মাদক মামলার আসামির পরিবর্তে কারাগারে নিরীহ যুবক
০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ এএম
এক আসামির পরবর্তে আরেক আসামির সাজা খাটা বা টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে জেলে পাঠানোর ঘটনা নতুন নয়। এবার এ রকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার সাভারের সীমান্তবর্তী ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামে। সেখানে মাদক মামলার আসামির পরিবর্তে মাত্র দুই হাজার টাকার বিনিময়ে কারাগারে রয়েছে অসহায় এক মায়ের সন্তান। দৈনিক ইনকিলাব এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। ভুক্তভোগী মো. রাজীব হোসেন (৩৪) ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামের মৃত. হারুন সর্দারের ছেলে। তার মায়ের নাম রেনু বেগম।
অন্যদিকে মাদক মামলার আসামী আপন ফকির (৪০) একই ইউনিয়নের ফোর্ডনগর দক্ষিণ ফকিরপাড়া গ্রামের খালেক ফকিরের ছেলে। আসামি আপন ফকির ভেজাল জমি কেনাবেচা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার বাবা খালেক ফকিরও ডাকাতি মামলায় হাজতবাস করেছে। আর মাদক মামলায় আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আপন ফকির। তার পরিবর্তে জেল খাটছে অসহায় নিরীহ এক ছেলে।
সরেজমিনে ধামরাইয়ের ফোর্ডনগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাটিতে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। এলাকার অনেকেরই সাথে কথা বলে জানা গেছে, আপন ফকির এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার ভয়ে কেউ কথা বলতেও চায় না। সবার একই কথা নিজের খেয়ে কেন শুধু শুধু বিপদে পড়তে যাব।
রাজীবের মা রেনু বেগম এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতে কথা বলতে চাননি। মুঠো ফোনেও কথা বলতে পাচ্ছেন ভয়। আপন ফকিরের আতঙ্কে থাকেন সবসময়। তিনি বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে চলি। আমার ছেলে রাজীবকে জেল থেকে ছাড়ানোর টাকা নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে টাকা জমাচ্ছি, জানুয়ারির দিকে উকিল ধরে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো। আর কোনো কথা বলতে চান না তিনি।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি ১০টার দিকে ফোর্ডনগর দক্ষিণ ফকিরপাড়া গ্রামের লাবু মার্কেটের সামনে আপন ফকির (৪০) এর দেহ তল্লাশি করে দুই হাজার পুরিয়া (২০০ গ্রাম) হেরোইন ও মোসা. বেবীর (৪৮) দেহ তল্লাশি করে শাড়ীর ভাঁজে গুজানো এক হাজার পুড়িয়া (১০০ গ্রাম) হেরোইন জব্দ করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তখন তাদের গ্রেফতার করতে গেলে তারা চিৎকার করে মাদকদ্রব্যের রেইডিং টিমের ওপর এলাকার লোকজনসহ তাদের বাহিনী অতর্কিতে হামলা করে মাদকদ্রব্যের স্টাফদের আহত করে আসামীদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা ‘ক’ সার্কেলের উপপরিদর্শক মনিরা বেগম বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ৮ জুন ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নুসরাত জাহান। এরপর গত বছরের ২৬ অক্টোবর মামলার প্রধান আসামী আপন ফকিরের পরিবর্তে তার পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রাজীব।
এ মামলার আসামি আপন ফকিরের পরিবর্তে এক বছর ধরে কারাভোগ করছেন অসহায় নিরীহ যুবক রাজীব হোসেন। অর্থাভাবে তাকে জেল থেকে ছাড়াতেও পারছে না তার মা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (কুল্লা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার) মো. উজ্জল মিয়া বলেন, ছেলেটির পরিবারে কেউ নেই। তার মা রেনু বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। আমিও মাঝে মধ্যে তাকে (রেনু বেগম) সাহায্য-সহযোগিতা করেছি।
তিনি আরো বলেন, মাদক মামলার আসামি আপন ফকির দুই হাজার টাকা তার (রাজীব) হাতে ধরিয়ে দিয়ে আপন ফকির পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করায়। এরপর থেকে জেলহাজতে রয়েছে অসহায় রাজীব। আর প্রকৃত আসামি আপন ফকির প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আপন ফকিরের আইনজীবী মেহেদী হাসান বাদল বলেন, মাদক মামলায় আপন ফকিরের জামিনের জন্য কাজ করছিলাম। এরমধ্যে আমাকে না জানিয়ে আমার জুনিয়র এক উকিলের সাথে লিয়াঁজো করে আপন ফকিরের পরিবর্তে অন্য এক যুবককে আপন ফকির সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করায়। একথা আমি জানার পর আপন ফকিরের মামলা ছেড়ে দিয়েছি। এখন কোন উকিল দিয়ে কাজ করছে জানি না।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক নুসরাত জাহান বলেন, ২০২৩ সালের ৮ জুন ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অফিযোগপত্র দাখিল করি। কিন্তু কিছুদিন ধরে শুনছি মামলার প্রধান আসামি আপন ফকির এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার পরিবর্তে হাজতবাস করছে অন্য লোক। বিষয়টি আমরা খোঁজখবর করছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা এরআগে যখন অভিযানে তাকে আটক করি তখন আমাদের ওপর হামলা করে পালিয়ে যায়। পুলিশও তার পক্ষে, যার কারণে বারবার সে পার পেয়ে যাচ্ছে। আপন ফকিরের বিশাল বাহিনী রয়েছে। শিগগিরই তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে, বলেন তিনি।
তবে পরিচয় গোপন করে এ প্রতিবেদক মুঠোফোনে আপন ফকিরকে কল করলে তিনি এলাকাতেই আছেন বলে জানান। তার পরিবর্তে অন্য এক যুবক জেলে থাকার বিষয়টি বললে সাথে সাথে ফোনটি বন্ধ করে দেন। পরে আপন ফকির অন্য লোকের মাধ্যমে এ প্রতিবেদককে সংবাদটি প্রচার না করার জন্য ম্যানেজ করার চেষ্টাও করেছেন।
এসব বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমি নতুন এসেছি তাই কিছুই জানি না। এই প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তবে আপন ফকিরের নামে আরো কোনো মামলা আছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, ডকেট দেখে পরে বলতে পারবো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই