বক্তব্য দেওয়ার সময় ৫ আগস্টে গণভবন ও সংসদ ভবনের চিত্র মাথায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘শেখ হাসিনার বিচার দাবি ও ক্যাম্পাসে দখলদারির ছাত্র রাজনীতি বন্ধ’ শীর্ষক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করে দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, একইসঙ্গে যারা উপদেষ্টা আছেন, আজকে অনেক উপদেষ্টাকে দেখছি, খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিতে। আমরা সেসব উপদেষ্টাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং যখন কোনও বক্তব্য দেবেন, আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা মাথায় থাকে।

হাসনাত বলেন, যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, যারা হাসিনাকে পুনর্বাসনের মতো বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে নামাতেও দ্বিধাবোধ করবো না।

এ সময় কয়েকটি দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, আজ খুনিদের পুনর্বাসন করার যে মেকানিজম করছেন, সেই চক্রান্তের বিষদাঁত আমরা ভেঙে দেবো। আমরা সচেতন করে দিতে চাই উপদেষ্টাদের। আপনারা সচেতন হয়ে যান। ছাত্র-জনতা আপনাদের প্রতিহত করবে। সুতরাং খুনিদের পুনর্বাসনের কোনও চিন্তা করবেন না।

গণমাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, আছে, থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু গণমাধ্যম খুনিদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ার করতে চাই, জনতার কাতারে নেমে আসুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানান সমন্বয়ক হাসনাত। তিনি বলেন, হাসিনাকে প্রধান আসামি এবং সহযোগীদের আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। বাতাস থেকে এখনও রক্তের গন্ধ যায়নি। আপনাদের স্পর্ধা হয় কী করে? আপনারা জনতাকে অস্বীকার করে খুনিদের পুনর্বাসন করবেন? এছাড়া ১৫ আগস্ট যদি কোনো প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা চলে, তা প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ৫ আগস্ট আমরা নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, এই স্বাধীনতা যারা ক্ষুণ্ন করতে চান, তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হবে।

এর আগে সোমবার সিএমএইচ হাসপাতালে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল উল্লেখ করে বলেন, ‘দলটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। এক সময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল, এটা জাতীয় সম্পদ। এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি।’
দলটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় দলকে নষ্ট করবেন না, নষ্ট করার অধিকার আপনাদের নেই। এমন কিছু করবেন না, যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা দল সংগঠিত করেন, নির্বাচন হলে অংশ নেবেন। মারামারি করে লাভ নেই। আর কোনো মৃত্যু আমরা চাই না।

এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা। সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কয়েকজন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২ হাজার শিক্ষার্থী।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই- খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘অপরাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সারাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনা যে পরিমাণ গণহত্যা চালিয়েছে, তার পুলিশ বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীকে ব্যবহার করে যেভাবে সাধারণ ছাত্র জনতার উপর নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়েছে তার দায় কোনোভাবেই খুনি হাসিনা এড়াতে পারে না। তাকে এই গণহত্যার সর্বোচ্চ দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নাহয় আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের ঋণ কখনো শোধ হবে না। ইউনূস সরকারের কাছে শিক্ষার্থীরা আবেদন জানান, অনতিবিলম্বে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশে এনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে এদিন সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ছাত্র রাজনীতি নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সচেতনতা। ক্যাডারভিত্তিক বাহিনী বানানো, নির্যাতন-নিপীড়ন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই করেছি। ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকায়ই ফ্যাসিবাদী হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব হয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। পেশিশক্তির রাজনীতি, নির্যাতন-নিপীড়নের রাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির পতনের সময় এসেছে।

এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সমন্বয়করা নিজেদের ফেসবুক একাউন্টে বিকালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ঢাবি শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একটি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছি। আমরা দীর্ঘদিনের এক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছি। যেই ক্যাম্পাসে বিরোধী মতাদর্শের লোকেরা একটা টু শব্দও করতে পারতো না, একটা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কাছে পুরো ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ছিল জিম্মি, আজ সেই ক্যাম্পাসে দলমত নির্বিশেষে সবাই কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে। আমরা এই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। তাই সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।
###