অধস্তন আদালতে ১৭০ বিচারক হাইকোর্টে ৫০ বিচারপতি বহাল
২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
‘অবৈধ সম্পদ অর্জন’র মামলায় ২০১৩ সালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর তৎকালীন বিচারক মোতাহার হোসেন। ন্যায়ানুগ এই রায় প্রদানকে ‘অপরাধ’ গণ্য করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পার্টনার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশছাড়া করেছিলেন বিচারক মোতাহার হোসেনকে। বিচারক এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদককে দিয়ে মামলা করান। এজাহারে তার বিরুদ্ধে দুদক মাত্র ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৫ টাকার ‘বৈধ উৎস’ না পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ এবং সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সদ্য উৎখাত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ক্ষুদ্রতম দৃষ্টান্ত।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব মর্যাদায় সদর্পে চাকরি করছেন দুর্নীতিবাজ বিচারক বিকাশ কুমার সাহা। তার দুর্নীতির বিস্তার ছিলো বিচার বিভাগের সর্বব্যাপী। এজলাসে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে রয়েছে রায় বিক্রি, অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদান, ঢাকা কোর্টের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ভুয়া ভাউচারে আত্মসাৎ, কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যসহ আদালতের প্রায় সকল খাত থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। আদালত পাড়ায় তার দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। ভারতীয় দূতাবাসের তদবির এবং আনিসুল হককে ঘুষ দিয়ে তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং নেন। মরহুম আইন সচিব জহিরুল হক দুলাল আর বিকাশ সাহা আইন মন্ত্রণালয়কে রীতিমতো ইজারা নেন। তাদের কথায় উঠবস করে গোটা বিচার বিভাগ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও তাদের কথা ছাড়া এক কদম নড়তেন না। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা এবং বিচারকগণ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। অধস্তন আদালতের বিচারক, উচ্চ আদালতের বিচারকগণ তাদের ভয়ে ছিলেন তটস্থ। বিচারকদের পদোন্নতি, পোস্টিং,শাস্তি, রায়, জামিন-ইত্যাদির নিয়ন্তা হয়ে ওঠেন বিকাশ সাহা। এ সময় তিনি দুর্নীতিবাজ বিচারকদের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। বিকাশ সাহা ছিলেন আনিসুল হকের কালেক্টর। এ কারণে দেশের ৬৪ জেলায় ‘চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প’র প্রকল্প পরিচালক করা হয় বিকাশ সাহাকে। ২ হাজার ২শ’ ৬০ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার টাকার এই প্রকল্প থেকে আইনমন্ত্রী বিকাশ সাহার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন ১২শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিকাশ সাহা ভাগে পান অন্তত: ৩শ’ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু পরিকল্পনা বিভাগকে দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করায় আইন মন্ত্রণালয়। সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো অর্থ ছাড় হয় না।
শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘পিতা’ এবং তার কন্যা শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধনকারী দুর্নীতিবাজ বিচারক জহিরুল হক দুলাল করোনা আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করলে আইন সচিব হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন অনেকে। তবে সবাইকে অবাক করে আনিসুল হক আইন সচিব হিসেবে বেছে নেন প্রভুভক্ত ভৃত্যের মতো এক বিচারক গোলাম সারোয়ারকে। নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়ায় আইনিসুল হক তাকে বিশ্বস্ত মনে করতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতিবাজ এই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এখনো চেয়ারে বহাল তবিয়তে। গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজ এলাকার শত শত কর্মচারী বিভিন্ন আদালতে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিবাজ আইন সচিবের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন আইন উপদেষ্টাকে বৈঠক করতে দেখা যায়।
আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আরেক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ গোলাম মাহবুব। সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, দলিল লেখকদের লাইসেন্স, কাজী নিয়োগ,বাতিল, স্থগিত ইত্যাদি খাত থেকে এ কর্মকর্তা হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
বহুমাত্রিক দুর্নীতির মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে অবাধ লুটপাট চালানোর পাশাপাশি অধস্তন আদালতেও প্রতিষ্ঠা করা হয় মাফিয়াতন্ত্র। বিচারকরা রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। অনেক বিচারক নিজেদের একনিষ্ঠ আওয়ামীলীগ সমর্থক পরিচয় প্রদানে গর্ববোধ করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিচারিক শক্তি জুগিয়েছেন কথিত এসব বিচারক। বিচার বিভাগ কাগজ-কলমে স্বাধীন হলেও কার্যত হাসিনার সঙ্গে বিচারকদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। দীর্ঘ দিনের সেই সম্পর্কের বিষয়টি এখনো তারা ভুলতে পারছেন না।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও বিচার বিভাগে ঘাপটি মেরে বসে আছেন হাসিনার শাসনামলে নিয়োগকৃত সেইসব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। তারা এখন সুযোগ বুঝে ছোবল দেয়ার অপেক্ষায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে তারা নিজ নিজ জায়গায় সক্রিয় রয়েছেন। এই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদকে সুসংহত করতে বিচার বিভাগীয় যেসব কর্মকর্তারা সর্বান্তকরণে দেহ-মন ঢেলে দিয়েছিলেন তাদের অপসারণে বিলম্ব হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নিকট অতীত কর্মকাণ্ডের নিরিখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি গবেষণারও প্রয়োজন নেই। এরই মধ্যে অধস্তন আদালতের আইনজীবী কমিউনিটি থেকে বিচার বিভাগীয় ১৭০ কর্মকর্তার একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট বারের আইনজীবীরা প্রকাশ করেছেন অন্তত: ৫০ দুর্নীতিবাজ বিচারপতির তালিকা। তালিকা প্রকাশ করে আইনজীবীরা আওয়ামী দলকানা দুর্নীতিবাজ বিচারকদের দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা বারের আইনজীবীদের দেয়া এ তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা হাসিনার ফ্যাসিজমকে প্রলম্বিতকরণে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন, ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং জামিন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। জামিনযোগ্য ধারায় দায়েরকৃত একটি মামলায় এই বিচারক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, দ্য ডেইলি নিউনেশন সম্পাদক দেশবরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার কাছে প্রিয়পাত্র হাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে আনিসুল হকের নির্দেশে তিনি এ আদেশ দেন। এই বিচারক এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো: মেহেদী হাসান ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বহাল রয়েছেন এখনো। দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের রায় দেন তিনি। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রায়ে মূল অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে দেয়া এবং কাউকে কাউকে খালাস দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি একটি রিসোর্টে মাদক এবং নারীসহ ধরা পড়েন মেহেদী হাসান।
সেটেলমেন্ট কোর্টের অতিরিক্ত জেলা জজ মো: শওকত হোসেন অতি দুর্নীতিবাজ বিচারক হিসেবে পরিচিত। নামে- বেনামে তার রয়েছে সম্পদের পাহাড়। বিপুল অর্থ পাচার করেছেন বিদেশে।
বর্তমানে সিরাজগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ মোহাম্মদ এরফানউল্লাহ। আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই বিচারকও দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত। চরম বিএনপি বিদ্বেষী এরফানউল্লাহ ভুয়া মামলায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন।
ঢাকা বারের আইনজীবীরা কট্টর আ’লীগ সমর্থক এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের বেনিফিশিয়ারি ১৭০ বিচারকের তালিকা দিয়ে অবিলম্বে তাদের অপসারণ দাবি করেছেন। এর মধ্যে ঢাকার সিজেএম সৈয়দ মাশফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের সিএমএম মো: কায়সারুল ইসলাম, একই জেলার সিজেএম মো: মোস্তাফিজুর রহমান, নরসিংদীর সিজেএম মোল্লা সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের সিজেএম উৎপল ভট্টাচার্য, গোপালগঞ্জের সিজেএম মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া, নারায়ণগঞ্জের সিজেএম মো: আব্দুর রহমান, চট্টগ্রামের সিজেএম কাজী শহিদুল ইসলাম, একই জেলার সিএমএম মো: রবিউল আলম, ফেনীর সিজেএম মোহাম্মদ আতাউল হক, কুমিল্লার সিজেএম সাউদ হাসান, চাঁদপুরের সিজেএম মো: নূরুল আলম সিদ্দিকী, চাপাই নবাবগঞ্জের সিজেএম কুমার শিপন মোদক, বগুড়ার সিজেএম মো: মনিরুজ্জামান, খুলনার সিজেএম সুনন্দ বাগচী, ঝিনাইদহের সিজেএম মো: আল-আমীন মাতুব্বর, সাতক্ষীরার সিজেএম এসএম আশিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার সিজেএম মো: লুৎফর রহমান শিশির,নড়াইলের সিজেএম মো: কবিরউদ্দিন প্রমাণিক, বরিশালের সিজেএম মুহিবুল হাসান, ভোলার সিজেএম শরীফ মোহাম্মদ সানাউল হক, সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেন, রংপুরের সিজেএম মো: সূরুয সরকার,একই জেলার সিএমএম এ.এফ.আহসানুল হক, কুড়িগ্রামের সিজেএম আলমগীর কবির শিপন, ঠাকুরগাঁওয়ের সিজেএম নিত্য নন্দ সরকার, ময়মনসিংহের সিজেএম মো: মোমিনুল ইসলাম, জামালপুরের সিজেএম মো: মাসুদ পারভেজ, নেত্রকোণার সিজেএম মোস্তাক আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন এবং বিচার বিভাগে উপ-সচিব হিসেবে কর্মরত একেএম ইমদাদুল হক, এস. মোহাম্মদ আলী, আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (রেজিস্ট্রেশন) আবু সালেহ মো: সালাহউদ্দিন খান, মন্ত্রণালয়ের অধীন ডেপুটি সলিসিটর শফিকুল ইসলাম, মো: শাহাবুদ্দিন, উপ-সচিব মোহাম্মদ রহমত আলী, আইন সচিব গোলাম সারোয়ারের একান্ত সচিব এসএম মাসুদ পারভেজ, আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত মুরাদ জাহান চৌধুরী, সুব্রত ঘোষ শুভ, যুগ্ম-সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিসেট্রট সাইফুর রহমান, আরাফাতুল রাকিব, রাজেশ চৌধুরী, অতি দুর্নীতিগ্রস্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন, মোহাম্মদ শেখ সাদী, মো: আতাউল্লাহ, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত সিজেএম মো: সাইফুল আলম চৌধুরী, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো: মইনুল ইসলাম, মো: নূরুল হুদা চৌধুরী, মো: মেহেদী হাসান, আহমেদ হুমায়ুন কবির, তাহমিনা হক, মো: জাকী আল ফারাবী, মো: রাশিদুল আলম, আফনান সুমি, তারিকুল ইসলাম, মো: মামুনুর রশিদ, ঢাকার স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলাওল আকবর, ওয়াসিম শেখ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব, ঢাকার অতিরিক্ত সিএমএম মো: হাসিবুল হক, কক্সবাজার সিজেএম আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরী, ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের কিজারত জুলফিকার হায়াৎ, খুলনা এন্টি টেররিজম ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাহিদুল কবির, ঢাকার স্পেশাল জজ শেখ হাফিজুর রহমান, নরসিংদীর জেলা জজ মাহবুবুর রহমান সরকার, শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন নাহার রুমি, ময়মনসিংহের স্পেশাল জজ ফারহানা ফেরদৌস, ঢাকা মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আসসামছ জগলুল হোসেন, আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত ড.এবিএম মাহমুদুল হক, মো: রুস্তম আলী, অতিরিক্ত জেলা জজ মো: আব্বাসউদ্দীন, যুগ্ম-জেলা জজ ওয়ায়েজ আল কুরুনী, মামুনুর রশিদ, যশোর জেলা জজ শেখ নাজমুল আলমের নামও রয়েছে।
অন্যদিকে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দলবাজ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বেনিফিশিয়ারি হিসেবে ৪৯ বিচারপতির তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঝাণ্ডাধারী ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের একান্ত অনুগত বিচারপতি একেএম রবিউল হাসান, দুর্নীতির দায়ে বিতর্কিত কোম্পানি বেঞ্চের বিচারপতি মো: রেজাউল হাসান, গোপালগঞ্জ কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেন, নিজ এলাকায় মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত ও আইনজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য কুখ্যাতি পাওয়া বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠকুর, আওয়ামী বিবেচনায় স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভে ‘অযোগ্য’ বিবেচিত বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলাম, এজলাসের ভেতর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর জন্য বিতর্কিত বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ফরমায়েশী ও বেআইনি নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী বিচারপতি জেবিএম হাসান, হত্যা মামলার আসামির তালিকা থেকে ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ বিচারপতি মো: রূহুল কুদ্দুস,প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরে কুখ্যাতি অর্জনকারী বিচারপতি মো: খসরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বিচারপতি খিজির হায়াত, ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্থাপনা অপসারণের বিতর্কিত রায় প্রদানকারী এবং শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধনকারী বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যকারী আওয়ামীলীগ সরকারকে দায়মুক্তি প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত কথিত ‘বিচার বিভাগীয় কমিশন’র চেয়ারম্যান বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা ফেরত আনার পক্ষে রায় প্রদানকারী বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিতর্কিত রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া, আওয়ামী পরিবারের সদস্য বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসাইন দোলন, আ’লীগ সরকারের সাবেক স্পিকার ফজলে রাব্বীর জামাতা বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক রায় প্রদানকারী বিচারপতি কেএম ইমরুল কায়েশ, দুর্নীতি মামলায় জিকে শামীমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদানকারী বিচারপতি মো: বদরুজ্জামান, আ’লীগ সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ভাগ্নি জামাই বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দ,আ’লীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান তালুকদারের সহোদর বিচারপতি মো: মাহমুদ হাসান তালুকদার, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় ও সাজা প্রদানকারী বিচারক (বর্তমানে বিচারপতি) মো: আখতারুজ্জামান, আওয়ামী আমলে বিচারপতিদের ফরমায়েশি আদেম বাস্তবায়নকারী সাবেক ডিএজি (বর্তমানে বিচারপতি) বিশ্বজিৎ দেবনাথের নাম রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, যে ভাইরাস এবং বৈশিষ্ট্যের কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে সিটিং প্রধান বিচারপতিসহ ৬ জন বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হলো সেই একই ভাইরাস, একই বৈশিষ্ট্য হাইকোর্টের অনেক বিচারপতির মাঝে বিদ্যমান। হাইকোর্ট হচ্ছে অরিজিনাল জুরিসডিকশন। হাইকোর্টকে দিয়েই শেখ হাসিনা মনমতো বেআইনি কাজগুলো করিয়েছেন। আপনি লক্ষ্য করুন, সারাদেশের আদালতগুলোতে বেগম খালেদা জিয়ার জন একধরনের জুরিসপ্রুডেন্ট, শেখ হাসিনার জন্য আরেক ধরনের জুরিসপ্রুডেন্ট। আমরা সাধারণ আইনজীবীরা ৫০ জন বিচারপতির পদত্যাগ কিংবা অপসারণের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া আমরা চারজন আইনজীবীÑ অ্যাডভোকেট মোহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন, শাহ আহমেদ বাদলসহ আমরা একটি চিঠি দিয়েছি তাদের পদত্যাগের জন্য। প্রচণ্ড দলবাজ ও দলকানা, অযোগ্য ও প্রচণ্ড করাপ্ট এই আওয়ামী বিচারপতিদের পদে রেখে কখনো আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। চিঠিতে আমরা তিন-চারটি ক্রাইটেরিয়া দিয়ে বলেছি, তারা অযোগ্য। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে অন্তত: ৪টি পৃথক তালিকা হয়েছে দলবাজ, দলকানা, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের এর মধ্যে চারটি তালিকাতেই অন্তত: ৩০ জন বিচারপতির নাম কমন। বিশেষত: গত পাঁচবছর যারা আ’লীগের হয়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তাদের স্বপদে বহাল রেখে ন্যায় বিচারের যাত্রাই শুরু করতে পারবেন না। তাই অবিলম্বে এদের সরাতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কৃষকের ৫০০ কলাগাছ কেটে দিল যুবলীগ কর্মীরা
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ১০ পরিবহনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
নায়িকার গাড়ির চাপায় শ্রমিক নিহত
দোয়া চাওয়ার ১০ মিনিট পরেই সড়ক দুর্ঘটনায় ইমামের মৃত্যু
চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের জামাত পড়ার সময় তিন রাকাত না পেলে কেরাত পড়া প্রসঙ্গে।
৩১ ডিসেম্বর কী হতে যাচ্ছে? যা জানা গেল
পটুয়াখালীতে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিল
টোল প্লাজার দুর্ঘটনা সন্তান বেঁচে নেই, এখনও জানেন না বাবা-মা
নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত
শিল্পাচার্য জয়নাল আবদিনের ১১০ তম জন্মবার্ষিকী পালন
এশিয়ান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ইরানি ভারোত্তোলকের স্বর্ণ জয়
রহমত ২৩১*, শাহিদি ১৪১*, বুলাওয়েতে ঐতিহাসিক দিন
এইচ এম কামরুজ্জামান খান সারা জীবন আধিপত্যবিরোধী রাজনীতি করে গেছেন
বন্দরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ধ্বংসের পায়তারা করছে আ.লীগের দোসররা
ময়মনসিংহে আলোচিত ‘বালু খেকো’ আওয়ামী লীগ নেতা জামাল গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস রাগবিতে চ্যাম্পিয়ন সেনাবাহিনী
কোরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব- মামুনুল হক
বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে খাদ্যপণ্যের দাম : বিশ্বব্যাংক
সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত
একইসময়ে রহস্যময় স্ট্যাটাস দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন আসিফ-হাসনাত!