সিএনজি অটোরিকশায় নৈরাজ্য
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
রাজধানী ঢাকায় চলাচলরত ৪০ হাজার সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে ২৫ হাজারই অবৈধ। এর মধ্যে ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার মালিক ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টরা। রাজধানীতে চলাচলের জন্য এই ২৫ হাজার অটোরিকশার কোনো রুটপারমিট নেই। ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে এগুলো চলে আসছে। প্রতিটি অটোরিকশার জন্য মাসে কমপক্ষে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নির্ধারণ করা আছে। গড়ে মাসে ৬ হাজার টাকা করে ধরলে প্রতিমাসে এই চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। এর সাথে প্রাইভেট অটোরিকশার নামে যাত্রী পরিবহন করছে আরও ৪ হাজার ২শ অটোরিকশা। এগুলো থেকেও মাসে চাঁদা তোলা হচ্ছে এক কোটি টাকার বেশি। কয়েক বছর আগে হাইকোর্ট এসব প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশাকে ৬ মাস চলাচলের অনুমতি দিয়ে একটি আদেশ জারি করেছিলেন। সেই আদেশ বার বার বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। কার্যত এসব সাদা অটোরিকশার আয়ুস্কাল বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে।
অবৈধভাবে চলাচলকারী প্রায় ২৫ হাজার অটোরিকশা রাজধানীতে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। একই সাথে বৈধ অটোরিকশার চালক ও মালিকরা তাদের কাঙ্খিত যাত্রী ও ভাড়া পাচ্ছে না। আলাপকালে বৈধ সিএনজি অটোরিকশার কয়েকজন চালক বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই পারবে এসব অবৈধ অটোরিকশা বন্ধ করতে। বৈধ আর অবৈধ মিলে এসব অটোরিকশা প্রায় ২১ বছর ধরে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলছে। চুক্তিতে দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়ায় আদায়সহ খেয়াল-খুশিমতো চলতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একই সাথে মালিকপক্ষ অতিরিক্ত জমা আদায় করছে যেটা নিয়ে কথা বলার মতো সাহস চালকদের নেই। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, সিএনজি অটোরিকশাখাতে নৈরাজ্য বন্ধের জন্য আমরা ধীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্ত সরকার আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, অবৈধভাবে চলাচলের জন্য মাস শেষে বিশাল অঙ্কের টাকার ভাগ একদম উপরমহল পর্যন্ত যেতো বলে হয়তো কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। তবে বর্তমান সরকার চাইলে এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারবে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১৫ বছর। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে ২০১৮ সাল থেকে এসব গাড়ি ভাঙা শুরু করে বিআরটিএ। ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সিএনজি অটোরিকশা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর পরিবর্তে নতুন ইঞ্জিনে পুরাতন নম্বর সংস্থাপন করা হয়েছে। মিশুকের পরিবর্তে নতুন সিএনজির রেজিস্ট্রেশন এখনও শুরু হয়নি। যার সংখ্যা ২ হাজার ৬শত ৯৬।
বিআরটিএ-এর হিসাবে নিবন্ধিত ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশাই ঢাকার রাস্তায় চলাচলের কথা। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে ম্যানেজ করে ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা প্রায় ২৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা ঢাকায় দিব্যি চলছে। যেসব জেলা থেকে ঢাকায় এসব অটোরিকশা চলছে সেগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী। এসব অটোরিকশা ঢাকায় চলাচলে বাধা দেয়ার কথা ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু মাসিক কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা চাঁদার বিনিময়ে ট্রাফিক পুলিশ এসব অটোরিকশাকে বাধা দেয় না। কখনও কোনো ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিলে চালকদের কাছে উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার নম্বর দেয়া থাকে। ওই নম্বরে কথা বললে ট্রাফিক পুলিশ এমনিতেই ছেড়ে দেয়।
চালক ও মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক এসব চাঁদা তোলার জন্য ট্রাফিক পুলিশের প্রতিনিধি নিয়োগ করা আছে। তারা টাকা তুলে সংশ্লিষ্ট জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের কাছে জমা দিয়ে থাকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন তাসলিমা ওরফে তাসলি নামে এক নারী। নিজেকে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন। খিলক্ষেতে এ দায়িত্বে আছেন সবুজ নামে একজন। ঢাকার গাবতলী, মোহাম্মদপুর, জুরাইন, মিরপুর, বসিলা, শনিরআখড়া, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, বাসাবো, বাউনিয়া বেরীবাঁধ, ইসিবি চত্ত্বর, খিলক্ষেত, ইছাপুরা, নন্দিপাড়া, হেমায়েতপুর, হযরতপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একইভাবে নিয়মিত চাঁদা তোলার ব্যবস্থা আছে।
অবৈধভাবে চলাচলের কারণে এসব অটোরিকশা কোনো আইন বা নিয়ম কানুনের তোয়াক্কাই করে না। যাচ্ছেতাই ভাড়া দাবি করে বসে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে মিটারে চলাচলের নিয়মও আর সিএনজি অটোরিকশার চালকরা মানছে না। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে-রাজধানীতে মাত্র দুই শতাংশ অটোরিকশা মিটারে চলে। মিটারে চলা অটোরিকশার ৯২ শতাংশ ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিস দাবি করে। তবে বৃষ্টি বা সরকারি ছুটির আগের দিন অথবা গণপরিবহণ সংকটকালে এ বকশিশের পরিমাণ ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এছাড়া যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৮ শতাংশ অটোরিকশা চালক। এতে করে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দৌলতপুরে পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান : গ্রেফতার-২
ব্রাহ্মণপাড়ায় বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে এনে সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী
ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব এর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত
ভারতের সাথে চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর
খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড বিচার নিশ্চিত করতে হবে-বাংলাদেশ ইসলামী দল
উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি
কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন
একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার
লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত
বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩
সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু