ঢাকা   সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩১
রংপুরে ড. মুহম্মদ ইউনূস

আমি অ্যাকশন নেয়া শুরু করলে আপনারা পাশে থাকবেন

Daily Inqilab হালিম আনছারী, রংপুর থেকে

১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তরুণদের ব্যর্থ করে দিতে অনেক অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু আমাদের ব্যর্থ হওয়া যাবে না। আবু সাঈদ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। কোথাও যেন কেউ কোনো গোলযোগ করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি অ্যাকশন নেয়া শুরু করলে আপনারা পাশে থাকবেন। গতকাল শনিবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ও মনের কথা তুলে ধরেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনা কাজ করতে গেলে একটা স্বপ্ন লাগে। স্বপ্ন না থাকলে কাজ করা যায় না। সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। স্বপ্ন থাকলে স্বপ্নের পিছনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। দেখবেন হয়ে গেছে। প্রথমে মনে হবে অসম্ভব জিনিস। তোমাদের যে ক্ষমতা, সেটা হলো অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা। শুধু বাংলাদেশ না, তোমরা সারা দুনিয়া পাল্টে ফেলতে পারবা। বাংলাদেশে ছোট্ট একটা বিষয় তোমাদের কাছে। পিছু হটবে না।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আবু সাঈদ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। কোথাও যেন কেউ কোনো গোলযোগ করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ড. ইউনূস বলেন, আজকে (গতকাল) গেলাম আবু সাঈদের বাড়িতে, সে শুধু এখানে প্রাণ দিয়েছে তা নয়। আবু সাঈদ হলো মহাকাব্যের চরিত্র। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে বহু কবিতা, বহু সাহিত্য, বহু কিছু রচিত হবে।
তিনি আরও বলেন, সে দেখিয়ে দিয়ে গেল, চমকে গেছে মানুষ! গুলিটা খাওয়ার ছবি দেখলো, আর মানুষকে থামানো যায়নি। সবার তখন মনে হয়েছে, আমিই তো আবু সাঈদ। মারো কত মারতে পারো। সারা দুনিয়া চমকে গেছে। তোমরা যেটা করেছ, এটা শুধু বাংলাদেশের ঘটনা না। সবাই দেখছে, একটা সরকার এই ছাত্ররা কীভাবে উল্টিয়ে ফেলতে পারে। যেটা করেছ, সেটাকে আমরা বলছি দ্বিতীয় বিজয় উৎসব। এই বিজয় উৎসবটা যাতে আমাদের হাত থেকে ফসকে না যায়।

তিনি আরো বলেন, তোমাদের যে ক্ষমতা, তা হলো অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা। শুধু বাংলাদেশ না, তোমরা সারা দুনিয়া পাল্টে ফেলতে পারো। পিছু হটবা না। আমরা পারি নাই, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তোমাদের যে জায়গায় চলে যাওয়ার কথা ছিল, তোমাদের আমরা সে জায়গায় নিয়ে যেতে পারি নাই। তোমরা যেন ব্যর্থ না হও। তোমাদের পরে যারা আসছে, তারা যেন এ কথা না বলে, তোমরা পথ আগলে রেখেছিলে বলে আমরা ঢুকতে পারিনি। কারো পথ যেন আটকে না থাকে। তুমিও আটকে রাখবে না, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন আটকে না রাখে।

দ্বিতীয় বিজয় ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যেন ব্যর্থ না হয়। ব্যর্থ করার জন্য বহু লোক দাঁড়িয়ে আছে। তোমরা জানো, তোমাদের ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। যা আছে কপালে, আমাদের জেনারেশন সব বাদ দিয়ে দাও। পরিষ্কার না করা পর্যন্ত আমাদের ছুটি নাই।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কথা স্মরণ করে রংপুরবাসীকে পুরো বাংলাদেশ মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেগম রোকেয়া নারীদের মুক্ত করেছেন, এখন রংপুর পুরো বাংলাদেশ মুক্ত করবে।

ড. ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণদের এখন কেউ টেনে রাখতে পারবে না, পথ পরিষ্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, তোমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নিরাপদে রাখবা। বলবা, সবাই আমরা ভাই। বাংলাদেশ এক পরিবার। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার নাই। এত সুন্দর একটা দেশ, কোথায় চলে যেতে পারতাম আমরা! শুধু মনটা শক্ত রাখতে পারলে হতো। আর তরুণদের রাস্তা খুলে দিলে আমরা মুক্ত হয়ে যেতাম।
প্রধান উপদেষ্টা তার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, নারীদের হাতে টাকা দিয়ে দেয়া চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে নারীদের উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে সামাজিক ব্যবসার মডেল। নারীদের স্বাবলম্বী করে মুক্ত করার প্রেক্ষিতে তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে স্মরণ করেছেন। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা দাবিগুলো লিখিত আকারে প্রস্তাব করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ড. ইউনূস
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে যান তিনি। কবর জিয়ারতের পর তিনি আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজ-খবর নেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবু সাঈদের বাবা। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি গ্রামের লোকজনও ছিলেন অশ্রুজল। এ সময় ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে দারুণ জয়ের পথে শ্রীলঙ্কা

নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে দারুণ জয়ের পথে শ্রীলঙ্কা

রাঙ্গুনিয়ায় যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা লুটপাট

রাঙ্গুনিয়ায় যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা লুটপাট

হরিরামপুরে ৫ হাজার শতক ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন

হরিরামপুরে ৫ হাজার শতক ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন

সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ করাতকল পাচার হচ্ছে বনের কাঠ

সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ করাতকল পাচার হচ্ছে বনের কাঠ

রাউজানে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল

রাউজানে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল

পবিপ্রবিতে নিপীড়নবিরোধী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মানববন্ধন

পবিপ্রবিতে নিপীড়নবিরোধী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মানববন্ধন

ধামরাইয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে খামারিদের মানববন্ধন

ধামরাইয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে খামারিদের মানববন্ধন

দৌলতপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

দৌলতপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

ঘাটাইল ও ফরিদগঞ্জ থেকে ৩ লাশ উদ্ধার

ঘাটাইল ও ফরিদগঞ্জ থেকে ৩ লাশ উদ্ধার

দাউদকান্দিতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

দাউদকান্দিতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

বন্দরে আ.লীগ-জাপার ১৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বন্দরে আ.লীগ-জাপার ১৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কলাপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

কলাপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

ফরিদগঞ্জে বিদ্যুতের দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও

ফরিদগঞ্জে বিদ্যুতের দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও

কুমিল্লায় ১৪৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত

কুমিল্লায় ১৪৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত

সামান্য বৃষ্টি হলে জমে যায় পানি

সামান্য বৃষ্টি হলে জমে যায় পানি

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও আবাবিল কাহিনী

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও আবাবিল কাহিনী

ইসলামী দলগুলো কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে?

ইসলামী দলগুলো কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে?

সৈয়দপুরে আবারও আওয়ামী লীগের ৩০০ নেতা কর্মীর নামে মামলা

সৈয়দপুরে আবারও আওয়ামী লীগের ৩০০ নেতা কর্মীর নামে মামলা

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ