র্যাব বিলুপ্তির দাবি বিশিষ্টজনদের
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সংবিধান অপ্রতুল। তাই বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এছাড়া পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির দাবিও উঠেছে। বক্তারা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হয়েছে র্যাব। গতকাল রোববার রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি তোলেন বক্তারা। ‘নতুন বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক)। এতে সভাপতিত্ব করেন নাবিক সভাপতি শিহাব উদ্দিন খান। আলোচ্য বিষয়ে ধারণাপত্র পাঠ করেন নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সল।
আলোচনায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ মুদ্দাসসির চৌধুরী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, জেলা জজ (অব.) বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আলম, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. গোলাম রাব্বানী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রামের সাবেক অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আব্দুর রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর ও স্থপতি মারুফ হোসাইন। আরও ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস।
ধারণাপত্রে নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সল পাঁচটি দাবি জানান। এগুলো হলো- মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র্যাবের বিলুপ্তি, ডিজিএফআইর আমূল সংস্কার এবং পুলিশের সংস্কার ও লোগো পরিবর্তন; আওয়ামী ফ্যাসিজমের সাথে জড়িত এবং সহযোগীদের কঠোর বিচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা; অকার্যকর ও আওয়ামী রেজিম টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন জনবান্ধব সংবিধান প্রণয়ন; ন্যয়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নতুন বিচারক নিয়োগ এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে; ন্যয়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, চার দিকে শুধু ষড়যন্ত্রের গন্ধ। বিগত স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে নিজের লোক বসিয়ে রেখেছে। গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তাহমিদ বলেন, শনিবার যখন ‘জুড়িশিয়াল ক্যু’ হলো সেটি একটা টিভি মিডিয়াতেও দেখানো হলো না। একটা অদৃশ্য শক্তি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী হচ্ছে সেটি মিডিয়া প্রচার করছে না। খবরগুলো ফিল্টারিং করা হচ্ছে।
তাহমিদ বলেন, এখনও পুলিশ প্রশাসন থেকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। সবাই কাজে আসছেন না। তারা এখনও থানাগুলোতে যোগ দিচ্ছে না। আমাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে কথা বলতে হবে। বিগত স্বৈরাচারের পরীক্ষিত দালালরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো যে দেশবিরোধী শক্তিগুলোর কাছে পাচার করছে না তার নিশ্চয়তা নাই। দেশবিরোধী শক্তিগুলো এখনও কাজ করছে। নুর খান লিটন বলেন, বিগত বছরগুলোতে এমন দুঃশাসনের মধ্যে কাটিয়েছি আমরা, যা বর্ণনা করা কঠিন। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, কারও পক্ষে এককভাবে কথা বলা কঠিন। আমাদের কথা বলার কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের এনজিও ব্যুরোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে অথবা অর্থ ছাড় করতে পারেনি। তিনি বলেন, এখনও পুলিশকে কাজে যোগ দিতে একটা গ্রুপ বাধা দিচ্ছে। এই গ্রুপটি গত সরকারের সময় দুর্নীতি লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল।
মো. মাসদার হোসেন বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর আজ মুক্ত পাখির মতো ডানা ঝাপটাতে ইচ্ছে করছে। এতো দিন বন্দি পাখির মতো ছিলাম। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলতে কিছুই নাই। শুধু আইন থাকলেই হবে না, মানুষগুলো বদলাতে হবে। এতদিন এক ব্যক্তির কথায় দেশ চলছিল। তিনি বলেন, শত বছরের পুরনো ফৌজদারি কার্যবিধি আইন (সিআরপিসি) বাদ দিয়েছে ভারত। সেদেশে বিচারকাজ ভিজিবল (প্রকাশ্যে/দৃশ্যমান) হয়। আমাদেরও নিজেদের প্রয়োজনে আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে। রিজার্ভের অবস্থা নাজুক উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এই রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বেনজীরের মতো কয়েকজনের পাচার হওয়া টাকা বিদেশ থেকে আনলেই রিজার্ভের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।
কর্নেল অব. আব্দুল হক বলেন, বিগত স্বেরাচার সরকার শত শত নয়, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রথম কাজ হবে শহীদদের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। শহীদ প্রত্যেকের পরিবারে চাকরি দিতে হবে। যারা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, তাদের দিকে নজর দিতে হবে। অন্যায় অবিচার যারা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। পুরো পুলিশ বাহিনী করাপটেড। পুলিশ বাহিনী সঠিক হলে ৯০ শতাংশ মামলা কমে যেতো। মামলায় দুই পক্ষ থেকেই পুলিশ টাকা নেয়। এই পুলিশকে আমরা হাজার কোটি টাকা দিয়ে লালন করছি। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন
একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন
ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার
লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত
বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু
রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত
টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’
'সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীর যানজট নিরসন করা হবে' ---বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
রাজশাহী সীমান্তে গভীর রাতে বিএসএফের দফায় দফায় গুলি বর্ষন
আজীবন সন্মাননা পাচ্ছেন আবদুল হাদি-খুরশিদ আলম
প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু: যাত্রীদের মাঝে ব্যপক সাড়া
বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি রুপি পায় ত্রিপুরা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
লক্ষ্মীপুরে দুই নারীকে পিটুনি, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার
নওগাঁর রাণীনগরে জাতীয়তাবাদী প্রবাসী ঐক্য পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত