সচিবালয়ে বিএনপিপন্থীদের মিষ্টি বিতরণ
০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আওয়ামী সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে প্রশাসনে কর্মকর্তারা পদবঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এছাড়া সচিবালয়ে জরুরি এক আলোচনা সভায় নতুন করে সংগঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে হাসিনাপন্থিদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পদোন্নতি বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ও আহত ছাত্রদের এবং তারেক রহমানের জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া গুজবে যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী সচিবালয় থেকে আগেই চলে গেছে তাদের বিষয় নজর রাখা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে মন্ত্রীদের রুমগুলো সব ফাঁকা পড়ে আছে। সেখান থেকে সরানো হয়েছে সামনের নেইম-প্লেটগুলো। গত রোববারও মন্ত্রীদের রুমগুলো ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারী, নেতা-কর্মীদের পদচারণা ও জাঁকজমকপূর্ণ। গতকাল রুমগুলো ছিল ফাঁকা। ক্ষমতার পালাবদলের পর সরকারি অফিস খোলার প্রথম দিনে গতকাল মঙ্গলবার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের কোনো মন্ত্রণালয়ে সকল কর্মকর্তারা আসলেও বিভাগে মন্ত্রী ছিলেন পালতক। তবে কয়েকজন সচিব অফিস করলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা জনপ্রশাসন সচিব আসেননি। সচিবালয়ের ভেতর-বাইরে কোথাও দেখা যায়নি পুলিশও। মন্ত্রী-সচিবদের কয়েকজন গানম্যানের দেখা মিললেও তাঁরা ছিলেন সাদা পোশাকে। নিরাপত্তা নেই, হামলা হতে পারে’ এমন গুজবের অজুহাতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয় ছেড়েছেন দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যেই। তার আগেই সব মন্ত্রীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সচিবালয়ের মূল ফটকে পাহারায় ছিলেন কয়েকজন সেনাসদস্য। সচিবালয়ে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে টাঙানো বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি, ব্যানার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। বিকালে সকল ভবনের দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর পরে সচিবালয়ের বাহিরে কর্মরত থাকা ১৯জন কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বদলীর আদেশ জারি করা হয়েছে। পরে তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। সচিবালয়ে পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, আমরা আজ একটি বাস্তবতার কথা বলতে চাই। গত নির্বাচন এবং চারদিন আগেও দেখেছি আপনারা অনেকেই দালালি করেছেন। সরকারি এমপি-মন্ত্রীদের পিছু পিছু ঘুরেছেন। আজকের এই আলোচনায় এমন সুবিধাভোগী কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী থাকলে বের হয়ে যান। যদি এমন কেউ থাকেন তাহলে আপনার বিবেককে প্রশ্ন করেন এই ১৫ বছরে আপনারা কি করেছেন। তা না হলে আপনাদের কিছু হয়ে গেলে সে দায় আমরা নেবো না। তারা বলেন, এ আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে, যেসব ছাত্র ভাইয়েরা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তারা জীবন দিয়ে আমাদের মুক্তি দিয়ে গেছে। আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চাই না। যারা প্রাণ দিয়ে এই দেশেরে স্বাধীনতা এনেছে তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আগামীতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সরিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হবে। তারা আরও বলেন, আমরা এতদিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অনেক মেধাবী কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। অবিচার করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জানান,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অফিসে আগুন লেগেছে, এমন গুজব খবর শুনে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই সচিবালয় ছাড়তে শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুই-একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে থাকার আহ্বান জানালেও বেশির ভাগই বেরিয়ে যান।
আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয় সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেতারা এবং বিএনপি পন্থী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং বর্তমান কর্মকর্তার বক্তব্য রাখেন, সাবেক কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল, সাবেক যুগ্মসচিব এহসান, খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ফরিদুর রহমান,সাবেক এপিএস ড,সুরাতুজ্জামান,সমিতির মুজাহিদুল ইসলাম, কর্মকর্তা আবু তোহাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যুগ্ম সচিব জানান,এখনো ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি ষড়যন্ত্র চলছে আপনাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সচিবালয়ে সাধারণত নিরাপত্তা দেয় পুলিশ বাহিনী, কিন্তু আজ কোনো পুলিশ দায়িত্বে নেই। সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য আছেন তাও অনেক কম। এ কারণেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সচিবালয়ে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। কোনো জায়গা থেকে আতঙ্ক বা গুজব ছড়ানো হয়েছে, তাই তারা চলে যাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, মন্ত্রিসভা ভেঙে যাওয়ার পর সচিবালয় ছিল মন্ত্রীশূন্য। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা এলেও, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন সচিবসহ বেশির ভাগ সচিবকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সচিবালয়ে আসেনি। যারা এসেছেন তারাও কোনো পর্যায় থেকে নির্দেশনা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ একে অন্যের রুমে কথা বলে সময় কাটাচ্ছেন, উদ্বেগও আছে তাদের মধ্যে। সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পিএস এবং গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে এলেও নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান না করে, অন্য রুমে সময় কাটাচ্ছেন। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, সরকার বদল হওয়ায় সদ্য সাবেক সরকারের সময় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অপ্রীতিকর ব্যবহার করতে পারেন। সচিবদের মধ্যে আইন সচিব, শিক্ষা সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পানি সম্পদ এবং বাণিজ্যসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব সচিবালয়ে এসেই হাজিরা খাতা সই করে চলে গেছেন। তবে দপ্তরে গিয়ে অনেককে পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (নিরাপত্তা) শাহে এলিদ বলেন, সবাই অজানা কারণে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের কে ছুটি দিয়েছেন? দলে দলে লোকজন চলে যাচ্ছেন! কেন যাচ্ছেন কিছুই বলতে পারছি না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ