যে সংবিধান ফ্যাসিস্টের জন্ম দিয়েছে বিপ্লবের পর সেটি গুরুত্ব হারিয়েছে
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা, এর উচ্চ কক্ষের নাম জাতীয় পরিষদ, নিম্ন কক্ষ সংসদ। সংসদ নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে তিনশত আসনে। জাতীয় পরিষদের ২শ’ আসন হবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে। আইন সভার মেয়াদ হবে চার বছর। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী দু’বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না। এমন কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখা হয়েছে সংবিধানের খসড়া প্রস্তাবনায়। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন এবং বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের বিষয়েও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্যে এ প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে আইন,সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ল রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরএফ’।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জহুর হোসেন চৌধুরী’ লাউঞ্জে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সংবিধানের খসড়া উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারপতি এম. এ মতিন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম, মোহাম্মদ শিশির মনি, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমসহ বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অ্যাটর্নি জেনারেল এম.আসাদুজ্জামান বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানে একটি জায়গা নিশ্চিত করেন, পাঁচ বছর পর পর জনগণ তার স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষমতা যাতে প্রয়োগ করতে পারে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার তা করলেই আমার মনে হয় এই সংবিধান সার্বভৌম হবে। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলে সংবিধানে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার, মৌলিক মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ আরও যা যা প্রত্যাশার জায়গা আছে সব নিশ্চিত হবে। সেখানে যদি গরমিল থাকে তাহলে যতভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজান না কেন, কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ করবে না। যেমন কাজ করেনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়েছে আমরা দেখেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। ভোটার মাধ্যমে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এম.আসাদুজ্জামান বলেন,বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবছি সেটা তাদের (শহীদদের) প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা জানানো। আমাদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করতে হবে। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের দিকে যদি তাকাই তাহলে এই প্রস্তাবনাগুলো এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ আছে কি না সেটা ভেবে দেখা দরকার। কেননা এই অনুচ্ছেদে আপনি সবকিছুই করতে পারবেন শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া। এখন সংসদ নেই, গণভোট নেই- এসব প্রশ্ন এখানে যৌক্তিক ও আইনগতভাবে আসবে।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম. এ মতিন বলেন, যে সংবিধান ফ্যাসিস্টদের জন্ম দিয়েছে, বিপ্লবের পর সেই সংবিধান গুরুত্ব হারিয়েছে। কারণ, বিপ্লবতো সংবিধানের আওতায় হয়নি। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হতো। যারা জীবন দিল, তাদের যে চিন্তা ভাবনা, তাদের যে চাওয়া-পাওয়া এগুলোকে ধারণ করে সংলাপের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করা এবং একটি নির্বাচন করাই হোক লক্ষ্য।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান শুধু আইজ্ঞদের বিষয় নয়, এটি জনণের বিষয়। এখানে নাগরিকদের মতামতও থাকতে হবে। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কলুষিত করা হয়। তিনি শাসন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দেন।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এখন সংবিধানের কিছু জায়গায় নতুন চিন্তা ভাবনা হতেই পারে। তাই মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কি কি ধরনের প্রতিকার আমরা পেতে পারি, ভবিষ্যতে কি করতে পারি, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ৫৩ বছরে আমরা একটা ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। গত ১৫ বছরে আইন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৌলিক অধিকার চর্চার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করলে কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না।
গণমাধ্যম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, রাজনীতিবিদেরা নাগরিকদের প্রজা মনে করেন। আমরা আসলেই প্রজা হয়ে গেছি। সংবিধান বারবার ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিকের ক্ষমতা নেই। সংসদ সদস্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত জবাবদিহিতার আওতায় না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে প্রজা হয়েই থাকতে হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না: কাদের সিদ্দিকী
বন্যায় ভেসে আসা লক্ষাধিক গাড়ি নিয়ে চরম বিপাকে স্পেন
এক সপ্তাহে বৈরুতে ৫০ বার হামলা ইসরাইলের,বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা, নিহত ৭
ময়মনসিংহে ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
শেরপুরে জেল পলাতক আসামি লিটন গ্রেপ্তার
গলফ ক্লাবে সম্মিলিত পরিষদের মেজবানি অনুষ্ঠিত
ট্রাম্প প্রশাসনে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে ক্রিস রাইট নিযুক্ত
"মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট দিলেন ডিডি'র জমজ কন্যারা"
বাবাকে বানালেন মুক্তিযোদ্ধা, ভাতিজা হলো ছেলে! ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোটা কেরামতি
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নেমেছে ১৫.৮ ডিগ্রিতে
পাঁচবিবিতে কোয়েল পাখি পালনে হাসানের মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা
গুম থেকে ফেরা শিবিরের ৩ নেতার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল হচ্ছে আজ
শেরপুরে সাংবাদিক বকুলের ইন্তেকাল
ভেনেজুয়েলায় বিতর্কিত নির্বাচনের পর ১০৭ বন্দীর মুক্তি
অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেলো আরও ৫২ ফিলিস্তিনির
শি জিনপিং-বাইডেন শেষ বৈঠকে চীন ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান ১৭ বছর পর দেশে ফিরেন
"পাম স্প্রিংস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ সন্মাননা পেতে যাচ্ছেন নিকোল কিডম্যান"
নাফ নদ থেকে অপহৃত ৫ জেলের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার