অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ। আগের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে এ সরকার। এ দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন,গত ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। যে কোনো দিন অধ্যাদেশ জারি হতে পারে।
জানা গেছে, গত ১৯৯৪ সালের ২৭শ মার্চ ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে যেখানে এই ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা’ ঘোষণা করে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ গত ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এর মাস দেড়েক পরেই ৩০ জুন সংসদে গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় ফ্যাসিবাদী সরকার। দেশে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ তিন মাসের মধ্যে একুশ দফা হরতাল করেছে এবং একটানা ৩৯ দিন অসহযোগ আন্দোলন করেছে। সেই আওয়ামী লীগের সরকারের হাতেই এই ব্যবস্থার মৃত্যু ঘটেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ,২০২৪-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশটি জারি হলে আদালতে বৈধতার প্রশ্ন তুলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ থাকবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশেষ পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য গত ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। আইন ও বিচার বিভাগ প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ায় অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্র্বতী সরকার বহাল থাকবে। এর আগে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ধরা ছিল ৯০ দিন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কী হবে, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত করা অধ্যাদেশে। সেখানে এ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমের বৈধতা’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রণীত সকল অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃত কার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবে না। আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশের অধীন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সে জন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না, এ জন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না। নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে প্রেসিডেন্টকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।
কারা হবেন উপদেষ্টা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা: সংবিধান অনুযায়ী, কারও বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হলে তিনি সংসদ সংসদ হতে পারেন না। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় এক-দশমাংশ পদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মনোনীত করা যায়। অর্থাৎ তাঁদের বয়সও কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ২৫ হতে হবে। অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়, ২৫ বছরের কম বয়সী কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না। কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলেও এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না এ বিষয়ে সম্মত না হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না বলে অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন। পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সে বিষয়ে আইন রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো নির্দেশনা না এলে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেট্রোরেল লাইনের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
চলতি বছর দেশে স্বর্ণের দাম পরিবর্তন হয়েছে ৬২ বার
সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবন ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব : ইডেন গণপূর্ত বিভাগ
বড় রানে শুরু বিপিএল
ফেনীতে বিএনপি নেতা মজনুর ১০ হাজার কম্বল বিতরণ
পরিস্থিতি শান্ত হলে করিডোর খুলে দেয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তালতলীতে ওসির বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ট্রাক ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ
দৌলতপুরে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
মির্জাপুরে শীতার্তদের ঘুম থেকে জেগে তুলে ইউএনও’র কম্বল বিতরণ
গাজীপুরে কারখানার ওয়েস্টেজ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ গুলি আহত ৫
এবার ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করলো বিএফআইইউ
মিথ্যা সাজা খেটেও দেশ থেকে পালায়নি বেগম জিয়া: এবিএম মোশাররফ হোসেন
জুলাই বিপ্লবের ‘ঘোষণাপত্র’ ঘিরে আড়াই লাখ মানুষ জমায়েতের পরিকল্পনা
ফরিদপুর সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু
৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি
৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন, বাদ পড়লেন আরও ১৬৮ জন
বাগেরহাট টেলিভিশন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত
বর্ষসেরার লড়াইয়ে হেডের সঙ্গে রুট-ব্রুক ও বুমরাহ
নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গনে হত্যা মামলার আসামী ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা, এস.আই আহত
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা