অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অপেক্ষা
০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সোমবার ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার কথা জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ লক্ষ্যে গত সোমবরাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রথম দফায় সেনাপ্রধান এবং দ্বিতীয় দফায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। একই উদ্যোগের কথা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। এই উদ্যোগের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে কবে, কখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে এবং এই সরকারের কারা কারা থাকছে তা নিয়ে ধোয়াশা কাটেনি। এদিকে দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি প্রেসিডেন্টের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
একই দাবিতে গতকাল এক ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আবদুর রশিদ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বৈরাচার শাসকের পতন হয়েছে। এই দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে অতি দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ড. ইউনূসকে উপদেষ্টা করে যে সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন, তা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আরেক সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, আমাদের এই বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িকমুক্ত। এখানে কোনো হত্যা হবে না, জুলুম হবে না, অত্যাচার হবে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। দেশের ছাত্র-জনতা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে হলে দ্রুত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামালউদ্দিন বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে ছাত্রদের যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়, তার মধ্যে এই প্রথম অরাজনৈতিক ছাত্রদের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে। ছাত্ররা অতি দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি জানিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের সংগ্রামের ফসল যাতে বেহাত না হয়, তার জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন। ছাত্রদের সঙ্গে তাঁরা শিক্ষকেরা সংহতি জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বঙ্গভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, প্রফেসর তানজীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। এসময় সেনাপ্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গভবনে যান। সন্ধ্যা ৬ টার পরপরই সেনাবাহিনীর একটি মিনিবাসে করে সমন্বয়কদের বঙ্গভবনে প্রকাশ করতে দেখা যায়। এসময় তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে অন্য একটি গাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
বঙ্গভবনে ১৩ সমন্বয়ক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ১৩ সদস্যের একটি টিম বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসিফ নজরুল এবং প্রফেসর তানজীমউদ্দিন রয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে আমরা বিস্তারিত জানাবো।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। এতে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি- (ক) তিনি কোনো সময়ে প্রেসিডেন্টের নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’ অন্য মন্ত্রীদের পদের মেয়াদ নিয়ে সংবিধানের ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলি-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন। “মন্ত্রী” বলিতে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত।’
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই আলোচনা চলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন? এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রেখে একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ড. ইউনূস উভয় দিক থেকেই ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা পদ নিতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ব্যক্তির প্রস্তাব ও তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে বেশ কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল- এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর বাইরে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূইয়া, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুলসহ আরো বেশকিছু নাম।
ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে শিক্ষার্থীদের রূপরেখা: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে এক ভিডিওতে এই রূপরেখার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ভিডিওতে নাহিদের পাশে আসিফ ছাড়াও আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ছিলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবের জন্য তাঁরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন। জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁরা এখনই একটি রূপরেখা ঘোষণা করছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।
নাহিদ বলেন, তাঁরা সকালের মধ্যেই এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চান। প্রেনিডেন্টের কাছে আহ্বান থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও তাঁরা সকালের মধ্যে ঘোষণা করবেন।
এই ছাত্র নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে তাঁদের অভ্যুত্থান রক্ষা করতে হবে। তাঁরা রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য, সেটিকে তাঁদের অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্যই ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে কোনো ধরনের সরকার মেনে নেওয়া হবে না। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার যে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে এই সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে অবিলম্বে।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবে সায় ড. ইউনূসের: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে বিবিসিকে তিনি বলেন, যে শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা যখন এই কঠিন সময়ে আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন, তাহলে আমি কীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি? বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিসে আছেন। তিনি শিগগিরই ঢাকা ফিরবেন বলে ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ বিবিসিকে জানিয়েছেন।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ