হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনায় ভারতের প্রতি আহ্বান
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ এএম
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা অভিযোগ করেছেন যে, প্রাক্তন কূটনীতিক, আমলা, রাজনীতিবিদ এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একটি অংশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ছাড়া ভারত-বাংলা সম্পর্ক খারাপ হবে-এই বিশ্বাসে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটা ধন্দে সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপনের কয়েকদিন পর, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন যে, এটি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তিনি মনে করেন, প্রতিবেশি দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ভারতের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক চায়।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপি দলের একজন নেতা, যে দল হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। হাসিনা যিনি দেশ জুড়ে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান। এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে।
বাংলাদেশ তার পাশের প্রতিবেশী ভারতের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক চায় দাবি করে বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক সেলের প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের জনগণের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বরং বাংলাদেশের একটি দল আওয়ামী লীগ ও হাসিনার পরিবারকে সমর্থন দিয়ে ‘সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখে দিয়েছে’।
পিটিআই-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আমির খসরু চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের ্রকঠিন বাস্তবতাগ্ধ নিয়ে ভারতীয় সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রাক্তন কূটনীতিক, কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বাস্তুতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনও শব্দ করেননি। এই বাস্তুতন্ত্রই ভারত-বাংলা সম্পর্ককে ধ্বংস করেছে। .
তিনি বলেন, এই ইকোসিস্টেম এমন এক ধান্দাবাজ তৈরি করেছে যে, আওয়ামী লীগ না থাকলে ভারতের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা থাকবে; শেখ হাসিনা না থাকলে দেশ চলে যাবে মৌলবাদীদের হাতে। আওয়ামী লীগ না থাকলে বাংলাদেশের হিন্দুরা বিপদে পড়বে।
তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অজ্ঞতাসুলভ ধারণা। এই সব মানুষদের এখনই জেগে উঠতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উদার দেশ; এখানে হিন্দু-মুসলমান যুগে যুগে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ জুড়ে, সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তি ভাঙচুর এবং হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েকদিন ধরে ছাত্রদের সহিংসতায় হিন্দু মন্দির ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এরকম ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। তবে এখানে কিছু তথ্য বিকৃতি হতে পারে। বাংলাদেশের কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সমর্থন করে না। বাংলাদেশের সংবিধান সকলের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় এবং সর্বোপরি আমরা এই সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ধারণায় বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের ইস্যুতে অন্যরা কীভাবে মন্তব্য করতে পারে? কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা কীভাবে আসে? তিনি পিটিআইকে বলেন, ভারতে সংখ্যালঘুদের সাথে যা হয় তা নিয়ে কখনই অভিযোগ করা হয় না। তাই এখানে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে কারও মন্তব্য করা উচিত নয়। ভারতকে ্রঅতীতের মালপত্র পিছনে রাখারগ্ধ আহ্বান জানিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের স্পন্দন বুঝতে হবে। সম্পর্কটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে হতে হবে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নয়াদিল্লিকে কেন একজন ব্যক্তি বা পরিবারের উপর নির্ভর করতে হবে? ভারত-বাংলা সম্পর্কের কথা কখন আসে? ভারত সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখেছে। এটি তাদের পক্ষ থেকে একটি বড় ভুল ছিল। তিনি বলেন, আপনি আপনার প্রতিবেশীকে পরিবর্তন করতে পারবেন না এবং আপনার প্রতিবেশীর সাথে আপনার সুসম্পর্ক থাকা উচিত। বাংলাদেশও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের সাথে সর্বোত্তম সম্পর্ক চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি শাসনামলে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিপরীতে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, যেহেতু তারা (আওয়ামী লীগ) ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আওয়ামী লীগ অনেক মেগা প্রকল্প এবং চুক্তি থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পাচার করেছে, যা দেশের স্বার্থবিরোধী ছিল।
তিনি সব সত্য বেরিয়ে আসায় সন্দেহজনক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, চুক্তিসমূহ পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশে সমালোচনার মুখে থাকা ভারতের সাথে কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করা হবে কিনা জানতে চাইলে পরবর্তি নির্বাচনের প্রধান দল বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা শুধুমাত্র ভারতকে বোঝাতে চাচ্ছি না ভারত বা অন্য কোনো দেশের দেশও হতে পারে।
আমরা চাই সমস্ত সন্দেহজনক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং চুক্তিগুলি পুনরায় পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে পর্যালোচনাও করতে হবে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থে না হলে তা পর্যালোচনা করা হবে।
অতীতে বিএনপির শাসনামল ভারত-বান্ধব না হওয়ার জনগণের ধারণা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে খসরু চৌধুরী বলেন, এগুলো ভুল ধারণা। ভারতকে অতীতের সব তিক্ততা পেছনে ফেলে যেতে হবে এবং উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে সোচ্চার হওয়াকে ভারতবিরোধী করে না।
চলমান ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার কথা বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন যে, এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়, বরং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যারা ভারতকে ্রস্বৈরাচারী শাসনের সহায়কগ্ধ হিসেবে দেখেন।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে এটাকে শেখ হাসিনা প্লাস ইন্ডিয়া বনাম বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সে কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ। কারণ এটাকে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়াকে ঢাকা ভালোভাবে দেখছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
হাসিনার সহযোগীদের সম্পদ তদন্তে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ বাংলাদেশের
সিলেট জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেলেন যারা
শেখ হাসিনার এপিএস লিকুর সম্পদের পাহাড়, অনুসন্ধানে দুদক
শুরুতেই হাসান মাহমুদের জোড়া আঘাত
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার
অরুণাচলে লালফৌজের রসদ পৌঁছতে সীমান্তে হেলিপোর্ট! অস্বস্তিতে ভারত
ব্যালন দ’র জিততে পারেন মার্তিনেস: গুয়ার্দিওলা
নিউইয়র্কে হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক : হিন্দুস্তান টাইমস
ভারতে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘নারী ডন’ গ্রেফতার
মঙ্গলে কিলবিল করছে মাকড়সা! অবশেষে রহস্যের সমাধান
বৈদেশিক মুদ্রা আইনের মামলায় সালমান-আনিসুল ৫ দিনের রিমান্ডে
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা
ভারতে পুলিশ সদস্যের গুলিতে ২ সহকর্মী নিহত
কাজ করবে না অ্যান্টিবায়োটিক, প্রাণ হারাবে ৪ কোটি মানুষ!
ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ
বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
শেরপুরের পাঁচ থানার ওসি বদলি
রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা
২০৩৫ সালের মধ্যে আধুনিক স্মার্ট বন্দর তৈরি করবে চীন