বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড এই হত্যাকাণ্ডের রেশ ধরেই এসেছে ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ভোটারবিহীন নির্বাচন, শিক্ষা ব্যবস্থা-বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস, দুর্নীতির মহোৎসব, গুম-খুনের অবাধ রাজত্ব

পিলখানা হত্যার মাস্টারমাইন্ড হাসিনা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম

পিলখাখা হত্যাকান্ডের নেপথ্যে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিলো। এ হত্যাকান্ড অপারেশন ডালভাতের জন্য হয়নি। এটি একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এছাড়া এ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা। ভারতের মদদে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক, ছিল ভারতের চক্রান্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আবদুল মতিন এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন আরও বলেন, এই হত্যাযজ্ঞের রেশ ধরেই এসেছে ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ভোটারবিহীন নির্বাচন, শিক্ষা ব্যবস্থা-বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস, দুর্নীতির মহোৎসব, গুম-খুনের অবাধ রাজত্ব। এ ঘটনায় অনেকে চাকরি হারান, অনেকে পদোন্নতি বঞ্চিত হন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাযজ্ঞের বিচার না করা হলে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা হলে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া নতুন স্বাধীনতা মুখ থুবড়ে পড়বে।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় রাজধানীর বনানীতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের বাসায় বিডিআরের ডিএডি হাবিব, ডিএডি জলিল, ল্যান্সনায়েক রেজাউল, হাবিলদার মনির, সিপাহি সেলিম, কাজল, শাহাবউদ্দিন, একরাম, আইয়ুব, মঈন, রুবেল, মাসুদ, শাহাদত ও জাকির (বেসামরিক) বৈঠক করেন। এর আগে-পরেও বিডিআর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। সুবেদার গোফরান মল্লিক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানার ভেতরে গেলেও সেনা কর্মকর্তাদের কোন খবর নেননি। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ জড়িতদের পালাতে সহায়তা করেছেন। নানাভাবে খুনীদের সহযোগিতা করেছেন রাজনৈতিক নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, মির্জা আজম, ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এমপি রেজা, ওয়ারসেত হোসেন বেলালসহ অনেকেই।
মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন বলেন, ২০০৮ সালের ১৭-১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বাসাতেও হাবিলদার মনির, সিপাহি শাহাব, সিপাহি মনির বৈঠক করেন। নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় বিডিআর দরবার সংলগ্ন মাঠে সিপাহি কাজল, সেলিম, মঈন, রেজা এবং বেসামরিক ব্যক্তি জাকিরসহ কয়েকজন বৈঠক করেন। সেনা তদন্ত কমিটি নানারকম বাধার মুখে পড়ে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক সংস্থা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশনার কথা বলে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকে। ওই তদন্ত কমিটির চেয়েছিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারা জড়িত, কাদের পরিকল্পনায় হয়েছে তা পরিষ্কার করতে। কিন্তু তদন্তে তারা কারো সহযোগিতা পাননি। বিশেষ করে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর ( ডিজিএফআই), র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেনি। র‌্যাবের সাবেক ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকারও কোন সহযোগিতা করেননি। এছাড়া সাবেক ডিজিএফআই প্রধান লে. জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, সাবেক জেনারেল আজিজ, সাবেক লে. জেনারেল সোহরাওয়ার্দী, সাবেক মেজর জেনারেল মঈন ও সাবেক মেজর জেনারেল রেজা নুর নানাভাবে সেনা তদন্ত কমিটিকে অসহযোগিতা করেছেন। সাংবাদিক মুন্নি সাহা সংবাদ প্রকাশ করে দ্রুত খবর ছড়িয়ে দেন। তদন্তের নামে প্রহসন করেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে বিডিআর বিদ্রোহের পর সাবেক মহাপরিচালক প্রয়াত মেজর জেনারেল শাকিলের সরকারি বাসায় ওঠেন নতুন মহাপরিচালক। তারপর নতুন মহাপরিচালক অনেক আলামত নষ্ট করে। সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যখন সঠিক তদন্ত শুরু করেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন তখন ওই তদন্ত কমিটির অনেক কর্মকর্তাকে বিনা নোটিসে চাকরিচুত করা হয়। কাউকে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এবং পরিকল্পনায় যুক্ত কিছু সেনা কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ কিছু সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতা ছিল। তারা প্রত্যেকে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে হত্যাকাণ্ডের মূল নেতৃত্বে ছিল ৪০ রাইফেলস ব্যাটেলিয়ন। ওই ব্যাটেলিয়ানের সিও ছিলেন সেনাবাহিনী ১৪ লং কোর্সের লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামস। এ হত্যা কাণ্ডের সময় তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, কথিত বিদ্রোহের প্রথম দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি যখন পিলখানায় গোলাগুলি শুরু হয়, তখন ভেতরে আটকে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল অভিযান করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের অভিযান পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি উপরের নির্দেশে। সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারা তা পরিষ্কার করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের একটি গ্রুপকে বিমানে করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই গ্রুপটিতে কারা ছিল তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পিলখানায় হত্যাকান্ডের সময় আশেপাশের বাসা বাড়ির লোকজন মোবাইলে কিছু ভিডিও ধারণ করেছিলেন। সেই ফুটে যে হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই ছবি এবং কর্মকাণ্ড প্রমাণ ছিল। তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালকের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে সদস্যরা সেই ফুটেজ বাসায় বাসায় গিয়ে ডিলিট করে দেয়। পিলখানার ভেতর অনেক আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা নতুন ভাবে তদন্ত করে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত যারা পরিকল্পনাকারী তাদের মুখোস উম্মোচন করা হোক এবং আইনের আওতায় আনা হোক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিলখানা হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী কর্নেল (অব:) আব্দুল হক, লে. কর্নেল (অব:) সৈয়দ কামরুজ্জামান, লে. কর্নেল (অব:) আমিনুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোরশেদুল হক প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা