ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

‘ছাত্র পুয়াইন অল ন থাকিলে আঁরার পেঠ ক্যাঁনে চলিবো’

Daily Inqilab আকিজ মাহমুদ, চবি থেকে

১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম

মোহাম্মদ রফিক পেশায় একজন রিকশা চালক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সচারাচর দেখা মেলে তার। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রিকশা চালান ক্যাম্পাসে। ভরাট মুখমন্ডল তার দাঁড়িতে পরিপূর্ণ। টুপি মাথায় মুচকি হাসির সরল চেহারায় মিশে যান ছাত্রদের মাঝে। অথচ এক সাগর কষ্ট তার হৃদয় গহীনে। তিন কন্যা সন্তানের বাবা এই মানুষটির এখন দিন চলে নানান অনিশ্চয়তায়। গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকে দুঃশ্চিন্তার পাহাড় জমেছে তার মনে। কিছুতেই কাটছে না অমানিশা।

ক্যাম্পাসের পাশে ফতেহপুর ইউনিয়নের আলাওলপাড়ায় তার বাসা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘মামা, আঁই পুন্নিদে ক্যাম্পাস হত্তে খুলিব হনো ঠিক ঠিকানা নাই। হত্তে খুলিত পারে এঁতে?’ (মামা শুনলাম অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস নাকি বন্ধ কবে খুলতে পারে?) উত্তরে আশাহত হলেন, মুখজুড়ে তার উৎকণ্ঠা আরো বেড়ে যায়। তিন কন্যা সন্তানের দু’জনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটা পড়াশোনা করে। মেয়েকে পড়াতে চান তিনিও। জানালেন বড় মেয়েটা নাকি শশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছে, জামাইকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রাম প্রচলিত বিয়ের অপসংস্কৃতির বলি মোহাম্মদ রফিক। পড়েছেন ঋণের বেড়াজালে। বছরের পর বছর সেই ঘানি টেনে ফুরিয়ে যাচ্ছে তার শক্তি সামর্থ্য। প্রতিসপ্তাহে তাকে তিন হাজার টাকার কিস্তি দিতে হয়। এর বাইরে দুই পায়ের রিকশার প্যাডেলেই চলে তার পুরো সংসার। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন তা থেকেই নিজের ও বউয়ের ওষুধের টাকাও জোগাড় হয়। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে দিনগুলো ভালোভাবেই কাটে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়াটা তার জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।

দুইহাত দুই হাতলে রেখে ভারদৃষ্টিতে সামনে এগিয়ে চলে রফিক মিয়ার রিকশা। অনেক প্রশ্ন জমে আছে তার মনে। নিজের সাথে বোঝাপড়ার মধ্যে দুই একটা কথা বলে ফেলেন বিভিন্ন জনকে। ‘হত্তে খুলিব তো হইত ন পারি। এহন ক্যান গর চলিওম হই ন পারি। উদারর টিঁয়া বাড়ি যাইবই’ (অনির্দিষ্টকালের বন্ধ, এর মধ্যে কিভাবে চলবো বুঝতেছি না। ঋণ তো আরো বেড়ে যাবে)। সবকিছু স্বাভাবিক হবে কিভাবে সেই সামাধান তিনি জানেন না। সরল গলায় তাই তার এই সরল উক্তি। চোখ মুখজুড়ে হতাশার কালো ছাপ। অনিশ্চিত এই সময়টা তার জন্য বোধহয় দুর্গম পাহাড়ি পথের মতোই ভঙ্গুর। গ্রীষ্মের করাল দাহ কাটতে না কাটতেই যেন বর্ষার নির্মম করাঘাত।
নীল আকাশের কালো মেঘের ছাপ, চারপাশে বর্ষণের আগমনী ভাব। আকাশ ছিদ্র বৃষ্টির ছোটো ছোট ফোটায় মলিন হয় মোহাম্মদ রফিকের সুঠাম দেহ। ভিজে যায় পথ প্রকৃতি। চোখের কোনায় জমানো অশ্রুজল বিলিন হয় একই বর্ষাজলে। সাহায্যের জন্য হাত পাতা নয় বরং তার আকুতি কেবল ওই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রতি। সেটা যে কবে নাগাদ হবে তা কেউ জানে না। আশাহীন ঝঞ্জাট পরিবেশে সকলেই ঢুবে আছে। গুমোট মনে বাধা নেই কান্না করবার। তবু স্বর সামলাতে হয়। মনোবল যে ভাঙা যাবে না। মোহাম্মদ রফিক একজন বাবা। বিপ্লব কি জিনিস তার চেয়ে ভালো ক’জনইবা জানে।

শেষে এটুকুই তিনি বললেন, ছাত্র পুয়াইন অল ন থাকিলে আঁরার পেঠ ক্যাঁনে চলিবো? ভার্সিটির পুয়াইন অক্কলর ঊয়োর আঁরার ইনকাম। ইনকাম ন থাকিলে পরিবার ক্যাঁনে চলিব? (ছাত্ররা না থাকলে আমাদের জীবিকা চলবে কেমনে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমরা কত মানুষ নির্ভর করে থাকি)। মোহাম্মদ রফিকের এই প্রশ্নের উত্তর যে আপাতত কারো কাছেই নেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
আরও

আরও পড়ুন

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী