জামিন আতঙ্কে সালথাবাসী
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
হত্যাকে পুঁজি করে কোটি টাকার চাঁদাবাজিতে গ্রেফতারে স্বস্তি, চাঁদাবাজদের জামিন আতঙ্কে সালথাবাসী। গতকাল সোমবার সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। পাশাপাশি সালথাবাসীর মধ্যে স্বস্তির স্থানে চরম অশান্তি বিরাজ করছে।
ফরিদপুরের সালথায় এক তরুণীকে উত্ত্যক্তের জের ধরে বখাটেদের চাকুর আঘাতে কাসেম বেপারী (২৮) নামের এক যুবক খুন হওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আজাদ ও তার ভায়রা জাহিদ মাতুব্বর, আওয়ামী লীগ নেতা নুরু মাতুব্বর, রফিক মাতুব্বর সহ তাদের ছত্রছায়ায় থাকা একাধিক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এ ঘটনায় খায়রুল বাশার আজাদসহ ২৯ জনের নামোল্লেখ করে একটি লুটপাট ও চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর সালথা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম নামের এক নারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দিবাগত রাতে সালথার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় আজাদের ভায়রা জাহিদ মাতুব্বর গ্রেফতার হলেও অদৃশ্য কারণে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আজাদ। তাকে রক্ষায় কিছু বিএনপি নেতার তদবির দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
সালথার ভুক্তভোগীসহ একাধিক সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহিদ মাতুব্বর, নুরু মাতুব্বর ও রফিক মাতুব্বর এলাকায় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় প্রয়াত সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তার দুই ছেলে আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী এবং শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সময়ে তাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি, এডিবি, উন্নয়ন তহবিলের ওয়ান পার্সেন্ট, হাট-বাজারের ইজারাসহ নানান সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু হঠাৎ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পালাবদলের পরপরই রাতারাতি সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আজাদের ছত্রছায়ায় বিএনপি নেতা বনে যান তারা। কিছুদিন পরেই স্থানীয় এক নারীকে উত্যক্তের জের ধরে বখাটেদের ছুরির আঘাতে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এ হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগের এ সুবিধাভোগী নেতারা কোটি টাকা চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েন। ভাঙচুর চালান সাধারণ মানুষের দোকানপাট ও বাড়িঘর। অতঃপর এসব চাঁদাবাজি ও লুটপাটের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রমাণসহ দৈনিক ইনকিলাব ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে।
এছাড়া এসময় অন্যান্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোও সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে তাদের অপকর্ম নিয়ে। পরবর্তীতে এসব চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা পাওয়ার সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের অভিযোগে জাহিদ মাতুব্বর, নুরু মাতুব্বর, রফিক মাতুব্বরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এলাকার জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে লুটপাট ও চাঁদাবাজির টাকা ভুক্তভোগীরা এখনও ফিরে না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া লুণ্ঠিত মালামাল ও চাঁদাবাজির কোটি টাকা এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর চাঁদাবাজির টাকায় ফরিদপুর কোর্টে প্রভাব বিস্তারসহ ক্ষমতাশালীদের দিয়ে তদবির করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।
এইসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জামিন পেলে এলাকায় ফের ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ আর বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে একাধিক সূত্র দৈনিক ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন।
তাই লুণ্ঠিত মালামাল ও চাঁদাবাজির কোটি টাকা উদ্ধার কিংবা জব্দ না হওয়া পর্যন্ত তারা জামিন পেয়ে ফিরলে ফের আরও মূর্তিমান আতঙ্কের রুপ ধারণ করতে পারে বলে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মী জানিয়েছেন। এদের দ্বারা সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে বিএনপির।
তাই চাঁদাবাজির টাকা ফেরত ও লুট হওয়া মালামাল ভুক্তভোগীরা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আদালত থেকে জামিন হতে পারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সালথায় ফের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় ফিরে ফের এসব আওয়ামী লীগ নেতারা লুটপাট ও চাঁদাবাজিসহ ভুক্তভোগী পরিবার ও ওই এলাকার জনগণের ওপর স্টিম রোলার চাপাতে পারে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়দের দাবি, সালথার উপজেলা বিএনপি নেতা খায়রুল বাশার আজাদের আপন ভায়রা ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ মাতুব্বর এলাকায় দুর্ধর্ষ মূর্তিমান আতঙ্ক। এ জাহিদের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এলাকায় তার বাহিনীর দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানির শব্দ এখনও মানুষের কানে বাজছে।
অন্যদিকে, নুরু মাতুব্বর ওরফে নুরু মেম্বারের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দলবাজি ও সালিশ বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তার কথার বাইরে ওই এলাকার একটা পাতাও যেন নড়ে না। রফিক মাতুব্বরের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজ দলে লোক ভিড়ানোসহ নানা অভিযোগ।
তবে চাঁদাবাজির মূলহোতা হিসেবে পরিচিত ও যার পদবিকে পুঁজি করে কোটি টাকা চাঁদাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে সেই বিএনপি নেতা খায়রুল বাশার আজাদ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ কিংবা যৌথবাহিনী এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেননি। এই বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করতে না পারায় সালথার সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। ক্ষুণ্ন্ন হচ্ছে বিএনপির সুনাম। তাকে (আজাদ) দ্রুত গ্রেফতার করাসহ দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করে সালথা বিএনপিকে বাঁচানোর দাবি করেছেন সাধারণ বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে বারবারই বিএনপি নেতা খায়রুল বাশার আজাদ তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়টিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে আসছেন। এটাকে তিনি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি নেতা খায়রুল বাশার আজাদ নির্দোষ। কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। সে কোনো অন্যায় করেনি।’
এ বিষয় ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন ইনকিলাবকে বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিরোধী কাউকে দলে প্রবেশ করানো যাবে না। কেউ যদি এভাবে বিএনপির পদকে ব্যবহার করে বিরোধী কাউকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। আর সেটা যদি প্রমাণ হয় তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘আমরা তার বিরুদ্ধে উঠা কোনো অভিযোগেরই সত্যতা পাচ্ছি না। যদি এর সত্যতা পাই তবে অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা) সার্কেল মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, সালথায় একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সালথা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আজাদকে প্রধান আসামি করে ২৯ জনের নামোল্লেখ করে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। বাকিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় লুণ্ঠনকারীদের হাতে সালথার চিহ্নিত ১৫ থেকে ১৬ জন অপরাধী এলাকার ১০ থেকে ১২টি বাড়ি লুট করে দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট করে বলে এলাকাবাসী ইনকিলাবকে জানান। এর মধ্যে নান্নু মাতুব্বরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল এবং নুরু মাতুব্বরের বাড়িঘর লুটে ও ভাঙচুরসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু