ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করতে চায়

সংবিধানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সংযোজন -তারেক রহমান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম

আমাদের পূর্বসূরীরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ আমাদের দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূল শক্তি ছিল- প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। অত্যাবশ্যকীয় একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রথম দিন থেকেই। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠন কোনো অবদান রাখতে পারেনি।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেষ পর্বে গতকাল বুধবার ঢাকা বিভাগে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখেছি দলীয় সরকারে কিভাবে একটি দলের লোকজন বিচরণ করে সর্বত্র; আর অন্য সবার অবস্থান হয়ে পড়ে তুচ্ছ আর গৌণ। ফলে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়।

তারেক রহমান আরো বলেন, এদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন; তারা সকলে আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ সংষ্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান- এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুনী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন; কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসাবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়। তিনি বলেন, আমি বিনয়ের সাথে শুধু আমাদের আগামীর পরিকল্পনা আর সদিচ্ছার কথা জানাতে পারি, কারণ আমরা জানি- দেশের মানুষের সমর্থনই কেবলমাত্র আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহয়তা করতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, আশাকরি জনগণ নিশ্চয়ই সেই সব দল বা ব্যক্তিকে জাতীয় সরকারে সামিল দেখতে চাইবেন না; যারা পুরো দেশটাকে একটা দল আর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লাখ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশে গড়েছে সম্পদের পাহাড়। গুম-খুন হামলা-মামলা নির্যাতনে দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, চাল ডাল লবন তেল ওষুধের দাম মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। আইন বিচার নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এমন কি পালিয়ে যাবার পূর্ব মুহূর্তেও শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলা; জনগণ নিশ্চয়ই সেই জালেমদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাইবেন না।

বিগত সতেরো বছরের বিরামহীন আন্দোলনে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য তারেক রহমান সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের পরিবর্তিত আশা আর ভাষার সাথে নিজেদের মানিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের উপযুক্ত হতে তিনি নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন। তিনি সাম্প্রতিককালে গজিয়ে ওঠা অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন।

সবশেষে তৃণমূলের প্রতি অগাধ আস্থা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দলের সকল সঙ্কটকালে তৃণমূলই বিএনপিকে বার বার রক্ষা করেছে। এমপি মন্ত্রী পদ পদবীর প্রত্যাশা না করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদল যারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর বিএনপি র আদর্শের প্রতি যে অবিচল আস্থা বরাবর রেখেছেন সেটা অব্যহত থাকলে দল হিসাবে বিএনপির সফলতা আর অগ্রযাত্রা কখনোই ব্যহত হবে না।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মঙ্গলে কিলবিল করছে মাকড়সা! অবশেষে রহস্যের সমাধান

মঙ্গলে কিলবিল করছে মাকড়সা! অবশেষে রহস্যের সমাধান

বৈদেশিক মুদ্রা আইনের মামলায় সালমান-আনিসুল ৫ দিনের রিমান্ডে

বৈদেশিক মুদ্রা আইনের মামলায় সালমান-আনিসুল ৫ দিনের রিমান্ডে

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা

ভারতে পুলিশ সদস্যের গুলিতে ২ সহকর্মী নিহত

ভারতে পুলিশ সদস্যের গুলিতে ২ সহকর্মী নিহত

কাজ করবে না অ্যান্টিবায়োটিক, প্রাণ হারাবে ৪ কোটি মানুষ!

কাজ করবে না অ্যান্টিবায়োটিক, প্রাণ হারাবে ৪ কোটি মানুষ!

ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

শেরপুরের পাঁচ থানার ওসি বদলি

শেরপুরের পাঁচ থানার ওসি বদলি

রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা

রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা

২০৩৫ সালের মধ্যে আধুনিক স্মার্ট বন্দর তৈরি করবে চীন

২০৩৫ সালের মধ্যে আধুনিক স্মার্ট বন্দর তৈরি করবে চীন

লেবাননে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, নিহত ২০

লেবাননে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, নিহত ২০

এস আলমের গৃহকর্মীর নামে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ!

এস আলমের গৃহকর্মীর নামে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ!

পরীক্ষা দিতে এসে আটক ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মী

পরীক্ষা দিতে এসে আটক ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মী

পিটিয়ে হত্যার আগে তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল ঢাবি শিক্ষার্থীরা

পিটিয়ে হত্যার আগে তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল ঢাবি শিক্ষার্থীরা

জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচনে শলৎসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারৎস

জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচনে শলৎসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারৎস

রাজ্জাকের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন নেপালের ঝা

রাজ্জাকের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন নেপালের ঝা

মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে যা বললেন দে পল

মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে যা বললেন দে পল

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গ্রেপ্তার

জাবিতে গণপিটুনির শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মারা গেছেন

জাবিতে গণপিটুনির শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মারা গেছেন

দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌ-বাহিনীর ২০০ সদস্য

দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌ-বাহিনীর ২০০ সদস্য