পুলিশ কী দরকার?
১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
যাত্রাবাড়ী থানার আশেপাশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিল বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। থানার প্রধান গেইটে দাঁড়িয়ে কয়েকজন আনসার সদস্য। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও আছেন। একজন শিক্ষার্থী বললো, পুলিশ এখনও তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করেনি। অনেকে কাজে যোগ দেয় নি। তার ভাষায়, পুলিশ কী দরকার? আমরা আছি তো।
দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৩৮টিতে ফের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত এ থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহানগরের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শুক্রবার রাতে শনিরআখড়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের মাইকিং করতে দেখা গেছে। মাইকের বার্তায় তারা এলাকাবাসীকে বলছিল, আপনারা কেউ বিচলিত হবেন না। প্রধান গেইটে তালা লাগিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমান। আমরা সারারাত আপনাদের এলাকায় পাহারায় আছি। গত কয়েকদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে পালাক্রমে রাতে পাহারা দিয়ে আসছে। সাথে এলাকার রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে তারাই। শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, রাজধানীজুড়েই হাজার হাজার শিক্ষার্থী দিনে সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজসহ রাতজেগে পাড়া-মহল্লা পাহারা দিচ্ছে। একই সাথে কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মের উপসনালয়ে। এ কাজে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আছে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলন তথা সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘিরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর সাথে অনেক সাধারণ মানুষ পুলিশের গুলীতে প্রাণ হারিয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পরও ৬/৭ ঘণ্টা ধরে পুলিশ জনতার বিজয় মিছিলেও গুলীবর্ষণ করেছে। সরকারি হিসাবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ৬৫ জন এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মর্গে ১০জনের লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। বাকিদের সংখ্যা ও পরিচয় শনাক্ত করা যায় নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই দিন মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ওই দিন রাতে এবং পরদিন দুপুর পর্যন্ত দনিয়া এলাকায় ৩টি, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৪টি, কাজলা মোড়ে ৩টি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর আগে দুই সপ্তাহের আন্দোলনে পুলিশের গুলীতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানী ঘটেছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের মতো রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সহিংস ঘটনার নেপথ্যে ছিল পুলিশের নির্বিচারে গুলীবর্ষণ। বিশেষ করে কারফিউ জারি করার পর পুলিশ অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যেদিন উচ্চ আদালত কোটা সংস্কারের রীট নিয়ে নতুন আদেশ দেয় সেদিন রাজপথে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এই সুযোগে পুলিশ পাড়া মহল্লায় প্রবেশ করে নিরীহ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলী চালায়। এতে যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনিরআখড়া, দনিয়া, রায়েরবাগ এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় বেশ কয়েকজন গুলীবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। স্থানীয়রা জানান, এর আগে আন্দোলনকারীদের কাছে বার বার পরাস্ত হয়ে পিছু হটার কলঙ্ক ঢাকতে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (অপারেশন) মামুন ও ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ দুজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। কারফিই চলাকালে এই দুজনের নেতৃত্বে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের দল আচমকা প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলী চালায়। শুধু তাই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর আন্দোলনকারীদের মিছিলে হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন সুউচ্চ ভবনের ছাদ থেকে স্নাইপার গান দিয়ে গুলী চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে নিহত হলে তাদের লাশ আর হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়া হয়নি। অনেকের লাশ স্বজনরা নীরবে দাফন করেছে। রামপুরা এলাকাতেও একই রকম ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন ভবনের ছাদে উঠে পুলিশ মিছিলকারীদের উপর গুলী করে। একই চিত্র সারাদেশের।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের ডিআইজি পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বহুদিনের। তবে আন্দোলনকারীদের উপর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ নির্বিচারে গুলীবর্ষণ করার পর দীর্ঘদিনে জমে থাকা ক্ষোভ মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলে। যে দ্রোহের আগুনে তারা পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে না পেয়ে থানাগুলোতে আগুন দিয়েছে।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের সীমা নেই। পুলিশ খারাপ। পুলিশ অপরাধ দমন ও অপরাধীদের ধরতে পারে না। পুলিশ ঘুষ খায়, চাঁদাবাজি করে। ছিনতাইও করে। নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে। মামলা নিতে চায় না। মামলা নিলেও তদন্ত ঠিকমত করে না। পুলিশের কাছে গেলে কোনও ঘটনার প্রতিকার পাওয়া যায় না, উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। ছিনতাইয়ের মামলা দিতে গেলে ওরা নেয় হারানোর এজাহার। এমনি অসংখ্য অসংখ্য অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। এতোদিন ধরে বলা হতো, পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু সরকারের আস্কারা পেয়ে পুলিশ ২০১৪ সালের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এজন্য চিহ্নিত হাতে গোনা কয়েকজন সুবিধাভোগী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায়ী। হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষ সুযোগ পেয়ে সেই ক্ষোভেরই বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। এটা পুলিশের পাওনা ছিল বলা যায়। ওই কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীতে হারুন, হাবিব, প্রলয়, বিপ্লব, কৃষ্ণদের উত্থানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে দায়ী করে বলেন, ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিলিয়ান্ট এবং পেশাদার কর্মকর্তাদের প্রমোশন না দিয়ে অপেশাদার দালালদের প্রমোশন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন। যারা তাদের খেয়াল খুশি মতো মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে জনসাধারণের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে।
এদিকে, পুলিশ কাজে যোগদান না করে উল্টো কিছু দাবি দাওয়া দিয়েছে। নিজেদের ভুল স্বীকার না করে উল্টো দাবি একটা শৃঙ্খল বাহিনী কখনও করতে পারে না। দেশের থানার ওসি ও এসআইদের নিয়ে গঠিত পুলিশ এসোসিয়েশন বলছে, পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফেরাতে কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে। গত বুধবার ঢাকায় তাদের এক সভায় কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়।
ওই সভায় পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খেয়ালখুশি মতো নির্দেশ দানের কারণেই পুলিশের এই দশা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব পুলিশ ফিরে আসলে আবারও বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করতে দ্বিধা করবে না।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, একটি বিষয়ে সবার একই মত আর তা হলো পুলিশকে অপব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও অবিশ্বাস বেড়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৮১ শতাংশ মানুষ সংস্কার সম্পন্ন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ চান
‘স্বৈরাচারের চল্লিশা’ উদযাপন, অতিথি বাঁধন
পালানোর সময় যেভাবে আটক হলেন মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তরা
রাজবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা
ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার ৮৬ নারী
কলকাতায় এবার রোগীর মাকে শ্লীলতাহানি, ভিডিও ধারণ
দোয়ারাবাজারে গলায় ফাঁশ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন, নতুন কমিটিতে যারা আছেন
বড় চমক দেবে হোয়াটসঅ্যাপ! ইউজারদের সঙ্গে এবার কথা বলবে মেটা এআই
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের
নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় কারাগারের দেয়াল ধস, পালিয়ে গেল প্রায় ৩০০ বন্দি
চীনের সাংহাইতে ৭০ বছর পর শক্তিশালী টাইফুনের আঘাত
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে ওজোনস্তর রক্ষা করতে হবে: ড. ইউনূস
চলতি বছর ‘লা নিনা আবহাওয়া’ পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা ৫৫ শতাংশ
ভারতে পাচারের সময় ৮৫০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে বিজিবি
রাস্তায় জন্ম নেয়া ব্রেক ড্যান্স যেভাবে পৌঁছে গেছে অলিম্পিকে
ফের ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাবি
মোদির সংসারে নতুন অতিথি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আমির হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল জামায়াত
পালানোর সময় সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবু আটক