হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নবনিযুক্ত খতিব প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ মুফতি আব্দুল মালেক বলেছেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী। দুনিয়ায় আর কোনো নবী আসবেন না। নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সবার ওপরে আমার উম্মতের মর্যাদা দিয়েছেন। খতিব বলেন, সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে সাপ্তাহিক ঈদের দিন জুমার দিন। জুমার দিন অনেক বড় ফযিলতের দিন। রাসূল (সা.)-এর উছিলায় আল্লাহ জুমার দিনের ফযিলত দান করেছেন। খতিব মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ো। জুমার দিনে দোয়া কবুল হয়। সেটা আসর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত হতে পারে।
গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নতুন খতিবের পেছনে জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাদিস বিশারদ মুফতি আব্দুল মালেকের পেছনে জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশের হাজার হাজার মুসল্লি সকাল ১০টা থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই মুসল্লিদের পদচারণায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ কানায় কানায় ভরে যায়। সাড়ে ১২টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তিল ধারার ঠাঁই ছিল না। জুমার নামাজ শেষে নতুন খতিব মুফতি আব্দুল মালেককে এক নজর দেখার জন্য সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নামাজ শেষে মোনাজাতে নতুন খতিব আব্দুল মালেক দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করেন। উল্লেখ্য, ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন দীর্ঘ দিনে পালিয়েছিলেন। পরে গত মাসে এক জুমায় দলবল নিয়ে পতিত হাসিনাকে কওমি জননী খেতাবদানকারী খতিব মুফতি রুহুল আমিন জুমার নামাজ পড়াতে আসলে মসজিদে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। মুফতি রুহুল আমিন ওই দিন জুমার নামাজ পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে দলবল নিয়ে মসজিদ থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সাবেক খতিব মুফতি রুহুল আমিনকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। সরকার বায়তুল মোকাররমে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন নতুন খতিব নিয়োগদানে প্রচুর যাচাই-বাছাই শুরু করেন। অবশেষে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ মুফতি আব্দুল মালেককে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব পদে নিয়োগ দেয়। এতে সর্বস্তরের মুসলমানরা মুফতি আব্দুল মালেককে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব নিযুক্ত করায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।
খতিব মুফতি আব্দুল মালেক জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মসজিদের আদব রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মসজিদে আমরা এসেছি ইবাদতের জন্য। মসজিদে কোনো ছবি তোলা বা ভিডিও করা কোনো সওয়াবের কাজ নয়। কোনো মুফতি মসজিদে ছবি তোলা ভিডিও করার অনুমতি দেবেন না। মসজিদের মোবাইল ফোন সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো ছবি তোলা যাবে না। আল্লাহর ওয়াস্তে ছবি তোলা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতে হবে। খতিব বলেন, মসজিদের সম্মান রক্ষা করা ফরজ। মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে আর বের হবার সময় বাম পা দিয়ে বের হতে হবে। মসজিদের প্রবেশের সময়ে দোয়া করতে হবে আল্লাহ আপনার রহমতের সব দরজা আমার জন্য খুলে দিন এবং আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা করুন। মসজিদ থেকে বের হবার সময়ে আমাদের মনে আকাক্সক্ষা থাকতে হবে আবার কখন মসজিদে নামাজের জন্য প্রবেশ করবো। জুমার বয়ান শুরুর প্রাক্কালে দ্বিতীয় তলায় মাইকে আওয়াজ শোনা না যাওয়ায় কিছু মুসল্লি হৈ চৈ শুরু করলে খতিব শান্ত হবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছবর একটা ঈমানের বড় ছিফত। সাহাবায়ে কেরাম ছবর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। খতিব বলেন, বিদায় হজের ভাষণে লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরারম উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সা.) ভাষণের আওয়াজ সবাই শোনেন নাই। কেউ শোনে ছওয়াব পেয়েছেন আবার কেউ না শোনেও ছওয়াব পেয়েছেন। আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মসজিদে এসেছি। এখানে ছবর করতে হবে। খতিব বলেন, জুমার নামাজের আগের বয়ান নামাজের কোনো অংশ না। আগের বয়ান না করলেও জুমার নামাজ হয়ে যাবে। খতিব বলেন, জুমার নামাজের আগে আরবিতে দেয়া দু’টি খুৎবা জুমার নামাজের অংশ। জুমার দিন যেহেতু বেশি মুসল্লির সমাগম হয় এ জন্য জুমার নামাজের আগে বাংলায় ইমাম খতিবগণ দ্বীনী আলোচনা করে থাকেন। দ্বীনী আলোচনায় কোনো লস নেই। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ওপর চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, উপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কুরআনের রয়েছে বহু শৈলী। কখনো আদেশ-নিষেধের সুরে, কখনো পূর্ববর্তী উম্মতের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে, কখনো জান্নাতের সুখ-শান্তি ও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিয়ে, কখনো সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন শৈলীতে কুরআনে কারীমে উপদেশ পেশ করা হয়েছে। প্রতিটি শৈলীরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও আবেদন।
এই শৈলীগুলোর একটি হলো, মুমিনদের বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা। উদ্দেশ্য হলো, মুমিনগণ যেন এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়; ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে এগুলোকে গ্রহণ করে। সূরা মুমিনূনের শুরুতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনের এমনই কিছু বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে- নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনরা; যারা তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। যারা যাকাত সম্পাদনকারী। যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। (সূরা মুমিনূন) কোরআনে উল্লেখিত মুমিনের দ্বিতীয় গুণ ‘অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকা’র উপরে আজকের আলোচনা। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের এই পৃথিবীতে অল্প সময়ের জন্য প্রেরণ করেছেন। জীবনের এই সময়গুলোকে মূল্যবান বানাতে প্রিয় নবী (সা.) আমাদের যাবতীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য প্রকৃত মুমিন সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখে তার সময়ের প্রতি। জীবনের একটি মুহূর্ত যেন অর্থহীন কাজে না কাটে। যেসব কাজে কোনো কল্যাণ নেই, সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোকে এড়িয়ে চলে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা-কাজ পরিহার করা। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)
যারা নিজেকে অহেতুক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে তারা প্রকারান্তরে এর মাধ্যমে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। নিজের ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে। অহেতুক কাজ দ্বারা অন্তর কঠিন হয়ে যায়, রিজিকের রাস্তাও সংকীর্ণ হয়ে যায়। মারুফ কারখি (রহ.) বলেন, অহেতুক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। বিপরীতে যারা নিজের জীবনে অহেতুক কাজকে এড়িয়ে চলে তাদের আল্লাহ তাআলা বিশেষ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেন। তাফসিরে ইবনে কাসিরে লোকমান হাকিম বলেন, যে মানুষ দুইটি আমল করবে : এক. সর্বদা সত্য কথা বলবে, দুই. অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করবে আল্লাহর গোটা সৃষ্টিকুল তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। অহেতুক কাজকর্ম জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হতে পারে। আল্লাহ সব মুমিনকে অহেতুক কথা ও কাজ হতে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন। মীরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। যারা আল্লাহর জমিনে ফিতনা ফাহাদ সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে অশান্তি এবং দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার প্রয়াস চালায় তারা আল্লাহর দুশমন। হত্যা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি ইসলামে মহাপাপ গুরুতর অপরাধ। অরাজকতা সৃষ্টির কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জীবনে যে শাস্তি অবধারিত হয় এবং চরম ভাবে যে পতন আসে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার কোন ক্ষমতা ঠেকাতে পারে না। কাজেই কারও উচিত নয় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন প্রকার ফিতনা-ফ্যাসাদ ও অরাজকতা সৃষ্টি করে জনজীবনে অশান্তি ডেকে আনা। এতে করেও লাভ নাই। যে অরাজকতা সৃষ্টি করে অন্যের ক্ষতি সাধন করতে চায় সেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ফিতনা (দাঙ্গা হাঙ্গামা, বিশৃংখলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর। (সূরা বাকারা : আয়াত নং-১৯১)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা : আয়াত নং-৮৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যারা জমীনে বিশৃংখলা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো তাদেরকে হত্যা করে ফেলা অথবা তাদেরকে দেশান্তরিত করে দেয়া। এ হলো তাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনা, আর তাঁদের জন্য আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা মায়দা : আয়াত নং-৩৩)। আল্লাহ সবাইকে হেফাজাত করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ