জাতিসংঘের কোনো অফিস খোলার অনুমতি দেবে না সরকার -জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক বলেছেন, জাতিসংঘের কাছ থেকে কখনো মানবাধিকারের সবক নিতে হবে না। যাদের কাছে কুরআন-সুন্নাহ নেই তাদের মানবাধিকারের নামে কোনো সহযোগিতার দরকার নেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার হচ্ছে সমকামিতার বিস্তার ঘটানো। মানবাধিকারের নাম দিয়ে তারা ঢাকায় অফিস খুলতে চায়। এ দেশের সচেতন জনগণ জাতিসংঘের মানবাধিকারের অফিস খুলতে দিতে রাজি হবে না। খতিব বলেন, ইনশাআল্লাহ আমাদের সরকার ঢাকায় জাতিসংঘের কোনো অফিস খোলার অনুমতি দেবে না। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন। খতিব বলেন, যুগ যুগ ধরে সন্ত্রাসী ইসরাইল ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। অসহায় ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য এবং ওষুধসামগ্রী প্রেরণের জন্য বর্বর ইসরাইলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দিতে পারে না জাতিসংঘ। সেই জাতিসংঘের মানবাধিকারের অফিস ঢাকায় কোনো প্রয়োজন নেই।
খতিব বলেন, আল্লাহ প্রথমে আদম (আ.) কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পরে মা হওয়া (আ.) কে পাঠিয়েছেন। সেই আদিকাল থেকেই আল্লাহ পুরুষ ও নারীকে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কোনো পুরুষ যদি ভাবে আমি নারী হয়ে গেলাম। আবার কোনো নারী যদি ভাবে আমি পুরুষ হয়ে গেলাম। এটি হবে কবিরা গুনাহ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ ধরনের নারী-পুরুষের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা বিশ্ব সমকামিতার বিষ ছড়াচ্ছে। খতিব বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকারের নামে ঢাকায় অফিস খুলে সমকামিতার প্রসার ঘটাতে চায়। এ দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারের অফিস মেনে নেবে না। খতিব বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জুলুম করছে। তাদের সম্পর্কে নবী (সা.) কড়া সতর্কবাণী দিয়েগেছেন। এটি কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তির চক্রান্তের দরুন দ্রব্যমূল্য বাড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের ওপর বসিয়ে দেবেন। অকারণে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়ায় আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন।
খতিব বলেন, রাসূল (সা.) ঈদের ও শুক্রবার জুমার খুৎবায় অধিকাংশ সময় তাকওয়ার বিষয়ে বেশি বয়ান করতেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন তোমরা আমার প্রতি, নবী-রাসূলদের এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করেছ। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তাকওয়ার জিন্দেগি অবলম্বন করো। সব সময় আল্লাহ যা ফরজ করেছেন আর যা হারাম করেছেন তা স্মরণ করো। খতিব বলেন, আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে ঈমান ও তাকওয়া। আল্লাহর নিয়ামতের না শোকরিয়া করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহকে চেহারা দেখানো কিভাবে। আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা পালন করতে হবে আর যা হারাম করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদের আসল ভবিষ্যৎ মিজান পুলসিরাত এবং হাশরে ময়দান নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ভাবতে হবে। আখিরাতের জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিচ্ছি তা স্মরণ রাখতে হবে। হায়াত থাকতে আমলের হিসাব রাখতে হবে জান্নাতের জন্য কি আমল পাঠাচ্ছি আর জাহান্নামের জন্য কি আমল পাঠাচ্ছি। কবর থেকেই আমাদের ভালো-মন্দের আমলের বিচার শুরু হয়ে যাবে। আমল ভালো হলে কবরের তিনটি জবাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে। নবী (সা.) আদর্শ সুন্নতকে আকড়ে ধরতে হবে। কোনো বিদয়াতের ফাঁদে পা’ দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষ কে কি আমল করে তা আল্লাহ সব দেখেন। আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া যাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। জুলুম থেকে বেঁচে থাকো। জালেম কবর ও হাশরে অন্ধকার দেখবে। সামান্য জুলুম করলেও কবর অন্ধকার হবে। শত শত মানুষকে জুলুম এবং কোটি কোটি মানুষকে জুলুম করলে তাকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
গতকাল মহাখালীস্থ মসজিদের গাউছুল আজমের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক জুমার-পূর্ব বয়ানে বলেন, আমরা কিয়ামতের খুবই নিকটবর্তী সময়ে অবস্থান করছি। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ এসেছে কুরআন ও হাদিসে। স্বয়ং রাসূল (সা.) শেষ জামানার ফিতনা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। বর্তমানে মুসলমানদের ঈমান ধ্বংসের জন্য বিধর্মীরা নানা ধরনের জাল বিছিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে কিছু আলেম রূপধারী ইহুদি নাসারাদের দোসর মুসলমানদের ঈমান আকিদা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। যা ইহুদিদের পূর্বপুরুষদের পুরোনো অভ্যাস এখনো ধরে রেখেছে। এদের থেকে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলে মুসলিমদের ঈমান বিধ্বংসের চক্রান্ত চলছে বিশেষ করে সমকামিতার মতো জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করার নীলনকশা অঙ্কিত হচ্ছে।
নবী সা: বলেন, একটি ফিতনা হিসেবে আবির্ভাব হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস। এ অফিসের মাধ্যমে একটি জনপদের মানুষের অধিকার আদায়ের নামে কি কি সংঘঠিত হয় তা বহির্বিশ্বের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই। এদের মূল উদ্দেশ্য মুসলিমদের শরিয়াহ এর বিধানসমূহে কুঠারাঘাত করা এবং ইহুদিদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। যা দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন অবাধ যৌনাচার ও সমকামিতার ভয়াবহতা কী হতে পারে। জতিসংঘের মানবাধিকার অফিস যেসব দেশে উপস্থিত রয়েছে সেখানকার মানুষ ধীরে ধীরে এর প্রভাবে নিকৃষ্ট সমকামিতা ও অবাধ যৌনাচারকে নাগরিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হজরত লুত (আ:)-এর কওমের মতো আমরা যদি ধ্বংস হতে না চাই। তাদের মতো আজাব ও গজবে যদি আপতিত না হতে চাই, তাহলে এখনই এদের রুখে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সব প্রকার ফিতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম গতকাল জুমার খুৎবায় বলেন, ইবাদত-বন্দেগি ও নেককাজের মধ্যে নিয়তের বিশুদ্ধতা ও ইখলাছ সবচেয়ে বেশি জরুরি। কুরআন ও হাদিসের বিপুল সংখ্যক বর্ণনায় যা পাওয়া যায় তার নির্যাস হলো, রিয়া (মানুষকে দেখানো) ও ছুমআ (মানুষকে শোনানো) এই দুটি ভয়ঙ্কর আত্মিক রোগ যে মুসলমানের মধ্যে থাকবে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যাবে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিদান পাবে না; বরং সে লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, তাহাজ্জুদ, জিহাদ, দান সাদকাকারী, হাফেজ ও আলেম হওয়াসহ যেকোনো ধরনের ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর নিকট মকবুল হওয়া এবং এর বিনিময় জান্নাত পাওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো ইখলাস ও সহিহ নিয়ত।
আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদতের মধ্যে কাউকে শরিক না করে।’ (সূরা কাহাফ, আয়াত-১১০) হজরত উমর (রা.) বলেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের উপর, নিশ্চয় মানুষকে তা দেয়া হবে যা সে নিয়ত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে তার হিজরত আল্লাহ এবং রাসূলের উদ্দেশ্যে গৃহীত হবে আর যে ব্যক্তি দুনিয়া পাওয়া অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে তার হিজরত তার প্রত্যাশিত বিষয়ে গৃহীত হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিটি ইবাদত-বন্দেগি শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশের জাতীয় পতাকা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। এর অবমাননা স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা ও দেশদ্রোহিতার শামিল। চট্টগ্রামে স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের পতাকা উত্তোলন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। যারা এমন কাজ করেছেন তারা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের আবশ্যকীয় দায়িত্ব। দেশের ক্ষতিসাধন জঘন্যতম অপরাধ। কেউ দেশের ক্ষতিসাধন করতে চাইলে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান। সুতরাং যারা দেশের লাল-সবুজের পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের পতাকা উত্তোলন করে তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। তারা দেশের শত্রু দেশের স্বাধীনতার শত্রু। দেশের মুসল্লি সমাজ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। কারণ এ দেশ আমাদের সবার এ দেশকে আমরা জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। দেশকে ভালোবাসা ইসলামের নির্দেশ। এ দেশ আমাদের মাতৃভূমি রাসূল সা: মাতৃভূমিকে নিজে ভালোবাসতেন এবং উম্মতদেরকেও মাতৃভূমিকে ভালোবাসার নির্দেশ দিয়েছেন। খতিব বলেন, রাসূল সা:-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে সম্মিলিতভাবে একত্রে জুমার নামাজ আদায় করি এর থেকে শিক্ষা নিয়ে এভাবেই দল-মত-নির্বিশেষে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করা ঈমানের দাবি। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করেন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা