মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাকের পাশাপাশি বাসসহ গণপরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া রাজধানীর রাস্তায় নেই ট্রাফিক পুলিশ। ৬ আগস্ট থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর রায়েরবাগ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এ চিত্র দেখা গেছে।
রাস্তায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা রয়েছেন। তারা রাস্তায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ফুটপাথে হাঁটা ও নির্দিষ্ট স্থানে গাড়িতে ওঠানামার বিষয়ে গণপরিবহনগুলো নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন।
সকালে রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্ব পালন করছিলেন দারুননাজাত মাদরাসা ও দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ১২ জন। সেখানকার সমন্বয়ক রায়হান বলেন, আমি এর আগেও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছি। প্রচণ্ড গরমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে, দেশের জন্য কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। দেশের অনেক মানুষ আইন মানতে চান না। ট্রাফিক আইনের কথা বললে তারা রাগ করেন। কিন্তু, আমরা চাই, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।
পল্টনে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করব। বাস-সিএনজি অটোরিকশাগুলো যেন লাইন ধরে চলে, আমরা সে নির্দেশনা দিচ্ছি। গরমে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবু ভালো লাগছে যে, মানুষকে সচেতন করার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি।
সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা, ঘারিন্দা, রসুলপুর, এলেঙ্গাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। অনেকেই ২০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করেও বাসের আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এদিকে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
বগুড়াগামী ট্রাকচালক আবুল বলেন, মহাসড়কে অন্যান্য দিনের মতো যানবাহন স্বাভাবিক হয়েছে। তবে দুর্ঘটনা রোধে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রাক চললেও এখন ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রাক চালাচ্ছি।
যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৪৩৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে এক কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ টাকা আয় হয়েছে।
কারফিউ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আতঙ্কে যান চলাচল অনেকটা বন্ধ ছিল দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। প্রায় এক সপ্তাহ পর ফের স্বাভাবিক হয়েছে যানবাহন চলাচল। ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয়মুখী লেনে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, পিকআপ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ সকল গাড়ি চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তায় আগের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। খোলা হয়েছে বন্ধ থাকা অনেক দোকানপাট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবে। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফিরছে পুরনো চিরচেনা রূপে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরির মতো পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন থেকে শুরু করে স্বল্প কিংবা দূরপাল্লার বাসের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। পণ্য ও যাত্রীবোঝাই এসব পরিবহন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে মহাসড়কে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে স্বস্তিতে যাত্রী, চালক ও শ্রমিকরা। দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৪ কিলোমিটার সড়কের কোথাও কোনো সমস্যা কিংবা দুর্ভোগ দেখা যায়নি। নির্দিষ্ট সময়েই গন্তব্যে পৌঁছেছে পরিবহন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পণ্য পরিবহনগুলোও কুমিল্লা অতিক্রম করছেন স্বস্তিতে। একই দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতেও।
চিটাগাং রোডে চলাচলকারী একটি পরিবহনের চালক বলেন, শিক্ষার্থীরা নিয়ম করেই সিগন্যাল দিচ্ছেন। কোনো ভোগান্তি নেই। সড়কে আগে চাঁদা দিতে হতো, এখন হয় না। পুলিশের হয়রানি নাই। শিক্ষার্থীরা আমাদের অনেক কিছু শিখাচ্ছেন।
বাসচালক নুর উদ্দিন বলেন, প্রায় ১০ দিন গাড়ি চালাতে পারিনি। ইনকাম ছিল না বললেই চলে। আজ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তায় মোটামুটি যাত্রী রয়েছে।
দেশের সড়কগুলোতে বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছেন। ঢাকার সাভারেও শুধু সড়কে শৃঙ্খলায়ই নয়, সড়ক পরিচ্ছন্নতায় ও লুটপাট এবং ছিনতাই বন্ধেও কাজ করছেন তারা। তবে প্রখর রোদের তাপে পুড়ে, আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এ কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে সড়কে শৃঙ্খলায় নিয়োজিত শিক্ষার্থী। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাভার পৌর এলাকার অন্তর্গত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ৫ কি.মি. অংশসহ থানা রোড, বাজার রোড, রাজাশন রোড এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করছে তরুণেরা। এসব স্থানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সাধারণ মানুষও।
শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় বিশৃঙ্খলা ও যানজট সৃষ্টি হয়ে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল। এ কারণে তারা সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন। সড়কের সৌন্দর্য ফেরাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করছেন তারা। তাছাড়া ডাকাতি ও লুটপাট ঠেকাতে রাতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ও অলিগলিতে পাহারা দিচ্ছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই সময়ের অস্থিরতার পর পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার দিকে দূরপাল্লার পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের বিভিন্ন বাসস্টপেজে ঢাকাগামী যাত্রীদের বেশ ভিড় রয়েছে। সড়কে ভাঙ্গা-ঢাকা স্থানীয় পরিবহনগুলো স্বাভাবিক ভাবে চলছে। দূরপাল্লার পরিবহনও চলতে দেখা গেছে। এদিকে যাত্রীরা জানিয়েছেন,গত এক সপ্তাহ ধরে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধই ছিল। এছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীদের বেশির ভাগই ঢাকার দিকে যাত্রা করেননি। সড়কে যানবাহন ছিল খুবই কম। স্থানীয় যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী যানবাহন তেমন একটা সড়কে দেখা যায়নি। তবে শুক্রবার ভোর থেকেই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যাত্রীদের সংখ্যাও বেড়েছে।
ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, সকালে পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। গাড়িও চলছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে এখনও আগের মতো ব্যস্ততা বাড়েনি। আশা করা যায় দ্রুতই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
উত্তরা বিমানবন্দর মহাসড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে গণপরিবহন চলাচল। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি মানুষের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করছে। উত্তরাজুড়ে বিমানবন্দর মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের দেখা মিলেনি। ঢাকা ময়মনসিংহ বিমানবন্দর মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় উত্তরা আব্দুল্লাহপুর, হাউজ বিল্ডিং, জসিমউদদীন, জমজম টাওয়ার, বিমানবন্দর চৌরাস্তা এলাকায় যানচলাচলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সড়কের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এসময় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা। ###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক