ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেশের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছে
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৩ এএম
জুলাইয়ের ঐক্যবদ্ধ শক্তি ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমরা মাত্র ১০০ দিন আগে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিলাম। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতার। গতকাল শনিবার রাজধানী সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজে (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ৮০০ প্রতিনিধির অংশগ্রহণ করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের যেকোনও ক্রান্তিলগ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব অন্যায়, অবিচার মোকাবিলা করা যায়। শুধু তাই নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে বদলে দেওয়া যায় ইতিহাসের গতিপথ। যেটা আমরা জুলাই-আগস্টে দেখিয়েছি। আগামী দিনেও সবাইকে দেশ-জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোনও অন্যায়, দোষ না করেও এ দেশের মানুষ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। অনেক বড় শক্তির মুখোমুখি হওয়াতে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা এটাও জানি, যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, যখন আমরা এক হয়ে কাজ করি, তখন আমাদের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছর ধরে চলা একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটিয়েছে ছাত্ররা। আমি এই সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অতিথিদের কাছে একটি সদ্য উদীয়মান দেশে স্বাগত জানাই। নিজেকে নতুন বাংলাদেশ বলে অভিহিত করছি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা সারা জীবনের জন্য তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চোখ এবং অনেক শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিদেশীদের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড দেখার জন্য রাজধানী ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ঠিক একশ’ দিন আগে এই শহরে যা ঘটে গেছে, তা আপনার নিজ চোখে দেখে যান। জুলাই বিপ্লবের সময় তরুণদের আবেগ এবং আকাঙ্খাকে প্রকাশ করে রঙিন চিত্রে আঁকা রাস্তার দেয়ালগুলো দেখুন। দেখতে পারবেন কীভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্ম কী চায়, তাদের অভিব্যক্তি দেখে যে কেউ অবাক না হয়ে পারবেন না। এই ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য অনুরোধ করছি।
এই বিপ্লবের কোনও ডিজাইনার ছিল না, কোনও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না এবং কোনও সংস্থা এটিকে অর্থায়ন করেনি। তরুণরা তাদের নিজের শক্তিতে করেছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার বা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি এসব বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবো।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছর, উপকূলীয় জেলার মানুষগুলো নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের প্রয়োজন। তরুণদের দেশ আমাদের।
ড. ইউনূস বলেন, ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক জনসংখ্যার বয়স ২৭ বছরের কম। কত বড় শক্তি। তাদের এই সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অনেক শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আমাদের তরুণদের শক্তি আছে বিশ্বকে টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করার। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতা, সাহস এবং নিজেদের মধ্যে শেয়ার করার মানসিকতা ও অটুট বিশ্বাস।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে কীভাবে একটি নতুন বিশ্ব গড়তে সেই বিষয়ে বিতর্ক এবং চিন্তাভাবনা শেয়ার করার জন্য সবাইকে আমি অনুরোধ জানাই। আমাদের তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে নিয়ে গেছে। আসুন একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ গ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারাসহ একটি নতুন বিশ্ব কল্পনা করার সাহস করি। এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলুন যেখানে প্রযুক্তির ফল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব মানুষ সমানভাবে ভাগ করে নেয়, বিশেষ সুবিধাভোগী কয়েকজনের একচেটিয়া যাতে না হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ ও জটিলতার দ্বারা পরিবেস্টিত সময়ে বাস করি। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার বা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি যাই হোক না কেন, আমরা এমন সমস্যার মুখোমুখি হই যা অপ্রতিরোধ্য। তবুও বাংলাদেশে আমরা স্থিতিস্থাপকতা, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া এবং এটি থেকে সুযোগ তৈরি সম্পর্কে কিছু জানি। কয়েক দশক আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাজ করে, তাদের সাহস দেখে এবং তাদের শক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এটি শিখেছি। সেই অভিজ্ঞতাগুলিই আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সমস্যার একটি সমাধান থাকে। তিনি বলেন, আমাদের যুবসমাজ আমাদের নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথে নিয়ে গেছে। আসুন আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারাসহ একটি নতুন বিশ্বের কল্পনা করার সাহস করি। এবং এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলুন যেখানে প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফল সকল মানুষ সমানভাবে ভাগ করে নেবে, সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েকজনের একচেটিয়া আধিপত্য থাকবে না।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সিজিএসের চেয়ারপারসন মনিরা খান। এ ছাড়া ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্গে কিরোগা, বাংলাদেশ নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনা তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৭৭টি সেশনে গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার আট শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সুবর্ণ সুযোগ শুরুর ঘোষণা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি
অস্ত্র মামলায় মামুন খালাস
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
ইনু-মেনন-সালমান-আনিসদের রিমান্ড, নতুন করে গ্রেপ্তার মন্ত্রী-এমপিসহ ১৬ জন
দলীয় নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান এবি পার্টির
হত্যা মামলায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ৫ দিনের রিমান্ডে
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
আমদানি মূল্য পরিশোধের সময় বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বকেয়া পরিশোধে জুন পর্যন্ত সময় বাড়লো আদানি
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে : রিজভী
বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানার ছাটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত ২৭ জানুয়ারি
যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগেও ইসরায়েলের হামলা গাজায় বিলম্বিত সময়ের মধ্যে নিহত ১৯
আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক