জুলাই আন্দোলন নস্যাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী ষড়যন্ত্র : বেরিয়ে আসছে তথ্য
০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কোটা আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নিলে তা নস্যাৎ করতে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন, আওয়ামীপন্থি সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরাম। আন্দোলন বিরোধিতা ও দমনে তারা দফায় দফায় মিটিং করে নানা কূটকৌশল প্রণয়ন করে। ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে সে সকল তথ্য।
সূত্রমতে, ব্যক্তিগতভাবে টিভি টকশো, অনলাইন প্রচারণা ও শিক্ষার্থীদের হুমকির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে জঙ্গি কায়দায় মিছিল-সমাবেশ, ঢাকায় ও গোয়েন্দাদের কাছে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের শিক্ষকদের তালিকা প্রেরণসহ নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ। এছাড়া ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকির মধ্যে রাখা হয়।
৩ আগস্ট সকালে ভিসি কার্যালয়ে আন্দোলন দমন বৈঠকে বসেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। বৈঠক শেষে আরো সংগঠিত হয়ে ছাত্র আন্দোলন ও তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশকারী শিক্ষকদের মিছিলে হামলার জন্য উদ্যত হন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেন ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল, ড. মিয়া রশিদুজ্জামান, ড. মাহবুবুল আরেফীন, কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন খান, আব্দুস সালাম সেলিমসহ আরো অনেকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে চলতে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ কেন বন্ধ হলো এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে তারা চাপ দিতে থাকেন। পরে সহকারী প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন সহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্যরা বেশ কয়েকবার মাইক্রোতে করে সমাবেশের পাশ দিয়ে ঘোরা ফেরা করেন। এছাড়া, দায়িত্বরত পুলিশদের সমাবেশ পণ্ড করে দেবার জন্য নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ৪ আগস্ট সকালে বিপুলসংখ্যক আওয়ামীপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাম্পাসে এসেই ভিসির বাংলোতে মিটিংয়ে বসেন এবং ছাত্রদের আন্দোলনকে দমন করার বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে ছাত্র আন্দোলনকে নৈরাজ্য দাবি করে ভিসির বাংলোর সামনে থেকে সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। প্রাপ্ত ভিডিও মোতাবেক, মিছিলটি সাইন্স ফ্যাকাল্টির সামনে আসলে ড. মাহবুবুল আরেফিন, শহীদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে ফাইনাল খেলা’সহ বিভিন্ন উগ্র সেøাগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে মিছিলটি অনুষদ ভবনের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানেও বক্তারা উগ্র ভাষায় ছাত্রদের আন্দোলন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একটি মিছিল হলের দিকে থেকে ডায়না চত্বরের দিকে অগ্রসর হয়। সূত্র জানায়, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিলে হামলার লক্ষ্যে উদ্যত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, ইব্রাহিম হোসেন সোনা, আব্দুস সালাম সেলিমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। পরবর্তীতে ছাত্র জনতার মিছিলে ব্যপক উপস্থিতি দেখে তারা ভয়ে পালিয়ে যায়।
এছাড়াও ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে ৪ আগস্ট তালিকা তৈরি করে তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও তালিকা পাঠায়। এছাড়া, একই দিনে ঢাকায় সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন দমনে ওইসময়ের প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকায় গমন করে একটি প্রতিনিধি দল।
আওয়ামীপন্থি ও গোয়েন্দাদের পাঠানো ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের তালিকায় পাওয়া নামের মধ্যে রয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষক ড. এমতাজ হোসেন, ড. তোজাম্মেল হোসেন, ড. মতিনুর রহমান, ড. নজিবুল হক, ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, ড. শাহিনুজ্জামান, ড. কাজী মোস্তফা আরিফ, ড. মুন্সী মোর্তজা, ড. আব্দুস সবুর, মোহাম্মদ সেলিম, ড. আব্দিস শাহিদ মিয়া, ড. মনজুরুল হক, ড. আ.হ.ম নুরুল ইসলাম, ড. মো. রশিদুজ্জামান, ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং ড. শেখ এ বি এম জাকির হোসেন।
এছাড়া তালিকায় থাকা জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা হলেন, ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ড. মো. আব্দুল বারী, ড. মো. অলী উল্যাহ, ড. লুৎফর রহমান, ড. মো. নাছির উদ্দিন মিঝি, ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. আকতার হোসেন, ড. একে এম মফিজুল ইসলাম, ড. কামরুল হাসান, ড. মো. মিজানুর রহমান, ড. আসাদ-উদ-দৌলা বুলবুল ও ড. শামছুল হক সিদ্দিকী।
এছাড়া ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ডেকে এনে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি, সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান ও ড. মাহবুবুল আরেফীনসহ বঙ্গবন্ধু ও শাপলা ফোরামের নেতৃবৃন্দ। সে সময়ে আন্দোলন প্রত্যাহারকারী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ উপহার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৩৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
উষ্ণতম বছর, উষ্ণতম দশক! আশঙ্কার বর্ষবরণ বিশ্বজুড়ে
মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি. এর সাথে শিপ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল লি. এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
ভারত গেল জাতীয় ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
মাদক পাচারে জড়িত ৭২ আফগান নাগরিককে ফাঁসিতে ঝোলাল ইরান
নতুন বছরে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা বিনিময়
অস্ত্রোপচারে ভুল, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন রুশ মডেল
ফরিদপুরে ভলভো ব্যাটারির সিসা কারখানায় বিস্ফোরণে তিন শ্রমিক দগ্ধ
শনিবার থেকে মাসব্যাপী ‘চট্টগ্রাম ফুল উৎসব’ শুরু
কারাভোগ শেষে ফিরে গেছে ভারতীয় ৬৪ জেলে