথায় টিভি, কারো মাথায় সোফা, কারো হাতে কবুতর, কারো হাতে মাছ যে যেভাবে পারছেন শেখ হাসিনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে উল্লাস করছেন, ক্ষোভ ঝাড়ছেন। বিজয় সরণিতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা হয়।
শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায়। ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী সরকারের সহায়তায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এরশাদের অনুকম্পায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
মূলত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে কারা এমপি হবেন আগেই সে তালিকা করা হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন হয় একতরফা, যেখানে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে দলীয় কর্মী বাহিনীর মতো ব্যবহার করে এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করে ২০১৪ সালে প্রার্থী ও ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ক্ষমতা গ্রহণ করেন তিনি। ওই সময় প্রার্থী না থাকায় এবং জনগণে ভোট দিতে না যাওয়ায় ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর জনরোষের ভয়ে তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তিনবছর নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেননি। যারা গেছেন তাদের অনেকেই গণধোলাই খেয়েছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ওই নির্বাচন সব দল অংশ গ্রহণ করলেও নির্বাচন আগের রাতেই আমলা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করেন। এ নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে সারাবিশ্বে পরিচিতি পায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এ নির্বাচনও বিতর্কিত। এতেও প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজ দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আয়োজন করা হয়। নির্বাচনে শতকরা ১০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে না গেলেও নির্বাচন কমিশন প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ঘোষণা করে। পরে সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এ নির্বাচনটিকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেন। এ ডামি প্রার্থী ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের ৬ মাসের মাথায় ব্যাপক ছাত্র ও গণবিক্ষোভের মুখে তিনি গতকাল পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে আগরতলা যান, সেখান থেকে ভারতে চলে যান।
শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি ট্রানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিআইটিসহ অসংখ্যা দৃশ্যমান স্থাপনা করেন। এসব স্থাপনা নির্মাণে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ছিল ১২৭০০ টাকা। অথচ এখন মানুষের মাথাপিছু ঋণ ১৫০০০০০ টাকা। বড় বড় প্রকল্প করে অর্ধেক টাকা লুটপাট করে নিজের লোকজনকে দিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। অথচ দেশের পাটকল, সবগুলো চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছেন। কর্পোরেট হাউজের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সিণ্ডিকেট গঠন করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে তাদের হাতে তুলে দেন। প্রশাসনে মাফিয়া তন্ত্র কায়েম করেন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করায় দেশের কোটি কোটি মানুষ সংসারের খাবার যোগান দিতে পারছেন না।
যেভাবে পতন : ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা ‘সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল’ পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ওই পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল। আদালতের রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুতে সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই সদ্য বিদেশে পলাতক শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’ এবং ‘চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার’ সেøাগান দেয়। এর পরের দিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে আন্দোলনকারীও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসব হামলায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাইয়িদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন ঢাকা থেকে স্ফুলিঙ্গের মত পুরো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ দিয়ে ও ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হয়। সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে সেনাবাহিনীকে নামায়। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ২৬৬ জনের অধিক নিহত হন। এবং পুলিশ ৫০০ মামলা করে ১০৫০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে। ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ২৩ জুলাই এই বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৩ অগস্ট ফের আন্দোলন শুরু হলে ফের উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। এবার আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি তোলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই। এবার শুধু ছাত্রছাত্রীরা নয়, সাধারণ মানুষও অংশ নেয় এই আন্দোলনে। একই সঙ্গে ডাক দেওয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের। ৪ অগস্ট আন্দোলনে সহিংসতায় ১৪ জন পুলিশসহ একশ’ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। তারা যাকে দেখে তাকেই গুলি করে। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের পাশে আসে সেনাবাহিনী। হত্যার নিন্দা করে সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক সেনাপ্রধান, জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, ‘সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে আছে’। ৫ আগস্ট ‘চূড়ান্ত প্রতিবাদ’ হিসেবে ‘রোড মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেখ হাসিনা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
হাসিনার রাজনীতি : শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিকে দীর্ঘ ৪৪ বছর আধিপত্য দেখিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সময় বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পিতার মৃত্যুর পর দেশে ফেরেননি। স্বেচ্ছায় ভারতের দিল্লিতে ৫ বছর ছিলেন। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের ভাঙ্গন ঠেকাতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অতঃপর জিয়াউর রহমানের অনুকম্পায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি আওয়ামী লীগকে এক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেছেন। দলের কোনো আদর্শ নীতি নৈতিকতা নেই, শেখ হাসিনা যা বলবেন সেটাই নীতি এই অবস্থায় চলছে দলটি। তিনি ক্ষমতায় এসে ভারতের ইন্ধনে জাতিকে দুই ধারায় বিভক্ত করেছেন। দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে প্রতিবেশী দেশ ভারত যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন। এ জন্য অহংকার করে বলতেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তারা সারাজীবন মনে রাখবে’।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইউএনও কাবেরী, উপজেলা প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
বাংলাদেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মিঠুন চক্রবর্তী
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জমি দখল করে ছাদ ঢালাই
গুচ্ছ নয়, সঠিক সময়েই হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা - জবি শিক্ষক সমিতি
২৯ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
সোমবার বিপিএলের মিউজিক ফেস্ট, গাইবেন রাহাত ফাতেহ আলী খান
নকলায় শহীদ জিয়াউর রহমান স্মৃতি সংঘের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
রাবিতে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার হিসাব না দেওয়ার অভিযোগ, সাময়িক অব্যাহতি
রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত
স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন
মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ