ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা, গুলিবিদ্ধ ৬
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ব্যাংকিংখাতে মাফিয়া হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতোদিন ব্যাংক লুট করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। গত বৃহষ্পতিবার ইসলামী ভ্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে বেনামে ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতায় সেই টাকা তুলতে পারেনি এস আলম গ্রুপ। আর তাই এবার আরও বেপড়োয়া হয়ে উঠেছে। ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি পক্ষের সশস্ত্র হামলায় অন্তত ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন, শফিউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান, বাকিবিল্লাহ। অন্য দুই জনের নামপরিচয় জানা যায়নি। আহতরা সবাই বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বিপাকে পড়ে এস আলম গ্রুপ।
ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তারা এস আলম গ্রুপ দখলের পর বড় পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাংকে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। তাই ভাড়াটে গুন্ডা পাঠিয়ে ব্যাংক দখলে নিতে গিয়েছিলেন এস আলম। এই ভাড়াটে গুন্ডা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। কয়েকদিন থেকে দখল, চাঁদাবাজির নানান অভিযোগের পর এবার ইসলামী ব্যাংক দখলেরও চেষ্টা করেছেন তিনি। এর আগে মতিঝিলের একাধিক ব্যাংক এবং আ. লীগের সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের পিএস এবং এপিএসদের ফোন দিয়েও গত কিছুদিন থেকে চাঁদা দাবি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপের হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে নয়ন ও তার অনুসারীরা এই ব্যাংক দখলে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। ব্যাংক দখলে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন। এসময় ৬ ব্যাংক কর্মকর্তা তার ছোড়া গুলিতে আহত হন। দলটির নেতা-কর্মীরা জানান, সরকার বিরোধী আন্দোলনে তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনাম হন যুবদল নেতা নয়ন। সাংবাদিক না হয়েও প্রেস লেখা জ্যাকেট পড়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরো দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন তিনি। আর এসব ঘটনাকে পুঁজি করে লেখাপড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকলেও তিনি সবসময়ে সংগঠনের বড় বড় পদে আসীন হয়েছেন। দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সবসময়ে তার অপরাধকে মৌন সমর্থন দিয়ে আসছেন বলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। মাগুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও মাত্র কয়েকদিনে দখল আর চাঁদাবাজি করে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছেন নয়ন। এর ফলে দলের মধ্যে নানান বিতর্ক চলছে তাকে ঘিরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা এবং যুবদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সমর্থনে রবিউল ইসলাম নয়ন পুরো দলকে ডোবাবে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর একটু মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ আসলেও নয়নদের এ রকম কর্মকাণ্ডের কারণে তা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম নয়নকে ফোন দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন দখলে থাকা এস আলম গ্রুপের ভাড়াটে লোকজন এ গুলি করেছে। তারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। এরপর দিনভর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এস আলম বিরোধী আন্দোলনকারীরা। এদিকে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গুলি এ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ আইনের বাইরে থাকবে না। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে থাকে, দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে যে-ই হোক।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন এস আলমের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ এবং ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর পদায়ন পাওয়া এক্সিকিউটিভসহ (নির্বাহী কর্মকর্তারা) যারা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি করেন। এমন অবস্থায় গত গত বুধবার এস আলমের আমলে পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) কায়সার আলী ব্যাংকে এলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী জানান, রোববার জানতে পারি এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের যারা আছেন তারা একত্রিত হচ্ছে। যারা ব্যাংকটিকে লুটপাট করেছে তারা চাইছে নিজেদের লোক ব্যাংকে রাখতে। এ তথ্য পেয়ে তারা যাতে ব্যাংকে ঢুকতে না পারে সেজন্য ব্যাংকের সামনে আমরা অবস্থান নেই। একটা পর্যায় এস আলমের লোকজন সিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। তারা মিছিল নিয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চায়। তখন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিহত করতে গেলে এস আলমের লোকজন গুলি চালায়। তাতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকাররা সে সময় প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায়।
কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের পরিষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লুটেরাদের বের করে দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি তারা এস আলমের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু
রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত
টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’
'সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীর যানজট নিরসন করা হবে' ---বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
রাজশাহী সীমান্তে গভীর রাতে বিএসএফের দফায় দফায় গুলি বর্ষন
আজীবন সন্মাননা পাচ্ছেন আবদুল হাদি-খুরশিদ আলম
প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু: যাত্রীদের মাঝে ব্যপক সাড়া
বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি রুপি পায় ত্রিপুরা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
লক্ষ্মীপুরে দুই নারীকে পিটুনি, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার
নওগাঁর রাণীনগরে জাতীয়তাবাদী প্রবাসী ঐক্য পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
বিনিয়োগ ‘ধ্বংসের’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি এস আলমের
বাতিল হলো মৌলভীবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প
সাভারে বাস চাপায় সিআরপি শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক পেলেন ৭২ বিজিবি সদস্য
শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জনজীবন স্থবির
খুবির নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ উপাচার্যের