ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা হিন্দু সম্প্রদায়ের

অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতম গণহত্যার বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে দেশে যখন স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঠিক তখন অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বিশেষ একটি মহল। কথিত ৮দফা দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা সেই বিশেষ মহলের চক্রান্তের অংশ মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, এ সময়ে এ ধরনের কর্মসূচি সরকারের অগ্রাধিকার কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত করার পাশাপাশি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।

শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে গণসমাবেশ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার পতনের পর মাত্র আড়াই মাসে তিনটি বড় সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। সমাবেশে দেয়া হিন্দু নেতাদের বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নজিরবিহীন এ রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দেড় দশকের মাফিয়া শাসনের অবসান হয়, তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।

বিগত ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক এক গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর তার দোসরেরা দেশব্যাপী বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানলে পড়েন। তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আর তখনই এই ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে মাঠে নামে হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠন। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কিছু হিন্দুর উপর রাজনৈতিক কারণে হামলার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া হয়।

ঠিক তখনই বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের সব রাজনৈতক দল হিন্দুদের পাশে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররাও হিন্দুদের মন্দির, বাসা-বাড়ি পাহারা দেন। তাতে কম সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর আসে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সরকার ও প্রশাসনের তরফে শান্তিপূর্র্ণ পূজা উদযাপনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়। হিন্দুদের দাবি মেনে পূজার সরকারি ছুটি দুইদিন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও উৎসমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে নানা সহযোগীতা করা হয়। তাতে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবের আমেজে উদযাপিত হয় দুর্গাপূজা।
এতো কিছুর পরও এই সরকারের প্রতি ওই সম্প্রদায়ের কোন সন্তুষ্টি নেই। কথিত ৮ দফা দাবিতে তারা ফের রাস্তায় নেমেছে। সমাবেশ থেকে তারা সরকারের প্রতি নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। লালদীঘির সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র প্রিন্সিপাল চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, ‘সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ছয় দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশের সব মঠ-মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করব।’ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার, সংখ্যালঘু কমিশন সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি আট দফা দাবির মধ্যে অন্যতম।

প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী আরো বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ, সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না।’

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজন করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন।’ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন,‘এ দেশের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ রয়েছি এখনো, নিঃশেষিত হইনি। এলাকায় এলাকায় একেকটা যুব গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আমাদের দেবালয় আমরা পাহারা দেব।’

হিন্দু সম্প্রদায়ের এ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য ও দাবি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, সংখ্যালঘুদরদি দাবিরা শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তখন কয়টা দাবি তিনি মেনেছেন। আর হাসিনার পতনের পরপরই দাবির বহর নিয়ে হাজির হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের উপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা, তাদের বাড়ি ঘর ও সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান নির্দলীয় সরকারের আমলে তেমন কিছু না ঘটলেও কথায় কথায় রাস্তায় নামছে তারা।

শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে একের পর এক চক্রান্ত চলছে। আনসারের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে নানা দাবি নিয়ে রাজপথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে হাজির হচ্ছেন স্বৈরাচারে দোসরেরা। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করা। দেড় শতাধিক ছাত্র জনতার জীবন দান, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্ববরণের এক রক্ত সাগর পেরিয়ে জনগণের ইচ্ছা পূরণে এ সরকার গঠিত হয়েছে।

খুনিদের বিচারের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ধ্বংসস্তুপের ওপর নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলছে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম। আর তাতে বেপরোয়া হয়ে গেছে পতিত স্বৈরাচারের দেশি বিদেশি দোসরেরা। তারাই এ সরকারকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। কথিত দাবি আদায়ের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন কর্মসূচির সাথে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার  বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না

বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির

বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত

সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত

আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা

আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা

মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন

মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন

মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা

মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল

পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল

মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা

মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা

সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১

সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১

আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ

ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ

শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া

শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন