নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের অভিমত

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ যৌক্তিক ও সঙ্গতিপূর্ণ

Daily Inqilab রফিক মুহাম্মদ

২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসাবে অভিযুক্ত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন। তারা বলেছে, ছাত্রলীগের মতো একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী দলকে নিষিদ্ধ করে এ সরকার জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা পূরণ করেছে। সরকার সময়ের দাবি পূরণ করেছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৬ বছরে ছাত্রলীগকে রাষ্ট্রীয় মদদে একটি দানব বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল। হত্যা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নিপিড়ন, নির্যাতনসহ এমন কোন হীন অপকর্ম নাই যে, যা গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগ করেনি। ছাত্রলীগের এই সব অপকর্মই তাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। তাই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের যে জনআকাক্সক্ষা তার প্রতিফলন ঘটেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক ও যথাযথ, জনগণের আকাক্সক্ষার সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ করে গত ২৩ অক্টোবর রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপিড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেণ্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপিড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল এবং এতৎসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণীত হয়েছে এবং যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত। সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮ এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল। এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় এখন থেকে সংগঠনটি আর কোনো রাজনৈকি কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। এমনকি সংগঠনটিকে কেউ সমর্থন করলেও আইনের ধারায় তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইনের ধারায় কেউ ছাত্রলীগকে সমর্থন করলে ৭ বছরের জেল হতে পারে বলে জানা যায়। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর আলোকে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে সমর্থন দিলে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইনে ধারা ৮ অনুযায়ী, কেউ ছাত্রলীগের সদস্য হলে ৬ মাসের জেল হবে। ধারা ৯ অনুযায়ী ছাত্রলীগের ব্যাপারে সহমর্মিতা/সমর্থন চাইলে ৭ বছরের জেল এবং ধারা ১৭ অনুযায়ী ছাত্রলীগের কাউকে আশ্রয় দিলে তা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে গণ্য হবে এবং ধারা ১৪ অনুযায়ী তার ৩-৫ বছর সাজা হবে।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। নিষিদ্ধের খবর শুনে শিক্ষার্থীরা তখন, ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘ছাত্রলীগ গর্তে, শেখ হাসিনা ভারতে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ভিসি চত্বরের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধের ঘটনায় ছাত্রদলসহ সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো আনন্দ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। একইসাথে ছাত্রলীগকে দেখামাত্রই তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করার কথাও বলেছে তারা। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছাত্রলীগ একটি খুনি সংগঠন। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি থেকে শুরু করে গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ছাত্রলীগ। সবগুলো জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে- ছাত্রলীগ এককভাবে তার চেয়ে বেশি মানুষ খুন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এতে ছাত্রলীগ এবং সরকারি বাহিনীর হাতে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পেতে যখন বিভিন্ন মহল থেকে বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, তখন ছাত্রদল শুধু সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দারি করেছিল। আজ ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী সব ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, খুনি সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম একটি অর্জন এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা একটি যৌক্তিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা দেখে আসছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রেজিমে ছাত্রলীগ কী রকম ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ক্যাম্পাস দখল, ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনসহ অপরাধের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তাদের বিচরণ ছিল না। ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হওয়াদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে শহীদ নোমানী, আবুবকর, বিশ্বজিৎ, আবরারকে কি ভয়ানকভাবে শহীদ করেছে ছাত্রলীগ। সর্বশেষ চব্বিশের বিপ্লবে শতসহস্র ভাই-বোনকে পৈশাচিকভাবে রক্তাক্ত করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে যা বাংলাদেশের ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম কালো অধ্যায়। জুলাইয়ে শহীদ হওয়া নাসিমা, তরুয়া, ওয়াসীম, আবু সাঈদ, আলী রায়হান, মুগ্ধ, শান্তরা আমাদের চোখের সামনেই হারিয়ে গেল অন্তিম ঠিকানায়। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের মাধ্যমে তাদের আত্মত্যাগের প্রতিও সম্মান জানানো হল।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গতকাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী, হকিস্টিক ও পুলিশের পোশাক পরে হামলার ঘটনা সবাই জানেন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে যতগুলো ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জুলাই আন্দোলনে তৎকালীন দলীয় সরকার বলেছিল যে, আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ‹তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আদালতের রায়ে [ছাত্রলীগ কর্তৃক] বেশ কিছু হত্যার বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। আবরার ফাহাদ এবং বিশ্বজিৎ হত্যার কথা আমরা ভুলতে পারি না। এগুলো চোখের সামনেই ঘটেছে। এমনকি ৫ আগস্টের পরও তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে, জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কার্যক্রমে লিপ্ত থাকার কারণে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো সদস্য প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হতে পারবে না। যেসব নিয়োগ এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে সেখান থেকেও তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে। পরবর্তী সার্কুলারে শুন্যপদগুলোতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির এক গৌরবোজ্জল ভূমিকা রয়েছে। বায়ান্ন’র ভাষা াান্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাই অগ্রণীভূমিকা পালন করেছে। আর এবার ২০২৪ এব যে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থান তাতেও ছাত্রারা ছিল মূখ্যভূমিকায়।

নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের অন্যতম একজন ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবীর খোকনের কাছে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হোক তা চাই না। বর্তমান সরকার ছাত্রলীগ নামধারী এক সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ এরম হীন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে ছাত্রলীগ তাদের ছাত্র রাজনীতির চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বজিৎ, বুয়েটে আবরারসহ এবং ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক হলে সর্বশেষ বুদ্ধি প্রতিবন্দি তোফাজ্জলকে যে রকম নির্মম ও নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাতে এ সংগঠনের প্রতি মানুষের চরম ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। গত জুলাইয়ে বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এরপর ছাত্রলীগের তান্ডব মানুষ দেখেছে। তারা গুলি করে নিরিহ ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে। তাই সর্বমহল থেকে এরম একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী দলকে নিষিদ্ধে দাবি উঠেছে। সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে জনগণের দাবি পূরণ করেছে।

নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম শীর্ষ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, টানা প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কমিটি বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অনিয়মে সংগঠনটির নাম জড়ায়। তারা সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এর ফলে কোথাও আর কোন ছাত্র রাজনীতি থাকে না। তার ভিন্নমত দমনে এতটাই নিষ্ঠুর ও নির্মম হয়ে ওঠে যার দৃশ্য বিশ্বজিৎ হত্যা ও বুয়েটে আবরার হত্যার মাম্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষন, যৌন হয়রানি এমন কোন হীন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। ফলে এ দলটি একটি দানব সংগঠন বা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে সকলের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়। চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে সমালোচনার মুখে থাকা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০১২ সালে দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড, একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড, ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাজাও হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হেলমেট পরে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই দাবিতে ২০২৪ সালে আবার আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওই দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত। জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস রূপ পায়। আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে রাজপথে সংগঠনটির সশস্ত্র কর্মীদের কর্মকাণ্ডের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। ছাত্রলীগের এই নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার জন্য ছাত্র সমাজ শুধু নয় দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। সরকার এ সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জুলাই বিপ্লবের যে জনআকাক্সক্ষা তা পূরণ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক ও যথাযথ, জনগণের আকাক্সক্ষার সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতের কাঁটাতারের বেড়ায় বাংলাদেশ, এখনও বিচার পায়নি ফেলানী
১৫২ কর্মকর্তাকে বেতনের টাকা ফেরত দিতে বললো ইসি
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন
চট্টগ্রামে ফিরলেন ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ জেলে ও নাবিক
মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কে এবং কারা অপহরণ করেছিল?
আরও

আরও পড়ুন

দুই মাস পর চালু হলো পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন

দুই মাস পর চালু হলো পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন

ভারতের কাঁটাতারের বেড়ায় বাংলাদেশ, এখনও বিচার পায়নি ফেলানী

ভারতের কাঁটাতারের বেড়ায় বাংলাদেশ, এখনও বিচার পায়নি ফেলানী

ঝিনাইদহে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের স্মারকলিপি পেশ

ঝিনাইদহে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের স্মারকলিপি পেশ

ইউক্রেনের কুরাখোভ শহর দখল,দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের কুরাখোভ শহর দখল,দাবি রাশিয়ার

নতুন সভাপতি-আবুল হোসেন,সাধারণ সম্পাদক-সাইদুর রহমান খান

নতুন সভাপতি-আবুল হোসেন,সাধারণ সম্পাদক-সাইদুর রহমান খান

জকিগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে পৌর আল-ইসলাহ'র শীতবস্ত্র বিতরণ

জকিগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে পৌর আল-ইসলাহ'র শীতবস্ত্র বিতরণ

‘মিথ্যা প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানো থিংকট্যাঙ্কের সাথে জড়িত শেখ রেহানার ছেলে-মেয়ে: দ্য টাইমস

‘মিথ্যা প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানো থিংকট্যাঙ্কের সাথে জড়িত শেখ রেহানার ছেলে-মেয়ে: দ্য টাইমস

অনৈতিক আচরণে মোনালির কনসার্ট ত্যাগ, ম্যানেজারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, কি বললেন মোনালি?

অনৈতিক আচরণে মোনালির কনসার্ট ত্যাগ, ম্যানেজারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, কি বললেন মোনালি?

১৫২ কর্মকর্তাকে বেতনের টাকা ফেরত দিতে বললো ইসি

১৫২ কর্মকর্তাকে বেতনের টাকা ফেরত দিতে বললো ইসি

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন

ধানমন্ডির কাকলি হাইস্কুল ও না.গঞ্জের ডিপিডিসি অফিসে দুদকের অভিযান

ধানমন্ডির কাকলি হাইস্কুল ও না.গঞ্জের ডিপিডিসি অফিসে দুদকের অভিযান

চিলমারীতে বেগুন চাষে বাজিমাত কৃষক রবিউলের

চিলমারীতে বেগুন চাষে বাজিমাত কৃষক রবিউলের

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র

চট্টগ্রামে ফিরলেন ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ জেলে ও নাবিক

চট্টগ্রামে ফিরলেন ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ জেলে ও নাবিক

মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কে এবং কারা অপহরণ করেছিল?

মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কে এবং কারা অপহরণ করেছিল?

তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৫৩

তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৫৩

আসামের কয়লা খনিতে ১১ শ্রমিক আটকে পড়েছেন, উদ্ধারকাজ চলছে

আসামের কয়লা খনিতে ১১ শ্রমিক আটকে পড়েছেন, উদ্ধারকাজ চলছে

আজ রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

আজ রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ১১ ইয়েমেনি বন্দি ওমানে স্থানান্তর

গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ১১ ইয়েমেনি বন্দি ওমানে স্থানান্তর

কোথায় হবে তাহসান-রোজার হানিমুন?

কোথায় হবে তাহসান-রোজার হানিমুন?