শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ, সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যে পদত্যাগের দাবি করেছেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তবরর্তীকালীন সরকার। এই ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে দেশ পালানো হাসিনা সরকার। ফলে নতুন কোনো সরকারকেই তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ছাড়া কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পেশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্থিরতা শুরু হয়। কর্মচারীদের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগপত্র দেন। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, তাঁরা পদত্যাগপত্র কার কাছে দিয়েছেন-তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার; পদত্যাগপত্র দিতে হলে সরকারের কাছেই দিতে হবে। অন্য কারও কাছে তাঁরা পদত্যাগপত্র দিতে পারেন না। গভর্নরের প্রসঙ্গে মেজবাউল হক বলেন, গভর্নর ছুটিতে আছেন; এখন ডেপুটি গভর্নরেরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা গতকাল প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছেন, যেমন-পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন, পে স্কেল, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ ইত্যাদি। এসব অসন্তোষের কারণে কর্মচারীরা কেন শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বলে উল্লেখ করেন মেজবাউল হক।
গভর্নরের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি গভর্নরেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গভর্নরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু কর্মচারীরা ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগ দাবি করায় তাঁরা সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্তবর্তী সরকার গঠিত হতে আরও সময় লাগলে কী হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নর জবাবে মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকে দুই ধরনের কাজ হয়; প্রথমত, দৈনন্দিন কার্যক্রম; দ্বিতীয়ত, নীতিগত। দৈনন্দিন কার্যক্রম বিভাগীয় প্রধানেরাই চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সরকার না থাকলে বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় না। এখন মূলত দৈনন্দিন কার্যক্রমই চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সাতটি ব্যাংকের বিষয়ে জানতে চান। তারা বলেন, এই সাতটি ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি আছে। বিশ্বের কোথাও কোনো ব্যাংক চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ে চলতে পারে-এমন নজির নেই বলেই দেখা যায়। আপনারাই এসব করেছেন; এই বাস্তবতায় আপনাদের দিয়ে স্বায়ত্তশাসন সম্ভব কি না। জবাবে মেজবাউল হক বলেন, এসব কিছু এখন নির্ভর করছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর। তারা যে নির্দেশনা দেবে, তার ওপর। আইনি সংস্কারের কথা আমরা বলেছি; বুধবার যারা পদত্যাগের দাবি করেছেন তাঁদের আইনের ফাঁক ফোকর খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকালে বিক্ষুব্ধ একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনে অবস্থিত গভর্নরের ফ্লোরে ঢুকে পড়েন এবং দুজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে ‘পদত্যাগ’ করেছেন এবং যাঁরা কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁদের নিরাপত্তা দেন। তবে ঘটনার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যালয়ে ছিলেন না। দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব শীর্ষ কর্মকর্তা দায়ী এবং তাঁরা দায়িত্বে থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাঁকে পদত্যাগে চাপ দেন। এ সময় কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগের কথা লেখেন এবং স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। ব্যাংক ও আর্থিকখাতে গত কয়েক বছরে যত অনিয়ম এর অনেকটার সঙ্গেই জড়িত এই কর্মকর্তা।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরপর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে যান। ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার জানান, তিনি কার্যালয় ত্যাগ করছেন। বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে কর্মচারীরা তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, তাঁরা অফিসে আর আসবেন না। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসও জানান, তাঁরা আর ব্যাংকে আসবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এসব কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাঁদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা নির্বাহী পরিচালক-১ জাকির হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হরিরামপুরে বিশৃঙ্খলার দায়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২ নেতা আটক
চিলমারীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতবিনিময়
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন : প্রেস সচিব
পাকিস্তানে বাসা থেকে উদ্ধার জার্মান কূটনীতিবিদের রক্তাক্ত দেহ
কালিয়াকৈরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ সারাফতের পরিবারসহ ১৮ ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ
গোয়ালন্দে প্রতিবন্ধীদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরন
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন জি এম কাদের
আট বিভাগে একযোগে শুরু হবে জুলাই বিপ্লবের সিনেমা নির্মান
আট বিভাগে একযোগে শুরু হবে জুলাই বিপ্লবের সিনেমা নির্মাণ
সিংগাইরে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাব্বির হত্যা মামলায় জাকির খানসহ সকল আসামি খালাস
সরকারি গাছ চুরির অভিযোগে সদরপুরের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাব্বির হত্যা মামলায় জাকির খানসহ সকল আসামি খালাস
ধামরাইয়ে ছাত্র হত্যা মামলায় ইউনিয়ন আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
কিশোরগঞ্জে ইট উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
কোনো বন্ধুরাষ্ট্র জনগণের হত্যাকারীকে আশ্রয় দিতে পারে না : দুদু
রিয়েলমি সি৭৫ এর কার্যক্ষমতা দেখার সুযোগ পেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
রাবি কর্মকর্তা দাবি, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বাতিল করা হয়েছে আমাদের ন্যায্য সুবিধা
ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান বিচারপতি