দুষ্টের দমনে ত্যাগীদের কদর
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
চট্টগ্রাম বিএনপিতে দুষ্টদের দমনে দারুণ খুশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কোন অন্যায়, অপরাধে জড়ালেই দল থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে নেতাদের। এক্ষেত্রে বাঘা বাঘা নেতাদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দলের ভেতরে এমন শুদ্ধি অভিযানে সাধারণ মানুষের মাঝেও বিএনপির ভাব-মর্যাদা বাড়ছে। দুষ্টের দমনে তারেক রহমান তথা দলের হাইকমান্ডের কঠোর অ্যাকশনে কদর বাড়ছে ত্যাগী নেতাদের। বিশেষ করে আওয়ামী দুঃশাসনসহ বিগত সাড়ে ১৭ বছর যারা জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারাই এখন দলের মূলস্রোতে রয়েছেন। তাতে আশাবাদি হয়ে উঠছেন সৎ, পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতারা। দলের সাংগঠনিক শক্তিও সুদৃঢ় হচ্ছে। পক্ষান্তরে সুবিধাবাদীদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা, তারা রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। দলকে পরিশুদ্ধ করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন কঠোর অবস্থান প্রশাসনেও ইতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। তারাও অপকর্মে জড়িতদের ছাড় দিচ্ছে না।
এক এগারো পরবর্তি সময়ে সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বিএনপির ওপর রাজনৈতিক সিডর বয়ে যায়। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নীল-নকশার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষতায় এসেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর চরম জুলুম-নির্যাতন শুরু করে। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হন বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকেরা। অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। ক্রসফায়ার ও গুমের শিকার হন অনেকে। অনেকের লাশও এখনও পাওয়া যায়নি। জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে নেতাকর্মী।
বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি চাকুরিহারা হয়েছেন অনেকে। ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কিংবা ঠিকাদার। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পথে বসে যান। বছরের বছর কারাবন্দি ছিলেন শত শত নেতাকর্মী। জেলা, মহানগর থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। কারাবরণ করেছেন বছরের পর বছর। আওয়ামী দুঃশাসনে গায়েবি মামলা থেকে বাদ যাননি বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পরিবারের সদস্যরা। পিতাকে না পেয়ে সন্তানকে, স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রীকে এবং ভাইকে না পেয়ে ভাই এবং পিতাকেও তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। দেয়া হয়েছে সাজানো মামলা। মামলার ঘানি টানতে অনেকে পথে বসেছেন। নেতাদের এক একজনের নামে একশ’ থেকে দেড়শ’ মামলা। মামলায় হাজিরা দিতেই সপ্তাহে ৫দিন আদালতে ব্যয় করতে হয়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদি দুশাসনে চরম জুলুম নির্যাতন, আর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পরও দলের হাল ছাড়েননি বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলকে ভাঙা যায়নি, দলের নেতাদের নানা প্রলোভনেও কিনতে পারেনি মাফিয়া হাসিনার দোসরেরা। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, খুন, জখম আর সীমাহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। হাসিনাবিরোধী সব আন্দোলনে রাজপথে লড়াকু ভূমিকায় ছিলেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার যে দুনিয়া কাঁপানো আন্দোলন তার পুরোভাগেই ছিলেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ হন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম। ছাত্র-জনতার রক্তে ভেজা সফল বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের অবসান হয়। জনতার রুদ্ধরোষে মাফিয়া সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। চট্টগ্রামে স্বৈরাচারি সরকারের দোসরেরাও পালিয়ে যায়। অনেকে বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানলে পড়েন। তবে এক্ষেত্রে চরম ধৈর্যের পরিচয় দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভূমিকা রাখেন। বিক্ষুদ্ধ জনতার রুদ্ধরোষ থেকে সরকারি সম্পদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসা-বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় মাঠে নেমে পড়েন দলের নেতাকর্মীরা।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের নীল-নকশার অংশ হিসাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যে চক্রান্ত সেটাও রুখে দিতে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সুযোগে কিছু কিছু নেতা দখলবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েন। আর শুরু থেকেই তাদের কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশনা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে অন্যায়-অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এস আলমের গাড়িকাণ্ডে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ কয়েকজন নেতার প্রাথমিক সদস্য পদও স্থগিত করা হয়েছে।
মহানগর যুবদলের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদলসহ বিএনপির অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলের সবুজ সংকেত পেয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া অনেককে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে। দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে এমন সাঁড়াশি অভিযান বিএনপি বা কোন রাজনৈতিক দলে অতীতে কখনো হয়নি। নজিরবিহীন এই শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনে দলীয় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। যাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তাদের শাস্তির মুখোমুখি করায় দলের ভেতরে সৎ, ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের কদর বেড়েছে। তারা এখন দলের চালকের আসনে।
ফলে দল হিসাবে বিএনপি এখন অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় শক্তিশালী এবং সুসংহত। এক সময় দলের নেতাদের মধ্যে কলহ-বিরোধ থাকলেও এখন তা দৃশ্যমান নেই। হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাব নেতাদের এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। বিএনপির সভা-সমাবেশসহ যে কোন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণও বাড়ছে। নেতাদের সংযমী আচরণ কর্মী সমর্থকদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাতে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে একটি দায়িত্বশীল দলের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের ব্যাপক সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপি কখনো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ছিল না। তবে চিত্র এখন পাল্টে গেছে। বিগত দেড় দশকে আওয়ামী দুঃশাসন মোকাবেলা করতে গিয়ে দলের নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকেরা জ্বলে-পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। তারা দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন দেশে অন্য যেকোন রাজনৈতিক দলের তুলনায় বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি অনেক সুদৃঢ়। আর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নতুন এক বাংলাদেশে বিএনপিতে যে শুদ্ধি প্রক্রিয়া চলছে তা দলকে আরো বেশি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। ফলে ফ্যাসিবাদের বিদায়ের পর যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তার সফল বাস্তবায়নে বিএনপিতে প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফেসবুকে যা লিখলেন আলোচিত অভিনেতা জয়
শিল্পী সমিতি থেকে ফ্যাসিস্ট নিপুণের স্থায়ী বহিষ্কার
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ, সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল
টিকা না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন প্রবাসীরা
তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানসিক অপ্রকৃতস্থ যুবকের মৃত্যু
সরকারী চাকুরীর প্রলোভনে টাকা আত্মসাৎ, ভুক্তভোগীকে মামলায় হেনস্থার অভিযোগ
ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে এক ট্রিলিয়ন ডলার
পর্তুগালে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "গ্রিনফিল্ড একাডেমী"র যাত্রা শুরু
আগে সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন : জাতীয় নাগরিক কমিটি
দীর্ঘ ৫৮বছরপর উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কাপ্তাই বাইতুল ইলাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়ন শুরু
অভিষেকের দিনেই বিতর্কে ট্রাম্প, বাইবেলে হাত না রেখেই শপথ
এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি
ইসরায়েলপন্থি মার্কো রুবিওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ
আমাদের এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে : জো বাইডেন
যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২
সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন
মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা
কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও
জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল