২০১৭ সালের পর পদায়নকৃত নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি

ইসলামী ব্যাংকে বিক্ষোভ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের লুটপাটের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে ২০১৭ সালের পর নির্বাহী পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা পদায়ন হয়েছে তাদেরও আর ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। সূত্র মতে, মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের হেড অফিসের সামনে ব্যাংকটির গত সাত বছরের বঞ্চিত নেতারা সকালে জড়ো হন। তখন তারা এতদিন বঞ্চনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ইসলামী ব্যাংকের সিবিএ নেতা আনিসুর রহমান বলেন, আপনারা শান্ত হন। দখলকৃত ইসলামী ব্যাংক খুব দ্রুত সময় ফিরে আসবে। ২০১৭ সালের পরে যত এক্সিকিউটিভ এসেছে আর এই ব্যাংকে ঢুকতে পারবে না। এটা এমডি মহোদয় সমর্থন দিয়েছেন; আমাকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন।
সেখানে বলা হয়, ২০১৭ সালের পর থেকে সকল অবৈধ পরীক্ষাবিহীন নিয়োগ বাতিল করা হবে। একইসঙ্গে এই সময় যাদের অবৈধভাবে চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাদের চাকরি পুনরায় দেয়া হবে। একইসাথে যারা গত সাত বছরে প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের যথাযথ প্রমোশন ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
ইসলামী ব্যাংকের অপারেশন ইউংয়ের হেড এসএভিপি ড. কামাল উদ্দিন জসিম বলেন, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি ছাত্রদের মাধ্যমে। প্রজ্ঞার সঙ্গে এই অর্জন তুলে নিতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের কাছে খুবই স্মরণীয়। আমাদের মর্যাদা পুনরায় ফিরে পেতে হবে, এটা আমরাই পারবো। এছাড়াও কামাল উদ্দিন বলেন, এমডির সঙ্গে কথা হয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে সকল অবৈধ নিয়োগ বাতিলের কাজ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, জামায়াতমুক্ত করতে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করা শুরু হয় ২০১৬ সালের জুন থেকে।
ওই বছরের ২ জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি নতুন নতুন কোম্পানি তৈরি করে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকটির শেয়ার কিনে নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কোম্পানি। এসব কোম্পানির পক্ষে ব্যাংকটিতে বসানো হয় পরিচালক।
বর্তমানে ব্যাংকটির বেশির ভাগ পরিচালক চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। মালিকানা বদলের পর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সাবেক সচিব আরস্তু খানকে, তিনি এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষে নিযুক্ত পরিচালক ছিলেন।
ব্যাংকটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মানতে না পারায় আরস্তু খান পদত্যাগ করেন। পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক নাজমুল হাসানকে। জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল পর্যন্ত একরকম নির্বিঘ্নে ব্যাংকটি পরিচালনা করে আসছিল।
২০১১ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন নিয়ম করে, তালিকাভুক্ত কোনো পরিচালক হতে হলে ওই পরিচালকের হাতে কোম্পানিটির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এ বিধান করার পর ব্যাংকটিতে জামায়াতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। আর ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকটিতে ঋণ অনিয়মের নানা ঘটনা শুরু হয়। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকেই এর শুরু। এদিন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে ‘নীরব অভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যা দেয় ব্রিটেনের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট। ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের পর থেকে ভেঙ্গে পড়েছে সুশাসন। মন্দ ঋণ, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ, ফান্ড ডাইভারশনসহ নানা ধরনের অনিয়মে বিপর্যস্ত ব্যাংকটি। ব্যাংকটিতে এখন অনিয়মই যেন নিয়ম। নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে লোপাট হয়ে গেছে ব্যাংকটিতে গচ্ছিত গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা। এক সময়ে অন্যান্য ব্যাংক যখন আমানতের জন্য গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন তখন গ্রাহকরা আমানত রাখার জন্য হুমরি খেয়ে পড়তেন ইসলামী ব্যাংকে। তারাই এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ব্যাংকটির তারল্য সঙ্কট নিয়ে ভাবতে হয়নি, সেই ব্যাংকটিই বিভিন্ন দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারল্য সংগ্রহে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা নেয়ার পরও নগদ অর্থ সঙ্কটে ভুগছে ইসলামী ব্যাংক। পরবর্তীতে সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের দ্বারস্থও হতে হয় ব্যাংকটিকে। সেখান থেকেও এক হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বেসরকারিখাতে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
কুমারখালীতে রাতের আঁধারে সড়কের অর্ধশতাধিক গাছ কর্তন
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ