আমদানি-রফতানি অচলের অপচেষ্টা
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
কন্টেইনার পরিবহনে বিশেষায়িত গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেইলর শ্রমিকদের হঠাৎ ধর্মঘটে আবারও চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘোষণা ছাড়াই এ ধরনের লাগাতার কর্মসূচি আমদানি-রফতানি তথা দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য অচলের অপচেষ্টা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র এবং সরকার ঘোষিত মজুরি প্রদানের দাবিতে গত ২১ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় প্রাইম মুভার ট্রেইলর, কংক্রিট, মিকশ্চার, ফ্ল্যাটবেড ও ডাম্প ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন।
চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যস্থতায় মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক শেষে ৩৪ ঘণ্টা পর ওই ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটামও দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে কোনরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করা হয়। এর ফলে ২১টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে বন্দরে যাচ্ছে না রফতানি পণ্যবোঝাই কোন কন্টেইনার। আবার বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যের ৯৯ শতাংশ কন্টেইনারের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। রফতানি পণ্য কারখানা থেকে প্রথমে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে আনা হয়। সেখানে কাস্টমসহ বিভিন্ন সংস্থার আইনি প্রক্রিয়া সম্পনের পর সেই পণ্য কন্টেইনারে তোলা হয়। এরপর প্রাইম মুভার ট্রেইলর গাড়িতে পণ্য পাঠানো হয় বন্দরে। সেখান থেকে জাহাজে ওঠানোর পর রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যায়। বেসরকারি ডিপো থেকে আমদানি ও রফতানি পণ্য মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার কন্টেইনার চলাচল করে। ধর্মঘটের কারণে কন্টেইনার পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্ট, বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, শ্রমিকরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে তা অনেক পুরনো। ছাত্র জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী এবং সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তারা ভেঙে পড়া অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতকে সচল করার পাশাপাশি ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ঠিক এ সময়ে পুরনো দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরকে অচল করার পেছনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করেন আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিগত প্রায় পৌনে তিন মাসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরেরা নানা উপায়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির যে চক্রান্ত করে আসছে চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে জিম্মি করার লক্ষ্যে একের পর এক অযৌক্তিক ধর্মঘট ওই ধারাবাহিকতারই অংশ। ফ্যাসিবাদের দোসরদের এ অপতৎপরতা কঠোরহস্তে রুখে দেওয়ার দাবিও করেছেন আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টরা।
সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ধর্মঘটের ফলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। রফতানিমুখী পণ্যের শতভাগ পরিবহন করা হয় কন্টেইনারযোগে। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি পণ্যবাহী কোন কন্টেইনার আসছে না। এর ফলে পণ্য জাহাজিকরণ স্থবির হয়ে পড়েছে। রফতানিমুখী অনেক পণ্য যথাসময়ে জাহাজিকরণ অনিশ্চিত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে রফতানিকারকদের মাঝে। আবার বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারও পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে দেশে ভোগ্যপণ্যসহ আমদানি পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বন্দর থেকে গড়ে চার হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারী দেওয়া হয়। তার চেয়ে বেশি সংখ্যক কন্টেইনার রফতানি পণ্য নিয়ে বন্দরে আসে। কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দরে জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমদানি-রফতানি কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ডিপোগুলোতে রফতানিমুখী পণ্য নিয়ে আট হাজার কন্টেইনার পড়ে আছে। আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার রয়েছে সাড়ে সাত হাজার। ২১টি ডিপোতে খালি কন্টেইনার রয়েছে ৫৫ হাজার টিইইউএস। ধর্মঘটের ফলে ডিপোর সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ২১ অক্টোবর বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বানের পর ২২ অক্টোবর বন্দরের মধ্যস্থতায় মালিক-শ্রমিকদের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ^াস দিয়েছিলেন মালিক পক্ষ। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। কন্টেইনারবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিতে শ্রমিক সংগঠন ও মালিক পক্ষের সাথে বন্দরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে ৩০-৩২ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার থাকে। ২১ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে পণ্যবাহী শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে টানা ৩৬ ঘণ্টা কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ থাকে। ২০ অক্টোবর বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩৫ হাজার ১৮৫ টিইইউএস। ২২ অক্টোবর বিকেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হলে কন্টেইনারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৭২৫ টিইইউএস। এর প্রভাবে বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সারি বাড়তে থাকে। ২৪ অক্টোবর ৩৮ হাজার ১৬৮ টিইইউএস, ২৫ অক্টোবর ৩৯ হাজার ৫৮৯ টিইইউএস, ২৬ অক্টোবর ৩৯ হাজার ৩৮৭ টিইইউএস, ২৭ হাজার ৪০ হাজার ৮৭০ টিইইউএস ও ২৮ হাজার ৪২ হাজার ৬০০ টিইইউএস কন্টেইনার জমে যায়। ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে কন্টেইনার জট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বারবার ধর্মঘটের ফলে বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। তাতে আমদানি-রফতানি স্থবির হয়ে পড়ছে, বন্দরে জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমদানি-রফতানিকারকেরা বলছেন, এভাবে একের পর এক ধর্মঘট চলতে থাকলে দেশের সার্বিক আমদানি-রফতানি বিঘিœত হবে। রফতানি পণ্যের শিপমেন্ট বাতিল হলে রফতানিকারকেরা বিদেশে ক্রেতা হারাবেন। তাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান বলেন, এক সপ্তাহ আগে মালিক কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার আশ^াস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের নিয়োগপত্র দেবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আর এ কারণেই আমরা অবস্থান কর্মসূচি ও অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
'নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করে ট্রাম্পকে হাসিনার অভিবাদন, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নোংরা খেলায় কঙ্গনা রানওয়াত'
ফর্মে ফিরতে বাবরকে কোহলির পথে হাঁটতে বললেন পন্টিং
মেরিটাইম সেক্টরে বিদেশীদের বিনিয়োগের আহবান উপদেষ্টার
সাঁতারে আক্ষেপের নাম ‘ইলেক্ট্রোনিক্স স্কোরবোর্ড’!
সাবিনাদের জন্য শনিবার পুরস্কার ঘোষণা করবে বাফুফে
ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ আহত-৩
সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা
যশোরে মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৭ নভেম্বরের চেতনাকে যারা ধারণ করে না, তারা গণতন্ত্রের শত্রু - ডা.মাজহার
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার ২ সেকেন্ডের মধ্যেই কার চাকরি খাবেন ট্রাম্প?
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস; চব্বিশের প্রেরণা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাগপার আলোচনা সভা
মানুষের মতোই কথা বলবে, আচরণ করবে এআই!
আখাউড়া প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন
পরিবহনব্যবস্থা
রমজানের নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকে লাগবে না নগদ অর্থ: গভর্নর
ময়নামতি ও বসুরহাটে ইউসিবির দুই নতুন শাখা উদ্বোধন
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস : সাফল্য ও ব্যর্থতা
৫ আগস্টের আয়নায় দেখা ৭ নভেম্বর
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন