চাঁদাবাজি নেই গণপরিবহনে
১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত-রক্তপাত ছিলো নিত্যদিনের ব্যাপার। গণপরিবহন খাতের নৈরাজ্য থামছিলো না কোনোভাবেই। পরিবহন খাতের এই অরাজকতা ঠেকাতে প্রশাসন কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বার বার। অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত ছিলো প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেণির মালিক-শ্রমিক সড়ক পরিবহন খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ জনগণের ওপর। গণপরিবহন বা বাস-মিনিবাসকে পথে-পথে দিতে হতো বিভিন্ন পরিমাণ চাঁদা। ওয়েবিল বা শ্রমিক সংগঠনের নামে আদায় করা চাঁদার টাকা যেতো পুলিশ ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মহলের পকেটে। টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ার আগেই শুরু হয় চাঁদাবাজি। প্রথম পর্বে টার্মিনাল চাঁদা নামে পরিচিত খাতে দিতে হয় টাকা। সিটি করপোরেশনের ইজারাদার ও সিরিয়ালের জন্য দিতে হয় টাকা। এরপর দিতে হয় রাস্তার চাঁদা। বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে থাকা আদায়কারীকে গণপরিবহন থেকে চাঁদার নগদ টাকা দিয়েই যেতে হতো।
হাসিনা সরকার পতনের পর পরির্তন এসেছে পরিবহন খাতে। দেশের পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হতো এখন সেই চাঁদাবাজি নেই। সরকারের অনুগত দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের দেখা নেই সড়কে। চাঁদাবাজিও নেই। ফলে স্বস্তিতে রয়েছে সড়ক সংশ্লিষ্টরা। কাউন্টারে প্রথমেই চাঁদা দিতো হতো ১ হাজার ৩০ টাকা। পাশাপাশি আরও ৪৩০ টাকা সড়কের চাঁদা। পুলিশের চাঁদাবাজিতেও অতিষ্ঠ ছিল সংশ্লিষ্টরা। পরিবহনের চালকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আমরা খুব শান্তিতে আছি। এটা যেন চলমান থাকে। এখন রোড খরচ ১ হাজার ৩০ টাকা লাগে না, লাইনম্যানকে চাঁদা দেওয়াও লাগে না। পুলিশ বাস ধরলেই ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মামলা দেওয়া হয়। এখন সেই ঝামেলাও নেই।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার জন্য অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ করা প্রয়োজন। যাত্রী ও মালামালবাহী যানবাহনে যে চাঁদাবাজি হয়, তার খেসারত দিতে হয় মূলত যাত্রীদের ও পণ্যের ক্রেতা-ভোক্তাদের। চাঁদাবাজির কারণে বাস ভাড়া বেড়ে যায়। ভাড়া বেড়ে গেলে ভোগান্তি হয় সাধারণ যাত্রীদের।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, সড়কে যারা চাঁদা তুলতো তারা এখন জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। আমার বিশ্বাস চাঁদাবাজি না থাকলে সামনে ভাড়া কমবে। চাঁদাবাজির টাকা কিন্তু আমাদের পকেট থেকেই যায় বাস মালিকেরা নিজের পকেট থেকে দেয় না। কয়েকদিন পুলিশ নেই সমস্যা হচ্ছে এটা বিশ্বাস করি। পাশাপাশি এটাও বিশ্বাস করি সড়কে চাঁদাবাজি নেই বলা চলে। সড়কের চাঁদাবাজি যেন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় এটাই প্রত্যাশা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পতনের পর রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও সড়কে নেই কোন চাঁদাবাজি। এর কারণ হচ্ছে আগে যারা চাঁদা আদায় করতো তারা সবাই প্রভাবশালী সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। এখন তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। রাস্তার চাঁদাবাজি রেখে পালিয়েছেন অধিকাংশ ব্যক্তিই। এর আগে এক শ্রেণির মালিক ও শ্রমিক সড়ক পরিবহন খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। বিআরটিএ রুট পারমিট দিলেও পরিবহন নেতাদের মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে সে রুটে বাস চালানো যেতো না। যে দল সরকারে আসে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ সেই দলের পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও ক্যাডারদের হাতেই থাকে। তারা পরিবহন খাতকে জিম্মি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতিয়ে নেন। যার প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ওপর।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। এ চাঁদার ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। চাঁদাবাজির এ হিসাব খুবই রক্ষণশীল হিসাব। বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয় এবং এ চাঁদার ভাগ নানা পর্যায়ে যায়। যেহেতু খাতটি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে সেহেতু চাঁদার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। এই খাতটি আপাদমস্তক দুর্নীতিতে জর্জরিত। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ খাত জিম্মি হয়ে আছে। ফলে যাত্রীরা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। দেশের বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশ পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতিবিদরা সম্পৃক্ত। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত।
জানা যায়, ঘাটারচর থেকে আব্দুলাহপুর রুটে চলাচল করে কিছু যাত্রীবাহী বাস। এ পথের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এ রুটে যাত্রী ভাড়া ৭০ টাকা। অথচ ৩৫ কিলোমিটার রুটে ১৬ স্থানে দিতো হতো চাঁদা, যার পরিমাণ ৪৩০ টাকা। এ রুটে ঘাটারচর ১০ টাকা, আরশিনগরে ৪০ টাকা, বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে ২০ টাকা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্টে ২০ টাকা, কলেজগেটে ৪০ টাকা, আসাদগেটে ২০, শ্যামলীতে ২০ টাকা, মিরপুর-১ নম্বরে ৪০ টাকা, মিরপুর ১০ নম্বর ৪০, মিরপুর পুরবী সিনেমা হলের স্থানে ২০ টাকা, মিরপুর-১২ নম্বরে ২০ টাকা, কালশী ২০ টাকা, ইসিবিতে ৪০ টাকা, কুর্মিটোলায় ২০ টাকা, এয়ারপোর্টে ২০ টাকা ও আব্দুল্লাহপুরে ৪০ টাকা চাঁদা দিতো হতো। ৪৩০ টাকা মূলত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশকে এ চাঁদা দিতে হতো। এছাড়া রোড খরচ ৮৭০ টাকা। এক বাস থেকেই প্রতিদিন মোট ১ হাজার ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো।
প্রধানত সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামেই এ চাঁদাবাজি হতো। এছাড়া সড়ক, মহাসড়ক, বাস-ট্রাক টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো প্রকাশ্যেই। ট্রাফিক পুলিশের একাংশও দীর্ঘদিন থেকেই চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। এখন ঢাকার কোনো রুটেই নেই কোনো চাঁদাবাজি।
শিকড় পরিবহনের এক স্টাফ বলেন, আগে গাড়ি বের করার পর থেকে কয়েক দফা চাঁদা দিতে হতো। সরকার পতনের পর এই চাঁদা নেয়ার মতো লোক নেই। এখন কোনো চাঁদা দেওয়া লাগে না। নগদ টাকা আমাদের পকেটে থাকছে। এতে করে আমরা সুন্দরমতো সংসার চালাতে পারছি। মালিকরাও খুশি।
কয়েকজন চালক ও কন্ডাক্টর জানান, আগে লাইনম্যানের নামে ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠন চাঁদা নিতো। না দিলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেয়া হতো। এছাড়া ফিটনেস ও রুট পারমিটসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে অধিকাংশ বাসের। তাই মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতরা প্রতি মাসে টাকা দিয়ে মাঠ প্রশাসন ঠিক রাখতো। এখন গাড়ি চালাতে কোনো চাঁদা দিতে হয় না। চাঁদা নেয়ারও লোক রাস্তায় নেই।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনসিপির ঢাকা অফিসে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, নির্বাচন ইস্যুতে নাহিদের সঙ্গে বৈঠক
আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গুলির খোসা উদ্ধার
প্রধান উপদেষ্টা কাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন
ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা
মেহেরপুরে পুলিশ সুপারের বাসভবনে আগুন
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাসী, মওদুদীর ইসলামে নয়: হাফিজ ইব্রাহিম
২৯৯ আসন বিএনপিকে উপহার দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : দীপেন দেওয়ান
চট্টগ্রাম বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি সাক্ষর
কমলগঞ্জে শখের বসে শেখা বাঁশিই এখন কৃষ্ণ দাসের জীবিকা
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধান গ্রেফতার
কমলগঞ্জে রেললাইনে স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনার চেষ্টা
এবার ধোলাইপাড়ে বাসে আগুন
জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান
দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ
স্বাধীনতা হারাতে পারে বিচার বিভাগ, বর্ধিত ক্ষমতা ও আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
১৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
নকলায় তিন বেকারিকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
নাশকতা প্রতিরোধে আমিনবাজারে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন