ব্যুথে ব্যুথে ঘুরছেন কার্ডধারীরা
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানীর বেশিরভাগ এটিএম ও ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিনে (সিআরএম) টাকা নেই, আবার কিছু কিছু বুথ বন্ধ রয়েছে। এতে বুথে বুথে ঘুরছেন, কিন্তু টাকা তুলতে পারছেন না কার্ডধারীরা। ব্যাংকগুলো বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশজুড়ে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ব্যাংকের সব শাখা খোলেনি। এছাড়া আতঙ্কিত হয়ে বেশিরভাগ গ্রাহক টাকা তুলে নিচ্ছেন। এতে তরল্য সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো আরো সঙ্কটে পড়েছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে পুলিশহীন থাকায় ডাকাতের ভয়ে অনেক ব্যাংক তাদের বুথে টাকা রাখতে চাইছে নাÑ সব মিলিয়ে নগদ টাকার সঙ্কটে পড়েছেন মানুষ। আবার অনেক ব্যাংক ইচ্ছে করে বুথে টাকা না রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পায়তারা করছে।
গতকাল রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিলের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা কিছু এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। এসব এলাকার সাউথইস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংকসহ বেশকিছু ব্যাংকের এটিএম সেবা বন্ধ পাওয়া যায়। আবার কিছু বুথ খোলা থাকলেও বুথে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যদিও বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে অচলাবস্থা নেমেছিল। তখন এটিএম বুথই ছিল ভরসা। তাই বুথে গচ্ছিত টাকা শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেক এটিএম বুথে ক্ষয়-ক্ষতি এবং নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করায় বন্ধ রয়েছে। এদিকে, বন্ধ থাকা বেশিরভাগ ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মীদেরও পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। যদিও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংকসহ অল্প কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল বলেন, যতক্ষণ-না নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের সেবা ঠিকমতো দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রাজধানীর কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। জরুরি প্রয়োজনে শনিবার টাকা তুলতে গিয়ে ৫০টির বেশি এটিএম বুথে গিয়ে বিমুখ হয়েছেন। হেঁটে ও রিকশায় কমলাপুর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন এলাকার বিভিন্ন এটিএম বুথে গেছেন তিনি। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুরেও টাকা তুলতে পারেননি। নিজ ব্যাংকের বুথে টাকা না পেয়ে আরো ৯টি ব্যাংকের এটিএম বুথে গেছেন সাউথইস্ট ব্যাংকের এ গ্রাহক। বেশির ভাগ এটিএম বুথেই লেখা ‘আউট অব সার্ভিস’। কোথাও কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি বা কারিগরি ত্রুটির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এটিএমে টাকা পৌঁছে থাকে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এটিএমে টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই দেশজুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা বন্ধ। যতটা না টাকার সঙ্কট, তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার আশংকায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স লিমিডের একজন কর্মকর্তা বলেন, আজ (গতকাল) আমরা এক টাকাও সরবরাহ করতে পরিনি। আমাদের ভল্টে আর টাকা নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকও টাকা দিচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের কোম্পানি প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা সরবরাহ করলেও আজ কোনো টাকাই দিতে পারিনি। নগদ টাকার সঙ্কট ও নিরাপত্তার ঝুঁকি এর অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংকের এটিএমে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বুথ থেকে টাকা তুলতে এসে ফেরত যাওয়া গ্রাহক হালিম সরকার বলেন, পাঁচটি বুথ ঘুরে এখানে এসেছি। কিন্তু এখানেও আমার ব্যাংকের বুথ বন্ধ। ইতোমধ্যে ২০০ টাকা রিকশা ভাড়া খরচ হলো। টাকা তুলতে পারলাম না। এখন হয় বিকাশ অথবা নগদে টাকা এড মানি করতে হবে অথবা অন্য ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে। কিন্তু অন্য ব্যাংকেও পাব কি না সংশয়ে আছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে চার হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়। দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ঢাকা ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের বেশির ভাগই শহরাঞ্চলে, তিন হাজার ৯৮৫টি।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন
ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার
লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত
বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু
রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত
টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’
'সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীর যানজট নিরসন করা হবে' ---বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
রাজশাহী সীমান্তে গভীর রাতে বিএসএফের দফায় দফায় গুলি বর্ষন
আজীবন সন্মাননা পাচ্ছেন আবদুল হাদি-খুরশিদ আলম
প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু: যাত্রীদের মাঝে ব্যপক সাড়া
বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি রুপি পায় ত্রিপুরা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
লক্ষ্মীপুরে দুই নারীকে পিটুনি, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার
নওগাঁর রাণীনগরে জাতীয়তাবাদী প্রবাসী ঐক্য পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
বিনিয়োগ ‘ধ্বংসের’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি এস আলমের