নতুন সরকারে নতুন উদ্দীপনা
১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
চট্টগ্রামের সন্তান বিশ^বরণ্যে অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নতুন সরকারের নবযাত্রায় ছাত্রসমাজসহ সর্বত্রই দেখা দিয়ে নতুন উদ্দীপনা। নিজেদের সন্তানের নেতৃত্বে দেশের নতুন এই পথচলায় অকুণ্ঠ সমর্থন আর ভালোবাসা ব্যক্ত করছেন এখানকার সাধারণ মানুষ। গতকাল পবিত্র জুমার নামাজ শেষে বন্দরনগরী ও জেলার প্রতিটি মসজিদে সরকারের সাফল্য কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ নতুন সরকারের সাফল্য কামনার পাশাপাশি পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের বিচারের দাবিও উচ্চারণ করেন।
জালিম শেখ হাসিনার পতনের পর এই দেশের আপামর ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে রক্ত সাগর পেরিয়ে নজিরবিহীন এক অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়। জনতার রুদ্র-রোষে হাসিনা পালাতে বাধ্য হন ভারতে। গত সোমবার সরকারের পতনের পর মহা বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা চট্টগ্রাম। পরিবার পরিজনের সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তুরের মানুষ। তারা রাস্তায় নেমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা উদযাপনের উল্লাস প্রকাশ করে।
এরপর নতুন সরকারের জন্য শুরু হয় অপেক্ষা। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা থানা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় থানা থেকে রাস্তা পুলিশশূন্য হয়ে যায়। জনমনে নানা উদ্বেগ-শঙ্কা বাড়তে থাকে। আর এই অবস্থায় ফের রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। তারা থানার নিরাপত্তার পাশাপাশি সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ময়লা-আর্বজনা পরিস্কার, দেয়ালে দেয়ালে বর্ণিল ছবি আঁকার কাজে নেমে পড়ে। মূলত এর মধ্যদিয়ে তারা সরকারহীন কয়েকটি দিন মানুষের পাশে দাঁড়ায়। রাস্তায় রাস্তায় নিজেদের সন্তানের একের পর ভাল কাজ দেখে আবেগে আপ্লুত হন অভিভাবকেরা। তাদের সাহায্যে রাস্তায় নেমে আসেন অনেকে।
এর মধ্যেই পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথগ্রহণে মাধ্যমে শুরু হয় নতুন সরকারের নতুন পথচলা। আর তাতে স্বস্তি ফিরে আসে সাধারণ মানুষের মাঝে। গতকাল ছুটির দিন থাকলেও রাস্তায় রাস্তায় ছিল যানবাহন ও মানুষের ভিড়। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে ভারি যানবাহনের রীতিমত জট দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার পাশপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং দেয়ালে ছবি আঁকার কাজ অব্যাহত রাখেন। কিশোর-কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় বদলে যায় বন্দর নগরীর চির চেনা রূপ। প্রতিটি সড়ক ঝকঝকে, প্রতিটি দেয়ালে রঙের খেলা, হরেক সেøাগান। বাংলাদেশকে নিয়ে তারা যে স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নই ফুটিয়ে তুলেছে রঙ-তুলিতে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, তাদের এই স্বপ্ন পুরণ করতে হলে বিগত পনের বছরের দুঃশাসনের বিচার করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি হত্যার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেষ সময়েও নির্বিচারে ছাত্র-জনতার লাশ ফেলেছে হাসিনার পেটুয়া বাহিনী। টানা দেড় দশক সীমাহীন লুটপাট, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যায় খালি হয়েছে অসংখ্য মায়ের বুক। জীবনের তরে পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। গায়েবি মামলায় আসামি করে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি তাদের পরিবারের নিরীহ সদস্যদেরও কারাগারে বন্দি করা হয়েছে।
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের অনেকে এলাকায় বাড়ি ঘর ছাড়া হয়েছে বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মী। তাদের বাড়ি ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, জায়গা-জমি দখল করে নেয় আওয়ামী সন্ত্রাসী লুটেরা বাহিনী। পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শত শত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এখনও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ৩৫০ জন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। ছাত্রদের মিছিল সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে যারা পাখীর মতো মানুষ হত্যা করেছে তাদের ধরতে হবে।
কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগের ভূমিকা পালন করেন। দলবাজ সরকারি কর্মকর্তারাও ছিলেন বেপরোয়া। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় লোকজনকে বিভিন্ন পদে বসিয়ে দেয়া হয়। তারা জনগণের সেবার বদলে লুটপাট করেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, এসব খুুনি-লুটেরাদের ধরে ধরে বিচার করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে যাদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের সরাতে হবে। মানুষের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না হলে সরকারের সাফল্য মøান হবে।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, বিগত সরকারের সময়ে গুম-খুনের বিচার না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাদের এমন সাজা দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোন সরকার এভাবে মানুষ হত্যা করার সাহস না পায়। সরকারি দলের নেতারা এবং তাদের সমর্থন ও মদদপুষ্টরা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে। সেসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার দলের নেতাদের বাসা-বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এসব লুটের অর্থ জনগণের, তা সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।
নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছে। তাদের সেই স্বপ্নের কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হবে। রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাতে হবে। জালিম সরকারের পতনের পরও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় রয়েছে। তারা তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ কেমন হবে তা দেয়ালে দেয়ালে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তুলছে। নতুন সরকারকে সেই দেয়ালের লিখন পড়েই কাজ করতে হবে। আর তাতে এদেশের মুক্তিকামী জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন থাকবে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক