চিকিৎসা নেই খুলনার ডুমুরিয়া হাসপাতালে
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা ঘোষণার প্রায় ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পরিপূর্ণতা পায়নি। ২২টি মেডিকেল অফিসারের পদে রয়েছেন ১৬ জন। ১৪টি ইউনিয়নের ১৪টি সহকারি সার্জনের মধ্যে ৯জনের পদায়ন থাকলেও কেউই যাননা সেসব চিকিৎসা কেন্দ্রে। বিগত সরকার আমলে বিশেষ তদবিরে এখানে পোস্টিং নিয়ে এখনও বহাল তবিয়তে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডুমুরিয়ার মানুষ।
কেমন চলছে হাসপাতাল : খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এটি। উপজেলা সদরে ৪ তলাবিশিষ্ট আধুনিক এ হাসপাতলে জনদুর্ভোগের কমতি নেই। ছোটখাটো অপরেশনেও পাড়ি জমাতে হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাঝে মধ্যে বিশেষ তদবিরে ২/১টি সিজার হয়ে থাকলেও বেশিরভাগ রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি ক্লিনিকে। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বর্হিবিভাগে রোগীদের ভীড়। বর্হিবিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অধিকাংশ কক্ষের চেয়ার শূন্য পড়ে আছে। জরুরী বিভাগে গিযে দেখা যায়, অনেক ভীড়। দায়িত্বরত চিকিৎসকদের পাশাপাশি, হাসপাতালের পাশ^বর্তী ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের কর্মচারী, মেডিকেল রিপ্রেন্টেটিভ, ওষুধের দোকানদারদেরও ভীড়। একটি ব্যবস্থাপত্র দিলেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে চিকিৎসকরা কমিশন ও উপহার পাওয়ার জন্য ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সন্তুষ্ট করতে ওষূধ লিখছেন। হাসপাতালে প্যাথলজি থাকলেও বেশির ভাগ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, ফাতেমা ক্লিনিক, ডুমুরিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রেগুলোতে। সামান্য জটিল রোগী আসলে তাকে সাথে সাথে পাঠিযে দেয়া হয় শহরের হাসপাতালে। এটা দিনের বেলার চিত্র। রাতের বেলায় কোন রোগী গেলে সাথে সাথেই তাকে খুলনায় পাঠিযে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এমনটি রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন এমন বলে স্বজনদের দুর্বল করে রোগী নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। রাতের সিপ্টে দায়িত্বরত চিকিৎসক, ওর্য়াডবয়, নার্সরা থাকেন নিজ নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে। ভর্তিকৃত রোগীর স্বজনরা তাদেরকে ডাকলে শুনতে হয় গালিগালাজ। কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে।
চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন যারা : উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাডা. কাজল মল্লিক। যিনি ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট বিশেষ তদবিরে নিজের গ্রামের পাশ^বর্তি উপজেরায় পোস্টিং নেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অবস) ডা. নায়ার ইসলাম ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে যোগদান করেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. কামরুন নাহার ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর এই হাসপাতালে যোগদান করেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. মোঃ আসাদুজ্জামান ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে যোগদান করেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. গোপাল চন্দ্র রায় ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই হাসপাতালে যোগদান করেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) ডা. শেখ আরাফাত মাহমুদ ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে যোগদান করেন। ডেন্টাল সার্জন হিসেবে চলতি বছর ২৪ মে যোগদান করেনডা. বাধোন কুমার ঘোষ। সহকারি সার্জন হিসেবেডা. সুদীপ দেবনাথ ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই,ডা. হুমাইয়ারা পারভীন চলতি বছরের ২ মে,ডা. মোঃ মুরাদ হোসেন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যোদান করেন। শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেনডা. মোঃ মেহেবুব হাসান সাব্বির ওডা. ফাতিমা তুজ জোহরা। আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চলতি বছরের ৪ জুন থেকে দায়িত্বে আছেনডা. মো. আব্দুর রব। তবে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত। এছাড়া মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডুমুরিয়া হাসপাতালে পদায়ন থাকলেও ডা. দেলেনা খাতুন ও ডা. লিমা ইয়াসমিন কেয়া খুলনা বক্ষব্যধি হাসপাতালে সংযুক্ত আছেন।
ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে দায়িত্ব যারা : গ্রামাঞ্চলের মানুষের সহজে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিযন পর্যায়ে সহকারি সার্জন হিসেবে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে পদায়ন থাকলেও কেউই যান না ওই সব কেন্দ্রে। দাযিত্বে থাকা চিকিৎসকরা হচ্ছেন, রুদাঘরা ইউনিয়নেডা. ঈশা খাতুন। তিনি এ পদে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর যোগদান করেন। সাহস ইউনিয়নেডা. সৈযদা ইরিনা আলম অন্যা। তিনি এ পদে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর যোগদান করেন। শরাফপুর ইউনিয়নে দায়িত্বে আছেনডা. মোঃ সোহেল পারভেজ। তিনি এ পদে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর যোগদান করেন। ডুমুরিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বে রয়েছেনডা. রিফাত রহমান। তিনি এ পদে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ যোগদান করেন। এই রিফাত রহমান তৎকালিন সরকার আমলে চিকিৎসকের চেয়ে ছাত্র লীগের দাপট দেখাতেন বেশি। তার হাতে সাংবাদিকসহ অনেকেই লঞ্ছিতের শিকার হয়েছেন। ধামালিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বে আছেন আইভি রহমান। তিনি ২০২৩ সালের ১১ মার্চ এ পদে যোগদান করেন ।ডা. রিফাত ওডা. আইভি স্বামী স্ত্রী। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছনাকারি আরেক চিকিৎসকডা. নাঈমের পদায়ন ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু তিনি বর্তমানে সিভিল সার্জন অফিসে সংযুক্ত। ২০২০ সালের ১২ মে মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারি সার্জন হিসেবে যোগদান করেনডা. মৌমিতা দত্ত। গুটুদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলতি বছর ২ মে বদলি হয়ে আসেনডা. মজিদা বেগম। চলতি বছর মাগুরখালি ইউনিযন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারি সার্জন হিসেবে বদলি হয়ে আসেনডা. মানসী সাহা তুলি। মাগুরখালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়ন থাকলেও তিনি বর্তমানে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত।
মঞ্জুরীকৃত পদের চেয়ে নার্স বেশি : ডুমুরিয়া হাসপাতালে একেকজন নার্স ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত দায়িত্বে রয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাবে তারা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নিজ এলাকায় পোস্টিং নিযে এসেছেন। স্থানীয়, আবার কেউ কেউ একই পরিবারভুক্ত হওয়ায় রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সেবা বঞ্চিত রোগী বা রোগীর স্বজনরা কিছু বললেই তাদেরকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়। নার্সিং সুপার হিসেবে দায়িত্বে আছেন কৃষ্ণা রাণী বিশ^াস। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২০টি পদের বিপরীতে ২০জনই রয়েছেন। তারা হলেন, অর্চনা রানী সরকার, আবেদা পারভীন, শরিফা খাতুন, নাসিমা বেগম, লিপিকা রানী, মেহেরুন নেছা, তহমিনা খাতুন, স্বস্থিকা বসাক, হাসিনা খাতুন, নাজমা আক্তার, পলি খাতুন, সুরভী সরদার, রানুয়ারা খাতুন, আকলিমা খাতুন, চম্পা বিশ^াস, সনজনি বিশ^াস, অসীমা মন্ডল, অনীতা মন্ডল নবনীতা মন্ডল, নন্দিনী বিশ^াস, বন্দনা ঘোষ, দিপ্তী মন্ডল, সাদিয়া আফরিন ও বিভা সরকার। মিডওয়াইফারি পদ সংখ্যা ৪টি দায়িত্বে আছেন, আসমা খাতুন ( বর্তমানে প্রেষণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রোহিনী মন্ডল, সুদেবী সরকার ও ফিরোজা খাতুন (অন্যত্র প্রেষনে)। সহকারি নার্সের একটি পদে রয়েছেন প্রতাপ সরকার। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে অতিরিক্ত রয়েছেন রুমিচা বেগম নামে একজন।
হাসপাতালের অব্যস্থাপনা সম্পর্কে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাডা. কাজল মল্লিক বলেন, ডুমুরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা আগের চেয়ে অনেক ভাল। যথাসময়ে চিকিৎসকরা রোগী না দেখা সম্পর্কে বলেন, অনেক সময় জরুরী কাজে কক্ষের বাইরে থাকতে পারেন। রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় রোগীরা চিকিৎসকদের উপর অতিরিক্ত খবরদারি করেন।
২০১১ সালের ২ আগস্ট ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা হাসপাতালে নামকরণের মধ্যে দিয়ে এর উদ্বোধন করেন তৎকালিন এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ
টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!
৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা
তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছে হাসিনার মত স্বৈরাচার সরকার আর যাতে আসতে না পারে - ব্যারিস্টার মীর হেলাল
ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?
মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক
পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি
শেরপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতার্তদের মাঝে যুবদলের কম্বল বিতরণ
গুরুদাসপুরে চিরকুট লিখে চুরি হচ্ছে বাণিজ্যিক মিটার
রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: মির্জা ফখরুল
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা শাহজালাল বিমানবন্দরের
দলে মেধাবীদের দেখতে চান তারেক রহমান
গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
শরণখোলায় হোলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
ইসরাইল ছাড়া অন্য কোন দেশের জাহাজে হামলা করবে না হুথিরা
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভ কামনা জানালেন ড. ইউনূস