শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে এই সরকারের মামলা করা জরুরি -আলী রিয়াজ
১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে এই সরকারের মামলা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া যেতে পারে। যাঁরা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল সোমবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারের সমাপনী বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে একটি অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তার ফল এই গণঅভ্যুত্থান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে ক্রান্তিকালীন সরকার হিসেবে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য। তিনি আন্দোলন থেকে দুটি বার্তা পেয়েছেন। প্রথমত, যারা অন্যায় করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই অবস্থার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে হবে। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। এগুলো সময়সাপেক্ষ ও জরুরি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। কিছু সংস্কার পরবর্তী সময়ে করতে হবে, যাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা সেটি করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে যেতে হবে, যাতে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা যায়।
সুজন সম্পাদক বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণবিস্ফোরণ হয়েছে, যে আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, তা নস্যাৎ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অনেক চেষ্টা হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে দেশ যোজন যোজন দূরে। ১৯৯১ সালে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার যেন ব্যর্থতা না আসে, সে জন্য ছাত্রসমাজ ও নাগরিক সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, জন-আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার গঠিত হয়েছে। দুটি আকাক্সক্ষা- একটি হলো এই সরকার দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। অন্যটি হলো বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা বলুক এই দুটি স্বপ্নের মধ্যে তাঁরা কী করতে চান।
বিদ্যমান সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই সংবিধান রেখে জবাবদিহিমূলক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। এই সংবিধানেই স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা আছে। এই সংবিধান রেখে চিরস্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ হবে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে জন-আকাক্সক্ষা ধারণ করতে হবে। ১৫ বছরে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। কাঠামো ভেঙে পড়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পুনর্গঠন করতে তাড়াহুড়া কেন, দেশ বদলাতে চান না?
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহুমুখী ঘটনা ঘটেছে। দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বাক-স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব কালো আইন বাতিল করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করে সংস্কার পরিকল্পনা করতে হবে। জনপ্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির ঘটনাগুলো নিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মেয়াদের মধ্যে জবাবদিহি সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষা ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের দাবি রাজনৈতিক দিক থেকে যৌক্তিক তবে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ থেকে এখনই তা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে ভাবতে হবে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান বলেন, এখন যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোর দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোর ভিত্তি ২০০৭-০৮ সালে করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু ধুয়েমুছে ফেলা হয়। এখন এমন কিছু করতে হবে, যাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক নতুন করে দাঁড়াতে পারে। গণতন্ত্র নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ আসতে পারে রাজনৈতিক দল থেকে। রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলো তাঁরা সহজে পরিবর্তন করতে চান না। ১৯৯১ ও ২০০৭-০৮ সালেও এ ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল; কিন্তু পরিবর্তন আসেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিচারহীনতা। অপরাধীদের বিচার করা যায়নি।
সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ, এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। প্রবন্ধে তিনি রাষ্ট্র সংস্কার, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, পরিসংখ্যান জালিয়াতি থামানো, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিস্থিতি, ডিজিটাল অর্থনীতির নিরাপত্তা, মেধাভিত্তিক নিয়োগ বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা