বিদ্যুতখাতে অনিয়মের কাঠামো ভেঙে দিতে চাই : বিদ্যুৎ উপদেষ্টা সিন্ডিকেটের দাপটে পল্লী বিদ্যুতের লাখো গ্রাহক অন্ধকারে : লুটের ভাণ্ডার বিদ্যুৎ সেক্টর রেন্টাল, কুইক রেন্টাল আর মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতের নামে পতিত হাসিনা রেজিম পুরো বিদ্যুৎ সেক্টরকে গিলে খেয়েছে

লুটের ভাণ্ডার বিদ্যুৎ সেক্টর

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

শতভাগ বিদ্যুতের নামে পুরো বিদ্যুৎ সেক্টরকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে পতিত হাসিনা রেজিম সরকার। গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে রেন্টাল, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ অনুগত ব্যবসায়ী ভারতের মোদীর পছন্দের ব্যবসায়ী ও আত্মীয়-স্বজনদের বিদ্যুৎ ব্যবসার সুবিধা দিয়ে পুরো বিদ্যুৎ সেক্টরকে লুটের আখড়ায় পরিণত করেছে। আর এই লুট নিয়ে যাতে কেউ মামলা করতে না পরে সে লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার খুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমরা বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করতে চাই। বিদ্যুৎখাতে অনিয়মের কাঠামো ভেঙে দিতে চাই। এই খাতে ঘটা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। মনে রাখতে হবে,এটা একটি নতুন বাংলাদেশ, এখানে সবার সমান সুযোগ। সংকট যেমন আছে, সমাধানও তেমন আছে। উপদেষ্টা বলেন, অতীতের প্রজেক্টগুলো আমরা অনার (সম্মান) করবো। একটি প্লান্টের কাজ চলছে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যাবে না, যেহেতু আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে বিচারপতি মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করছি। অবশ্য এটা এখনও গেজেট করা হয়নি। এ বিষয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি সম্মতি জানিয়েছেন। এটি একটি স্বাধীন কমিটি হবে।

সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নে মুজিববর্ষ নামে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পের জন্য ট্রান্সফরমার ক্রয় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল। দেশে শহর এলাকার চেয়ে গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং বিদ্যুতের ঘনঘন আসা-যাওয়া বেশি ঘটছে। তা বর্তমানেও আছে। সঞ্চালন-বিতরণ লাইনে দুর্বলতা এবং নিম্নমানের ও ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিনই কিছু সময় বিদ্যুৎহীন থাকছে। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে চারটি সিন্ডিকেট লুটেপুটে খেয়েছে। শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তবে তার প্রভাব বেশি ছিল বিদ্যুতে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিপুল লোকসানের জন্য বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দায়মুক্তি আইনের আড়ালে দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানকে দায়ী করেন। পাশাপাশি ওই সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলের দুর্নীতি এ খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে পালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই গেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে, প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ, গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। ২০০৯ সালে গ্যাসের দুই চুলার মাসিক বিল ছিল ৪৫০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ গেল সাড়ে ১৫ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। এই সময়ে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান ঠেকেছে ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিপরীতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিকে পুঁজি করে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান পাস করা হয় ২০১০ সালে। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এর পর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান। সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে মোটা দাগে চারটি সিন্ডিকেট লুটেপুটে খেয়েছে। শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদ্যুতের চেয়ে জ্বালানি খাতে তাঁর প্রভাব ছিল বেশি। বিশেষ করে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়া, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি ও এলপিজি ব্যবসায় সুযোগ বৃদ্ধি, কূপ খননসহ বিভিন্ন কাজে উপদেষ্টা প্রভাব বিস্তার করতেন বলে জানা গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে সরকার দীর্ঘদিন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখে। তবে বিশেষ বিবেচনায় শিল্পে কিছু গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তৌফিক-ই-ইলাহী ছিলেন এ-সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রধান। এই কমিটির বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তবে তাঁর প্রভাব বেশি ছিল বিদ্যুতে। জ্বালানিতে নানা কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টার মতবিরোধ চলে আসছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে বাধা সৃষ্টি করায় নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ জ্বালানি বিভাগের একাধিক সচিবের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হন; তাঁর সঙ্গে নসরুল হামিদের বিরোধ ছিল সচিবালয়ে আলোচিত ঘটনা। নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক ভাতিজা ও কেরানীগঞ্জের শাহীন চেয়ারম্যান মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ নেতাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে স্থান দিয়ে সিন্ডিকেট করারও অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের বিভিন্ন গ্যাসকূপ খননে চীনের সিনোপ্যাককে কাজ দেওয়ায় নসরুল হামিদের প্রভাব ছিল বলে জানা যায়। তাঁর ছোট ভাই ইন্তেখাবুলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে জোট করে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে- ডিপিডিসি, পিডিবি, ডেসকো, আরইবি ও নেসকোর অ্যাডভান্স মিটারিং, মিটার স্থাপন, বিলিং প্রকল্প ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি-সংক্রান্ত প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। যেমন-পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি বিদেশি দুটি কোম্পানির সঙ্গে একটি এলপিজি প্রকল্পের কাজ পায়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখলেও অভিযোগ আছে, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী কামরুজ্জামান চৌধুরী সম্পর্কে নসরুল হামিদের মামা। গত দুই বছরে ২৭টি সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া আছে নাহিম রাজ্জাকের একটি, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুসের একটি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের একটি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাইয়ের একটি, আবদুস সালামের একটি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একটি, টাঙ্গাইলের তানভীর হাসানের (ছোট মনি) একটি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমানের একটি, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপির একটি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন বিসিএস তথ্য (২০ ব্যাচ) ক্যাডার কর্মকর্তা। প্রায় এক দশকের বেশি সময় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। কয়েক দফা পদোন্নতি পেলেও নিজ বিভাগে বদলি না হয়ে একই মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি হিসেবে থেকেছেন। দীর্ঘ সময়ে এই মন্ত্রণালয়ে থাকার সুবাদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নিয়েছেন সুবিধা। দীর্ঘ সময়ে চাকরি সুবাদে এই তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর অস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েছে।

সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সামিট গ্রুপের আয়ও প্রায় একই। সামিট ছাড়াও বিদ্যুৎ খাতের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ, বাংলাক্যাট, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, বারাকা, এনার্জিপ্যাক ইত্যাদি। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার পছন্দের ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতের ব্যবসা দিয়েছে প্রতিযোগিতা ছাড়াই। এ খাতে কোথায়, কত টাকা খরচ করেছে- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ রাখেনি। আইন করে দায়মুক্তি দিয়েছে।

একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। সমঝোতার মাধ্যমে দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্রয় চুক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। বলা হয়, টেন্ডার না করার ফলে বেশি দামে অধিকাংশ প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে। ভারতের চেয়ে কয়েক গুণ দামে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট এক সময় ২৩ টাকা পর্যন্ত দাম ধরে চুক্তি করা হয়। বেক্সিমকোকে ২০০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেওয়া হয় ১৪ টাকা দরে। আর ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে গড়ে ৫ টাকা ৮১ পয়সা এবং পাকিস্তানে ৩ টাকা ৫১ পয়সা।

অবসরের পর বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরামর্শক হন আলমগীর কবীর। বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে সুবিধাভোগী সামিট গ্রুপের মুখ্য অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব নেন আবুল কালাম আজাদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে চাহিদা না থাকলেও কয়েকটি কোম্পানিকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেয় সরকার। এই প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করতে ভূমিকা ছিল কায়কাউসের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে যে অবৈধ লেনদেন ঘটে, তার অধিকাংশ হয় বিদেশে।

বিদ্যুতের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন ২০১৫ সালের মে মাসে এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আলমের বিরুদ্ধে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ। সেই অভিযোগ আজ পর্যন্ত তদন্ত করা হয়নি। এপিএসসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কোম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে এই ঘুষ নেন তারা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান

হাজীগঞ্জে ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক

হাজীগঞ্জে ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক

৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিলো গ্রিস

৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিলো গ্রিস

গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড

গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড

খুঁজে খুঁজে একে একে সবাইকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

খুঁজে খুঁজে একে একে সবাইকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ কেন?

বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ কেন?

বরিশালে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকগন মুনফা সহ বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ তুলতে পারছেন না

বরিশালে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকগন মুনফা সহ বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ তুলতে পারছেন না

মানিকগঞ্জে ক্যান্সার আক্রান্ত দুই সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা

মানিকগঞ্জে ক্যান্সার আক্রান্ত দুই সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা

ভারত কেন এখন তালিবানকে কাছে টানছে ?

ভারত কেন এখন তালিবানকে কাছে টানছে ?

মুরাদনগরে ভূমিদস্যুদের আতঙ্ক এসিল্যান্ড

মুরাদনগরে ভূমিদস্যুদের আতঙ্ক এসিল্যান্ড

বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ : ফিলেমন ইয়াং

বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ : ফিলেমন ইয়াং

গুরুদাসপুরে একই গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

গুরুদাসপুরে একই গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

মতলবে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন

মতলবে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন

দেশের সর্বাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হোটেলিয়ার-শাখাওয়াত হোসেন

দেশের সর্বাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হোটেলিয়ার-শাখাওয়াত হোসেন

যুদ্ধবিরতি চুক্তি : প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাবেন এক হাজার ফিলিস্তিনি

যুদ্ধবিরতি চুক্তি : প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাবেন এক হাজার ফিলিস্তিনি

কালবিলম্ব না করে অবাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করুন- এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

কালবিলম্ব না করে অবাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করুন- এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী