ঢাকাকে অস্থিতিশীল করতে নয়াদিল্লির অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটছে
১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে মধ্যে ভারতীয় গণ এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার অনেক বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন এবং ও তথ্যচিত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর উর্ধ্বতন নেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‹এক কোটিরও বেশি উদ্বাস্তু শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে।’
মোদির সরকারের ঘনিষ্ঠ ভারতের আরেক সংবাদ সংস্থা এএনআই বিজেপির এক ছাত্র নেতাকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান শত্রুদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার আরও একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগলোর খবর অনুয়ায়ী, সোমবার রাত থেকে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২০টিতে কয়েকটি হিন্দু পরিবারে হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। আল জাজিরা ঘটনাগুলো তদন্ত করতে জেলাগুলিতে সূত্রের কাছে পৌঁছে।
আল জাজিরার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন যে তার জানামতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কহীন কোনো হিন্দু পরিবারকে আক্রমণ করা হয়নি।
গোবিন্দ্র বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে আমি নিশ্চিত করতে পারি যে এই হামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, সাম্প্রদায়িক নয়। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত মুসলিম পরিবারগুলোতে ১০ গুণ বেশি হামলা হয়েছে।’ প্রামাণিক এও স্বীকার করেছেন যে হিন্দু মন্দিরগুলোকেও সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকে জনতার সহিংসতায় ১শ’ ১৯ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। এএফপি নিউজ এজেন্সির সত্যতা-নিরীক্ষা সম্পাদক কাদেরউদ্দিন শিশির আল জাজিরাকে বলেছেন যে নিহতদের মধ্যে মাত্র দু’জন হিন্দু: একজন পুলিশ এবং অন্যজন আওয়ামী লীগ কর্মী।
ইতিমধ্যে, হিন্দু মন্দির ও বাড়িগুলোর সামনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের খবর ও ছবিগুলি স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।
ক্ল্যারিওন ইন্ডিয়া এবং দ্য ওয়্যারের মতো সত্য বস্তনিষ্ঠ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ শিরোনাম করেছে ‹মন্দিরগুলোতে মুসলিমদের প্রহরা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার আহ্বান› এবং ‹হামলার প্রেক্ষিতে মন্দির ও গীর্জাহুলোর বাইরে ছাত্রদের প্রহরা।›
দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারাদারাজান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ভারতীয় মাধ্যমগুলোয় একটি অংশ রয়েছে যারা বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বিজেপি এবং (এর আদর্শের জনক) আরএসএস-এর অভিসন্ধি পূরণের লক্ষ্যে মুসলিম বিরোধী বক্তব্য প্রচার করছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্ক্রল,ইন-এর সম্পাদক নরেশ ফার্নান্দেজ আল জাজিরাকে বলেছেন যে হিন্দুত্ব সমর্থকরা এই সঙ্কটের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে যথাযথভাবে উদ্বিগ্ন, এই উদ্বেগ তারা ভারতের সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফার্নান্দেজ, ‘ভারতের হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে একটি পর্দা হিসাবে ব্যবহার করছে যেখানে তাদের নিজেদের উদ্বেগ, কল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্বগুলিকে তুলে ধরছে।’
ফার্নান্দেজ বলেন, ‘তারা দাবি করছে যে হাসিনার পতন আসলে আন্তর্জাতিক বাহিনীর প্রকৌশলে সৃষ্ট এবং এটি ভারতে অনুরূপ শাসন পরিবর্তনের জন্য একটি মহড়া।’
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরিদ এর্কিজিয়া বখÍ বলেছেন যে, ভারত এই উপমহাদেশে তার সবচেয়ে মূল্যবান মিত্রকে হারিয়েছে এবং আগত প্রশাসনের দিকনির্দেশ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় মাধ্যমগুলোর ছড়ানো ভুল তথ্যগুলো ঢাকাকে অস্থিতিশীল করতে নয়াদিল্লির অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে।’
ভারাদারাজনও এই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান যা হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, নয়া দিল্লিকে অপ্রস্তুত করে দিয়েছে, এবং সরকার এখন নতুন পরিস্থিতির মুখে একটি সুসংগত এবং যুক্তিসঙ্গত নীতি প্রণয়নের জন্য খাবি খাচ্ছে। এটি ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকে স্বাগত জানাতে এবং গণশক্তির অভিব্যক্তিকে হজম করতে পারছে না।’
মোদি সরকারের সংশোধিত ভারতের নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং নাগরিকদের জাতীয় অন্তর্ভুক্তি আইন (এনআরসি)-এর উল্লেখ করে, যা ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সড়যন্ত্র বলে সমালোচনা করা হয়, বাংলাদেশী আন্দোলন কর্মী এবং লেখক অপাম দেবাশিস রায় আল জাজিরাকে বলেন, ‘বিজেপি ঘেঁষা মাধ্যমগুলো বিশ্বকে ছড়িয়ে দিতে চায় যে বাংলাদেশ ইসলামপন্থীদের হাতে পড়তে চলেছে। কারণ এটি তাদের (বিজেপির) কল্পকাহিনীকে সমর্থন করে, যা সিএএ এবং এনআরসির মতো পূর্ববর্তী আইনগুলি অনুসরণ করে বানানো।’
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাংলাদেশী রাজনৈতিক ভাষ্যকার শাফকাত রাব্বি অনিক বলেছেন, বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে পুলিশ বাহিনীর পতনের ফলে, যা বেশিরভাগই গত ১৫ বছরে তাদের দ্বারা সংঘটিত চরম বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে জনতার প্রতিশোধের ফল।
অনিক বলেন, ‘যখন আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্র্বতী সরকারের নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস, তখন ইউনূসকে সংখ্যালঘু ও নারীদের অধিকার হরণ করার চেষ্টাকারী ইসলামপন্থী হিসেবে চিত্রিত করা অত্যন্ত কঠিন।’
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক